* কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে আলোচনা হবে তাই ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না : জনপ্রশাসন সচিব
মিরর বাংলাদেশ : উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমাতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোববার সচিবালয়ে নজিরবিহীন শোডাউন দিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এরপর বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের কাছে লিখিত দাবি-দাওয়া পেশ করেন তাঁরা।
দুপুর পৌনে ১টায় নিজ দপ্তরে এসেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। এ দিকে সচিবের দপ্তরে অবস্থান নেওয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজের মিনি কনফারেন্স রুমে বৈঠকে করেন তিনি।
পরে জনপ্রশাসন সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে অনেকের মতামত আছে, তাঁরা মতামত দিচ্ছেন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন লিখিতভাবে তাদের প্রস্তাবনা দিয়েছেন। আমরা এটা কমিশনে জমা দেব।’
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এই আলোচনা হবে। আশা করছি এই আলোচনার পরে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে আর ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ থাকবে না।’
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এর আগে একবার বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। রোববার সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ের তিন নম্বর ভবনের সামনে জড়ো হন। ঢাকার মধ্যে যেসব কর্মকর্তাদের অফিস তাদের অনেকেও সচিবালয়ে আসেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে কয়েক শ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ১৫-২০ জন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তারা। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার দেশের সব অফিসে এক ঘণ্টা কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসনে উপসচিব পদে মেধার ভিত্তিতে শতভাগ পদোন্নতি এবং কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমানো হলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
প্রশাসন ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং এই কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান রেগুলার সার্ভিসে থাকলে এ ধরনের সুপারিশ করতে যাওয়ার চিন্তাও করতেন না। তারা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিষয়গুলো আর ভাবছেন না। যার ফলে এমন সুপারিশ করতে যাচ্ছেন তারা।
তারা বলেন, উপসচিব থেকে শুরু করে সরকারের পদগুলোতে কীভাবে কর্মকর্তাদের পদায়ন হবে, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। ওই রায়ের কপি জনপ্রশাসন সচিবকে দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার দেশের সব অফিসে এক ঘণ্টা কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এছাড়া আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে উপসচিব পদে মেধার ভিত্তিতে শতভাগ পদোন্নতি এবং কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমানো হলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
কমিশনের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, জনপ্রশাসনে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি; উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দ করা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখা।
কমিশনের সুপারিশের বিষয়গুলো সামনে আসার পরই এ ব্যাপারে প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। একইদিন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখা সভাও করেছে। পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসকেরা এই সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জেলা প্রশাসকেরা সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে কার্যবিবরণী পাঠিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন।
প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সব পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন চায়। অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রাখার সুপারিশের বিপক্ষে। মানে তারা ক্যাডারেই থাকতে চান।
এরই মধ্যে ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি সভা করে। সভায় পরিষদের সাথে পরিষদভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের পৃথক সংগঠনের নেতাদের মতবিনিময় হয়। সভা থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালনা ও কোটামুক্ত উপসচিব পুলের দাবিতে কলমবিরতিসহ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সোমবার প্রতিটি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে বিবৃতি দেবে। পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টা সব অফিসে কলমবিরতি। ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন। আর যেসব বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি, দ্রুত সেখানে সমাবেশ আয়োজন ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। এ ছাড়া আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ আয়োজন করা হবে। সেখানেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।