* সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ইঙ্গিত
মিরর বাংলাদেশ : করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। যদি না এই করোনাভাইরাস অব্যাহত থাকে। যখন এটা থামবে, আমরা তখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলব।
সোমবার সকালে গণভবন থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলার কার্যক্রম সমন্বয় করার ধারাবাহিকতায় রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটাও খুলব না। সেটা আমরা কখন খুলব অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্কুল কলেজ সবই বন্ধ থাকবে। যদি না এই করোনাভাইরাস …অব্যাহত থাকে। যখন এটি থামবে, আমরা তখনই এটা খুলব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই সবাইকে সাহায্য করেন আর সবাই সুরক্ষিত থাকেন, যেহেতু এখন কিছু কিছু আামদের যেমন ফসল উঠছে। এরপর ফসল লাগাতে হবে বা কিছু কিছু জীবনযাপন আমাদেরকে উন্মুক্ত করতে হবে। সে কারণে সবাই নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই কাজ করবেন। সেটিই আমরা অনুরোধ করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, যারা এরই মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে গিয়ে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এ কয়েকমাস সবকিছু বন্ধ দেখে ঋণের সুদ বেড়ে গেছে, সেটার জন্য আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসবো, কাজেই সুদগুলো যেন স্থগিত থাকে এবং পরবর্তীতে কতটুকু মাফ করা যায়, কতটুকু আপনারা নিয়মিত দিতে পারেন, সেটি বিবেচনা করা হবে, দুঃচিন্তায় ভুগবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের কাজ নেই। বিশেষ করে আমাদের যারা একেবারে যারা হতদরিদ্র তাদেরকেও আমরা যেমন সাহায্য দিচ্ছি। কিন্তু নিম্নবিত্ত এমনকি ছোটখাট কাজ করে যারা খায় তাদের জন্য যথেষ্ট কষ্ট আমরা জানি। আর সেই কারণে একেবারে ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে শুরু করে অর্থ্যাৎ যেমন মৎস্য চাষি থেকে শুরু করে পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম যারা করেন বা কৃষি কাজ করেন বা বিভিন্ন ধরনের ছোটখাট ক্ষুদ্র ব্যবসা যারা করেন, প্রত্যেকের কথা চিন্তা-ভাবনা করে এবং অন্যান্য দিকে খেয়াল রেখে আমরা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি প্রণোদনা দিয়েছি এবং সেটা ভাগে ভাগে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কাজেই যাদের এই যে ছোটখাট ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা কিন্তু এখান থেকে মাত্র ২ শতাংশ সুদে আমরা টাকাটা দিয়ে দিচ্ছি। সেই ব্যবসাগুলো যাতে চালু রাখতে পারেন তা আমরা দেখব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর একটা বিষয় বলব, যারা এরইমধ্যে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে এই কয়েক মাস সবকিছু বন্ধ দেখে আপনাদের তো ঋণের সুদ বেড়ে গেছে, সেটার জন্য আপনারা চিন্তা করবেন না, কারণ এই সুদ এখনি নেওয়ার কথা না। আর আপনাদের সঙ্গে মিটিংয়ের পরেই আমি আবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসব, কাজেই সুদগুলো যেন স্থগিত থাকে এবং পরবর্তীতে কতটুকু মাফ করা যায়, কতটুকু আপনারা নিয়মিত দিতে পারেন, সেটি বিবেচনা করা হবে। কাজেই সেটা করে দেব, দুশ্চিন্তায় ভুগবেন না।’
‘অন্তত এইটুকু আমি বলব, এখানে আমাদের সবচেয়ে বড় কথা, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা আর আমাদের জীবন-জীবিকার পথটা উন্মুক্ত রাখা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু যেসব জায়গায় এখনও এই রকম করোনাভাইরাস দেখা দেয়নি, ধীরে ধীরে আমরা সেই জায়গাগুলো আস্তে আস্তে শিথিল করে দিচ্ছি। যেন মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে বা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।’
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে অসহায় মানুষের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করে নিজের জমানো দশ হাজার সহযোগিতার জন্য বাড়িয়ে দিয়ে ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এত বড় মানবিক গুণ আমাদের অনেক বিত্তশালীর মাঝেও দেখা যায় না। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে কিন্তু এখনো এই মানবিক বোধটা আছে। কিন্তু সেটা আমরা পাই কাদের কাছে? যারা নিঃস্ব তাদের কাছে। অনেক সময় দেখি, অনেক বিত্তশালীরা হা হুতাশ করেই বেড়ায়। তাদের ঘরে নাই নাই অভ্যাসটা যায় না। তাদের চাই চাই ভাবটাই সবসময় থেকে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ‘কটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে আপনারা দেখেছেন যে, একজন ফকির ভিক্ষা করে খায়। একটা সাধারণ মানুষ। একসময় কৃষি কাজ করত। অ্যাক্সিডেন্ট করে তার পা-টা ভেঙে যায়। তারপর আর কাজ করতে পারেনি। ভিক্ষা করে। এভাবে ভিক্ষা করে করে মাত্র দশ হাজার টাকা সে জমা করেছিল। তার থাকার ঘরটা ঠিক করবে। তার একটা মাত্র পাঞ্জাবি, ছেঁড়া কাপড় গায়ে। তার খাবারও ঘরে ঠিকমতো নেই।’
‘কিন্তু তারপরও সে মানুষটা সেই জমানো দশটি হাজার টাকা সে তুলে দিয়েছে করোনাভাইরাসে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সাহায্যের জন্য। আমি মনে করি, সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত তিনি সৃষ্টি করেছেন।এতো বড় মানবিক গুণ আমাদের অনেক বিত্তশালীর মাঝেও দেখা যায় না। কাজেই একজন নিঃস্ব মানুষ। যার কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে-ওই টাকা দিয়ে আরও দুইটা জামা কিনতে পারত, ঘরে আবার খাবার কিনতে পারত বা এই করোনাভাইরাসের কারণে তার যে অসুবিধা তার জন্য চিন্তা করতে পারত। কোনো চিন্তা সে করেনি। আর এ অবস্থায় তো ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা পাওয়াও তার মুশকিল। সেটাও সে করে নাই। তারপরও সে চিন্তা করে নাই। কিন্তু তার সেই শেষ সম্বলটুকু সে দান করে গেছে। এটি একটা মহৎ উদারতা দেখালেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মাঝে কিন্তু এখনো এই মানবিক বোধটা আছে। কিন্তু সেটা আমরা পাই কাদের কাছে? যারা নিঃস্ব তাদের কাছে। অনেক সময় দেখি, অনেক বিত্তশালীরা হা হুতাশ করেই বেড়ায়। কিন্তু তাদের ঘরে নাই নাই, অভ্যাসটা যায় না। তাদের ওই চাই চাই ভাবটাই সবসময় থেকে যায়। আমি মনে করি, এই যিনি এটা করলেন শেরপুর উপজেলায় ঝিনাইগাতি একটা গ্রাম সেখানকার তার নাম হচ্ছে নাজিম উদ্দিন। নাজিম উদ্দিন এই যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, এটা অনেক অনেক কিছু তার কাছ থেকে আমাদের শেখার আছে।’
‘যা হোক, আমরা মানুষের জন্য মানুষ। আমি জানি, আমাদের দেশের অনেকের মধ্যে এই প্রবণতা আছে যে, নিজে শুধু একা খায় না, প্রতিবেশীরা না থাকলেও তার সেই উদারতা আছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সেই চিন্তা করতে হবে যে, আমাদের ফসল ফলাতে হবে। আরও উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ এই কৃষিটাই এখন আমাদের সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিজেরা যেমন খেতে পারব, আমরা অন্য কোন দেশে যদি কোনো অভুক্ত মানুষ থাকে তাদেরকেও আমরা সাহায্য করতে পারব। সেই মানসিকতা নিয়ে আপনারা কাজ করবেন। সেটিই আমরা চাই।