মিরর বাংলাদেশ: কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার বলেছেন, সবকিছুর জীবনের প্রতি ছোটবেলা থেকেই সিনহার প্রচণ্ড মায়া ছিল। তার ছেলের মতো এভাবে আর যাতে কেউ প্রাণ না হারায় সেটাই এখন তার চাওয়া। এখনকার প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন সন্তানহারা এই মা।
তিনি বলেছেন, ছেলে হত্যার সুবিচার চাইছি। এজন্য চাইছি যে, সমাজ এখন ভেবেই নিয়েছে এসব ঘটালেও কারো কিছু হয় না, কিছু হবে না। সুবিচার হলে মানুষ একটু হলেও সাহস সঞ্চার করবে। এই বিচারের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে যেন আশা জাগে।
গত রবিবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাবেক উপসচিবের স্ত্রী নাসিমা আক্তার এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী পেপার মিলে তার বাবা ডেপুটেশনে চাকরি করার সময় ১৯৮৪ সালে সেখানে জন্ম নিয়েছিলেন সিনহা রাশেদ খান। সিনহার জন্ম এবং বেড়ে ওঠার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মা নাসিমা ছেলের ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি টানের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘সিনহার খুব ছোটবেলার কথা। ওর বাবা তখন কর্ণফুলি পেপার মিলে চাকরি করতেন। ডেপুটেশনে ছিলেন। উনি ১৯৭৩ সালের বিসিএস কর্মকর্তা। ডেপুটেশনে থাকা অবস্থায় কর্ণফুলী পেপার মিলেই আমার সন্তান জন্ম হয়। সেখানে একটা মিশন হাসপাতাল আছে। কাপ্তাইয়ের ওখানে।’
‘তারপর ওর বাবার এসিল্যান্ড হিসেবে ছাতকে পোস্টিং হয়। সিনহার বয়স তখন ৬-৭ মাস। ছাতকে আমরা দেড় বছরর মতো ছিলাম। তারপর আবার পোস্টিং হলো সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়। ওখানে ওর বাবা টিএনও (থানা নির্বাহী কর্মকর্তা) ছিলেন। ওখানে সাড়ে চার বছর ছিলাম।’
তখনও সিনহা স্কুলে সেভাবে যাওয়া আসা শুরু করেনি উল্লেখ মা নাসিমা বলেন, ‘ও তো দুরন্তপনা করত। সামনে বড় মাঠ ছিল। একটা হরিণ ছিল। সে হরিণ নিয়ে সবসময় খেলাধুলা করত। পশুপাখির প্রতি, প্রকৃতির প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা ছিল। একটা পিঁপড়া যদি পাশ দিয়ে যেত, আমরা যদি সেটা মেরে ফেলতে যেতাম সে বাঁধা দিত। সে সেটাকে ধরে সরিয়ে দিত। সবকিছুর জীবনের প্রতি খুব মায়া ছিল।’
নাসিমা জানান, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে কক্সবাজারের উখিয়ায় স্বামীর পোস্টিং হলে সেখানকার একটা স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করানো হয় ছেলে সিনহাকে। এখানেই তার স্কুল জীবনের শুরু। তবে পাহাড়ি মাঠ-ঘাট বেয়ে বেয়ে স্কুলে যাওয়া আসা একাই করত। কারো সঙ্গে যেত না।
‘ওর বাবা বলত আমি যদি সঙ্গে যায় তো সে রাজি হতো না। আগে চলে যেত। অত্যন্ত দুরন্তপনা ছিল। খেলাধুলার প্রতি অদম্য ঝোঁক ছিল। আগে মনে করতাম সব বাচ্চারাই তো এমন করে। কিন্তু এখন বুঝি ওর ভেতর থেকে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ছিল। এরপর আমাদের পোস্টিং হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ওখানে সে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছে। তারপর অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ওর বাবাব পোস্টিং হলো সাতক্ষীরা। ওখানে আড়াই বছর মতো ছিলাম। সাতক্ষীরা থেকে আমাদের পোস্টিং হলো সিরাজগঞ্জের জেলা পরিষদ সচিব হিসেবে। সিরাজগঞ্জে সম্ভবত সেভেন এইট পর্যন্ত পড়েছে। এরপর ওর বাবার পোস্টিং হলো ঢাকাতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে।’
‘তখন কিন্তু ঢাকার স্কুলে ভর্তি হওয়া কঠিন ছিল। ক্লাস এইটে কেউ নেবে না ওকে। তারপর ও কোনোভাবে টিচারদের বলে, পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেল। এইট, নাইন ও টেন কুর্মিটোলা শাহিনে পড়ল। ওখানেও দুরন্তপনা। সেখানে তো আরও বিশাল এরিয়া নিয়ে স্কুলটা। বন-জঙ্গল, মাঠ সবকিছু আছে। সেখানে বিতর্ক ক্লাবের সদস্য ছিল। মানে স্কুলের এমন কোনো কার্যক্রম নেই যেখানে ওর অংশগ্রহণ ছিল না। কুর্মিটোলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। এরপর আমরা উত্তরা চলে এলাম। ওর বাবার চাকরিও শেষ হয়ে গেল। সেটা ১৯৯৯ সালে।’
‘তারপর ও ভর্তি হয় রাজউকে। রাজউকেও তার দুরন্তপনা। সে সেখান থেকে বিএনসিসিতে চান্স পেল। বিনএনসিসি থেকে ইন্ডিয়ায় যাওয়ার সুযোগ এলো। আমি বললাম, ইন্টারে সময় কম। ফিজিক্স ক্যামিস্ট্রিতে সময় দিতে হয়, পড়তে হয়, স্যারদের কাছে যেতে হয়। সে বলে, বিকাল বেলা খেলা রেখে স্যারদের চারদেয়ালে বসে থাকব? এতো চাপ নেব না। ওর একটা বিষয় ছিল যে একবার কোনো পড়া পড়লে সেটা মনে থাকত। সেইপড়া দিয়েই সে আশি থেকে পঁচাশি শতাংশ মার্কস পেত। আমি বলতাম, তুমি একবার পড়ে যদি এত নাম্বার পাও তাহলে তুমি যদি একটু বেশি পড় তাহলে তুমি টপে থাকবা। সে বলত, আমার তো টপে থাকার দরকার নেই। আমি তো টপে থাকতে চাই না। আমার যতটুকু ভালো লাগবে আমি ততটুকুই করব। ভালোলাগাটাকেই প্রাধান্য দিত। তারপর দেখি হাসতে খেলতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে চান্স পেয়ে গেল। সে মেরিটে পঞ্চম স্থান পেয়েছে। আমি তখন বলি যে, তুমি তো ভালোই করলে। তারপর আর্মিতে যেয়ে সে প্রথমবার আউট হয়েছে।’
আর্মিতে যাওয়ার স্বপ্ন কি আগেই ছিল?
আর্মিতে যাওয়ার স্বপ্ন ঠিক বুঝি না। তবে ওর ভেতরে যে একটা অ্যাডভেঞ্চার কাজ করত। ওইটা তো আর্মির সঙ্গে যায়। সেখানে থেকে তো তার অনেক কিছু শেখার আছে। সে যে বিশ্ব ভ্রমণ করবে। তার মানসিক পরিস্থিতি, শারীরিক পরিস্থিতি এগুলোতো আর্মিতে ছাড়া হবে না। আমি এখন চিন্তা করি ওখান থেকে ও খুব গেইন করছে। তো আর্মিতে প্রথমবার হলো না পায়ের লিগামেন্টের জন্য। দৌড়াতে নাকি অসুবিধা হবে। পরেরবার দেখি সে চান্স পেয়ে গেল। এরপর আর্মিতে সমস্ত কোর্সগুলো করল।
সেনাবাহিনীতে সে গিয়েছিল তার স্বপ্ন থেকে, আপনারা কি কোনো স্বপ্ন তাঁকে চাপিয়ে দিয়েছিলেন?
সেই সুযোগই আমার হয়নি। ভাবলাম আমি যদি এটা করি তাহলে ফলাফলে আমিও কিছু পাবে না সেও কিছু পাবে না। এছাড়া সে এসব বিষয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ ও কোনো টিচার ছাড়া ভালো রেজাল্ট করত। সে ডিবেটে, বিএনসিসিতে ইন্ডিয়া যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তখনকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি। উনার সঙ্গে বসেছে, খেয়েছে। এই সব বিষয়ের ক্ষেত্র সে তৈরি করেই ফেলেছিল। সে যে এসব পারবে সেই কনফিডেন্স আমাদের মধ্যেও চলে এসেছিল। সেনাবাহিনীর জীবন সে আনন্দের সঙ্গেই নিয়েছিল। ও আমাকে বলত, অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শিখেছি। এবার চাকরি যে ছেড়ে দেবে এই কথা সহজেই কি মাকে বলা যায়? মাও তো সহজে মেনে নেবে না। নিশ্চিত চাকরি, নিশ্চিত জীবন। সে কৌশলে আমাকে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়। সে বলল, আম্মু এখানে তো অনেক কিছু শেখা হলো। আর কী হবে থেকে? এখন আমাকে নতুন কিছু জানতে হবে। নতুন কিছু শিখতে হবে। ও পরিবারের গাইড দেয়া শুরু করে সবদিকই খেয়াল রাখত। সে ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব সবার প্রতি খুব যত্নশীল ছিল। যে যখন ডেকেছে দিন কি রাত সব সময় ছুটে গিয়েছে। তাতে আমি কোনো বাধা দিইনি। আমার তাতে সমস্যা তো হচ্ছে না।
সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর কী করলেন?
সে ২০১৯ সালের নভেম্বরে সম্ভবত অবসরে গেল। এই এক বছর আমার কাছেই ছিল। রেডি হচ্ছে বিশ্ব ভ্রমণে যাবে। সবকিছু ভেতরে ভেতরে গোছাচ্ছে। তারপর তো করোনাভাইরাস চলে এলো। এখন বলে, আম্মু আমি তো অনেক কাজকর্ম করি সারাদিন সারারাত। বাইরে যেতে হয় আসতে হয়। তুমি তো বাসায় একা থাক। আমি রাজশাহী চলে যাই। আমি বলি, রাজশাহী গিয়ে কী করবা? সে বলে, রাজশাহী গিয়ে আমার অনেকগুলো কাজ হবে। আমার ফিজিক্যাল ফিটনেস এখানে বাসায় সেভাবে করতে পারব না। এখানে জিম বন্ধ হয়ে গেছে। ওখানে পদ্মা নদীর পাড় আছে। পদ্মা নদীর পাড়ে দশ বারো মাইল দৌড়াত। তারপর আমার ফ্রেন্ডের মায়ের এক বিশাল লাইব্রেরি আছে। বই পড়ার সুযোগটা হয়ে যাবে। আর অবসর সময়ে কাজ করতে পারব। তারপর তুমিও নিরাপদ থাকলে। এমনিতেই আমি বলতাম, আত্মীয়স্বজন সবাই বলে ওতো অবসর নিয়ে আসছে। ও তো এতো বড় চাকরি করতে পারবে। ওতো এতো টাকা বেতন পাবে। আত্মীয়-স্বজন যা বলে আর কী! তো আমি বলি, মানুষ যখন বলে বাবা এসে তো একটু রেস্ট নিতে পারলাম না এসেই কি আবার চাকরিতে ঢুকতে হবে? মানুষের তো একটা রেস্টেরও দরকার আছে। ও তখন আমাকে বলে, মানুষ জিজ্ঞাসা করলে বলে দিও ফ্রিল্যান্সিং করি। আমি বলতাম তুমি এখন কী কর কিছুই তো বল না। বলে, আম্মু বলার মতো হলে বলব। এখনো বলার মতো কিছু হয় নাই। সেটাও সারপ্রাইজ।
আমার জন্য সেটাও বিশাল সারপ্রাইজ রেখেছে সে। ও যে এটা করতে পারে! ওর ভয়েজটা শুনে সেদিন আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার ছেলে এটাই দেখাতে চাই যে আমি সব পারি। তারপর রাজশাহীতে গেল। এক সপ্তাহ বাসায় ছিল। আমার সঙ্গে সময় কাটালো। রাজশাহী থেকে আসার সময় আবার করোনা টেস্ট করেও আসছে। বলে, আম্মু করোনা টেস্ট করে আসছি। রাজশাহীতে থাকা অবস্থায় রাজশাহী থেকে আমার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠিয়ে দিয়েছে। বলে আম্মু আপনার তো একটু শ্বাসকষ্টের সমস্যা। যদি হয় তাহলে তাড়াতাড়ি নিয়ে নেবেন। কিন্তু ভাবখানা এমন করত যে আমি কিছু দেখি না বা জানি না।
তারপর এক সপ্তাহ পর বলল আম্মু আমার তো কক্সবাজারে কিছু শুটিং আছে। আমি কিছু ডকুমেন্টারি করব। আমার আবার একটু অভ্যাস কম ছিল জিজ্ঞেস করার। মানে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে তেমন আমি ঘাঁটাঘাঁটি করতাম না। আমার সব ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রেই।
সর্বশেষ কবে আপনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়?
আমি বলি আসো। বলে, না আম্মু আসব না। গাড়ি নিয়ে এতদূর যাওয়া আসা করা যাবে না। তো আমি বলি গাড়িটা রেখে প্লেনে করে চলে আসো। আবার চলে যেও। বলে যে, তাও বলে না। তার একদিন পরেই আবার আমাকে ফোন দেয়। ঈদের দুদিন আগে এটা। বলে, আম্মু আমি টিকিট পাঠিয়ে দিই তুমি চলে আসো। এক সপ্তাহ থেকে আবার চলে যেও। ঈদের আগের দিন আমি ভাবলাম যে ব্যস্ত আছে হয়তো। আমিও ব্যস্ত। রাত ১১টায় ওকে ফোন দিই। তখন দুজনই ফ্রি। তখন তো কথা বলতে সমস্যা নেই। ঈদের দিন আমিও ব্যস্ত থাকব। সারাদিন কথা বলিনি। যেহেতু কাজে ব্যস্ত থাকে। তারপর রাত ১১টায় ফোন করি। এখন দেখি ফোন রিং হচ্ছে বারবার কিন্তু ফোন ধরে না। যদি ও ফোন নাও ধরে তবে সময় করে ও পরে কল ব্যাক করে। সেদিন আর কল ব্যাক করেনি। কী ব্যাপার! আমি কল দিয়েই যাচ্ছি। রিং হয়েই যাচ্ছে। আনুমানিক রাত ১২টায় এক ভদ্রলোক আমাকে ফোন করে বলছে, সিনহা আপনার কী হয়? বলে, ও কী করে জানেন? হ্যাঁ জানি, ও টুকটাক কাজ করে। আমি ওটাকে টুকটাক কাজই বলতাম। বলে, উনি কেন আর্মির চাকরি ছাড়ছে? আমি বলি ওইযে বাইরে ঘুরবে, বিশ্ব ভ্রমণ করবে এজন্য। এগুলো আমার বলতেও ভাল্লাগতো না। আর মানুষ এটা শুনলে হাসবে। বিশ্ব ভ্রমণ করার জন্য এই চাকরি ছেড়ে দেয় কেউ? আমাদের সমাজে এটা গ্রহণ করবে না। এজন্য আমার বলতে খুব একটা ভালো লাগত না।
পরে আমার মনে হলো উনি কোথাকার কে? আমি তো চিনি না জানি না। পরিচয় জানি না। তখন আমার মনে হয়েছে। প্রথমে আমার ওইগুলো মনেই হয়নি। বলি, আপনি কে? এগুলো কেন জিজ্ঞাসা করছেন? একটু রুঢ় হয়ে বলছি তখন। উনিও রুঢ় হয়ে তখন আমাকে বলছে আপনি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি টেকনাফ থানার ওসি। যখন টেকনাফ থানার ওসি বলছে তখন আমি ভাবছি পুলিশের সঙ্গে হয়তো কোনো কাজটাজ করছে। বাকবিতণ্ডা হয়তো হয়েছে। আমার ছেলেকে হয়তো ওখানে নিয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করছে সেজন্য হয়তো- ওকি আদৌ আর্মি অফিসার, নাকি ভুয়া আর্মি অফিসার। আমি তখন জিজ্ঞাসা করছি ও কোথায়? ও তো ফোন ধরছে না। উনি বলে, ও আছে একটু দূরে আছে। আমি বলি, ফোনটা ওকে দেন। বলে, হ্যাঁ পরে দেব। বলে রেখে দিয়েছে।
তারপর আমি কতবার ফোন দিয়েছি। ফোন বেজে বেজে এরপর স্টপ হয়ে গেল। আর ফোন বাজে না। তখন আমার একটু সন্দেহ লাগা শুরু হলো। আমি ভাবছি, এখন আমি কার কাছে খোঁজ নেব। কাকে বলব? কী করব? মেজর মহসিন এবং মেজর শাহরিয়ারের ফোন নাম্বার ও আমার ফোনে সেভ করে দিয়েছিল। তখন আমার মনে হলো তাহলে ওদেরকে জানাই। ওরা ওদের ব্যাচমেট। আমি আবার ভাবছি আজকে ঈদের দিন ওদের কত কাজ থাকে। আমি ফোন দেব দেব করেও লেট করছি। তারপরে ফোন দিয়েছি। দুইবার ধরেনি। তারপরে ফোন ধরে বলে আন্টি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি আসলে একটু বিজি ছিলাম। আমি বলার পর সে বলল আন্টি আমরা দেখছি। সে বলল, বড় আপুর ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে? তো আমি দিলাম। তারপর আমার মেয়ের জামাইয়ের ফোন নাম্বারও নিল। আমার মেয়েকে তখন হয়তো পায়নি। আমার মেয়ে হয়তো ব্যস্ত ছিল। বলছে ১০টার সময় পুলিশ আসছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি। তারা জিজ্ঞাসা করছে ও চাকরি ছেড়েছে কেন? আমি আবারো সে একই কথা বলি। বললো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না। আমি বললাম সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। এটা শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। এগুলো সকাল সাড়ে দশটায় জিজ্ঞাসা করছে পুলিশ আমাকে। পুলিশ আর আসেনি। ওই সময় ছেলের ছবিও নিয়ে যায় পুলিশ। আমার চিন্তা ওখানে হয়তো আমার ছেলে আর্মি কিনা যাচাই বাছাই করতে চাইছে। এজন্য আমি সব ছবি বের করে দেখাচ্ছি। আমি তো ওই পয়েন্টেই আছি।
আপনার কি কিছু বলার আছে?
কীভাবে কী বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তো স্বপ্ন তো থেমে যায়নি। রেখে গেছে। আমার ছেলে চাইতো, আমরা তো চলে যাব কয়দিন পরে। আমাদের জেনারেশনগুলোর জন্য আমাদের ভাবতে হবে না? অনেক ভাবত। আমার ছেলে জীবন দিয়ে রেখে গেছে আপনাদের জন্য বার্তা সামনে সবার জন্য একটাই বার্তা রেখে গেছে। তোমরা সাজানো একটা সুন্দর পৃথিবী রাখ। এটি রাখলে এখানে কোনো হত্যাকাণ্ড থাকবে না। ইতিবাচক মনোভাব থাকবে। ও জীবনটা দিয়ে ওই বার্তাটাই দিয়ে গেল। আর ছেলের হত্যার সুবিচার অবশ্যই চাইছি। এজন্য চাইছি যে, সমাজ এখন ভেবেই নিয়েছে এসব ঘটালেও কারো কিছু হয় না। কিছু হবে না। সুবিচার হলে মানুষ একটু হলেও সাহস সঞ্চার করবে। কিছু হবে। মানুষের মাঝে যেন আশা জাগে।