মিরর প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ :
আড়াই মাস আগে ১৬ মাস বয়সের শিশুকে রেখে স্ত্রীকে মারধর করে বের করে দিয়েছিল নেশাগ্রস্থ স্বামী। একদিকে মায়ের দুধের জন্য শিশুর কান্না অন্যদিকে বাচ্চাকে বুকে ফিরে পেতে মা কাঁদছিল দুয়ারে দুয়ারে।
ছবি : সালমা ওসমান লিপি
শিশু বাচ্চার জন্য অসহায় মায়ের সেই আর্তনাদ পৌছায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান পত্নী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপির কাছে। মাত্র ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামে আজ সোমবার ওই শিশুকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন সাংসদ পত্নী । এছাড়া দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা মাসদাইর এলাকার ।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের মেয়ে হাবিবার সঙ্গে মাসদাইর গুদারাঘাট এলাকার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে রনির সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ বছরের মধ্যে নানা অজুহাতে নেশাগ্রস্থ স্বামী রনি হাবিবার উপর একাধিকবার শারিরীক নির্যাতন চালায় । স্বামীর সংসারে সুখে দিন কাটানো আশা বুকে বেধে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় স্বামীর এ আচরণকে পরিবর্তন করতে। হাবিবার যতই স্বামীর অনুগত হবার চেষ্টা করে ততই তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় রনি।
শিশুর মা হাবিবা বলেন, অজ্ঞাত কারণে তার উপর নির্যাতন চালায় রনি। তার বাপের বাড়ি সোনারগাঁ ও পারিবারিকভাবে অপেক্ষাকৃত একটু দূর্বল হওয়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠে রনি। এরি মধ্যে তাদের কোল জুড়ে আসে একটি সন্তান। তার বয়স মাত্র দেড় বছর। বিগত প্রায় আড়াই মাস আগে কোলের বাচ্চাটিকে রেখে রনি পিটিয়ে হাবিবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। কোন উপায় না পেয়ে সে স্ত্রী হাবিবা শিশু বাচ্চার জন্য কাঁদতে থাকে আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংখীদের দ্বারে দ্বারে। পরে সে আমি জানতে পারি এ বিষয়ে এমপি পত্নী সালমা ওসমান লিপি আমাকে সহায়তা করতে পারবেন। অবশেষে গত সপ্তাহে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন সালমা ওসমান লিপির। কোলের সন্তানের জন্য মায়ের মা হাবিবার বুকফাটা ক্রন্দন দেখে তাৎক্ষনিকভাবে শিশুটিকে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেন তিনি। প্রথমেই তিনি শিশুটিকে স্বামীর কবল থেকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। শিশুটিকে পেয়ে বিতাড়িত গৃহবধু হাবিবা মায়ে মমতায় আকড়ে ধরেন নিজ শিশুটিকে। প্রায় আড়াই মাসের অবহেলা অযত্নে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে সালমা ওসমান লিপি শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন।
অন্যদিকে দ্বিতীয় দফায় লিপি ওসমান স্বামী রনি ও তার পরিবারের লোকজনদেরকে ডেকে নিয়ে আসেন এবং আজ সেমাবার সময় নির্ধারণ করে দেন হাবিবাকে সম্মান দিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে পারিবারিক বৈঠক করতে। বিষয়টি মনিটরিং এর জন্য দায়িত্ব দেন পূর্ব ইসদাইর যুব সংঘের কাছে।
এ বিষয়ে পূর্ব ইসদার যুব সংঘের কর্মী জিবু ইসলাম জানান, দু পরিবারের মধ্যে সমঝোতা করে দিয়ে স্ত্রী হাবীবাকে রনির সংসারে তুলে দেয়া হয়েছে এবং সর্তক করে দেয়া হয়েছে ভবিষৎতে হাবিবা তার মেয়ের কোন নির্যাতন হলে রেহাই নাই।
এ বিষয়ে সালমা ওসমান লিপি মুঠোফোনে বলেন, “মোবাইলে শিশু বাচ্চার জন্য ওই মায়ের কান্নায়া আমি নিজে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। বাচ্চাটি কোলের শিশু। হয়ত দুধের শিশুও হতে পারে। বাচ্চার জন্য মায়ের খুবই প্রয়োজন। সেখানে আড়াই মাস যাবত মা তার শিশু বাচ্চা থেকে বিচ্ছিন্ন। এটা মেনে নেয়া যায় না। আমি ২৪ ঘন্টার সময় দিয়েছিলাম দুধের শিশুকে মায়ের কোলে তুলে দিতে এবং ৭ দিনের মধ্যে দু পরিবারের মধ্যে সমঝোতা করতে।
তিনি আরো বলেন, “আমি শুনেছি দু পরিবার মধ্যে সোমবার সমঝোতা হয়েছে। মায়ের কোলে ফিরেছে বাচ্চা। হাবিবাকে তার শিশু সন্তানসহ স্বামীর বাড়ির লোকজন সসম্মানে তুলে নিয়েছে।