সুবিধাভোগী রাজনৈতিক দল জাপা মহাসংকটে

52

* জাপার শনিবারের  সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা ছাত্র-জনতার
* ৫ আগষ্টের পর তৃনমূল থেকে আওয়ামীলীগের সাথে পালিয়ে গেছে জাপার লোকজন

মিরর বাংলাদেশ :  রাজনীতিতে মহাসংকটের পড়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের দোসর হিসেবে তৃনমূলের মানুষের কাছে পরিচিত এ দলটি কঠিন পরিক্ষার মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদের পতন এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের মিত্র দল জাতীয় পাটি বিপদের মধ্যে দিন কাটছে।
বিশেষ করে চলমান সময়ে রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন ধরে অপকর্ম করে আসা জাতীয় পার্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার রোষানলে পড়েছে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। জাপার নেতাকর্মীদের দ্বারা ছাত্রদের মারধরের অভিযোগে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে কার্যালয়ে হামলা পর  শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করছে জাপা। সেখানে শনিবার পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জাপা। এর বিপরীতে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা। তবে আওয়ামীলীগের পলাতক কর্মীদের একত্রিত করে সমাবেশ করার চেষ্টা করছে জাতীয় পার্টি। এমন তথ্য জানিয়েছে একধিক সূত্র। জাপা সমাবেশকে ঘিরে পলাতক ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামীলীগের লোকজনকে সংঘবদ্ধ করতে চায় জাপা।
জানা গেছে, গত ৫ আগষ্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার অন্যতম দোসর হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির তৃনমূলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। জনরোষের ভয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী।
শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘দুই তারিখ ( শনিবার) আমাদের সমাবেশ কর্মসূচি চলবে। আমাদের কর্মসূচি ও আন্দোলন সবই চলবে নিয়মতান্ত্রিক এবং অহিংসভাবে’। জাতীয় পার্টির নামে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে এবং নানা ষড়যন্ত্র করছে ।
জিএম কাদের বলেন, ‘আমরা মরতে এসেছি, আমরা মরতে চাই, কত মারবে তোমরা আমরা দেখতে চাই। তারপরও আমাদের সমাবেশ হবে।’
‘আল্লাহ আমাদের প্রটেকশন দিচ্ছে বলে এখনো বেঁচে আছি, অন্য কারও প্রটেকশনে নয়। বিচারের জন্য যদি আল্লাহর সাহায্যের দিকে চেয়ে থাকতে হয় তাহলে দেশ কীভাবে চলবে। আমরা একদিনের ডেমোক্রেসি চাই না। সব সময়ের ডেমোক্রেসি চাই। আমরা চাই সরকার হবে-অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের জনগণের পাশে ছিলাম, সবসময় থাকবো। আমার পরবর্তী প্রজন্ম এলেও জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে থাকবে এবং একইভাবে এগিয়ে যাবে। আমাদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে জিএম কাদের বলেন, ‘তারা যা বলে তা-ই সঠিক, বাকি সবাই ভুল। তারা এখন বিচারকার্যেও গিয়ে বাধা দেয়। তাদের ইচ্ছা হলো আমাদের অফিস ভেঙে দিয়ে গেল। কারও যদি ভুল হয় সেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার অনেক উপায় আছে, তাই বলে তাকে ধ্বংস করে দেবেন, এটা কেমন হবে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জাতীয় পার্টি শুরু থেকে সমর্থন জানিয়েছে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘তাদের পক্ষে সে সময় অনেক কথা বলেছি, বিবৃতি দিয়েছি। যে কারণে আমার অনেক ক্ষতিও হতে পারতো। কিন্তু এসব কিছুর পরোয়া আমরা করিনি। তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় অপবাদ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই বলে আমরা নাকি আওয়ামী লীগের দোসর। কিন্তু কিভাবে দোসর হলাম। আমরা শেখ হাসিনার কোনো ধরনের জনবিরোধী কাজের সঙ্গে ছিলাম না। আমরা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের জনবিরোধী ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের দলীয়করণের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম। ২০১৮ সালে সব দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তখন কি সব দল শেখ হাসিনার সরকারকে বৈধতা দেয়নি। এটা কি একা জাতীয় পার্টি দিয়েছিল,’ প্রশ্ন রাখেন কাদের।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) প্রশ্ন রেখে বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও অন্যায়ের ভাগীদার হব কেন? একটি গোষ্ঠি অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমরা আওয়ামী লীগের দোসর, এসবের অপবাদের সত্যতা নেই, এর পেছনে ষড়যন্ত্র চলছে।
এদিকে স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যায়িত করে জাতীয় পার্টিকে শনিবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্র, শ্রমিক, জনতার ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রঅধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বৃহস্পাতিবার আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিল। আমরা কাকরাইলে পৌঁছানো মাত্রই আমাদের ওপর তারা অতর্কিত হামলা করে। আপনারা শুনেছেন, জাতীয় পার্টি আগামীকাল সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এসে সমাবেশ করবে।
ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমরা বার বার আলটিমেটাম দিচ্ছি যেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিষিদ্ধ করা হয়। তারা বিভিন্ন রূপে ফেরার চেষ্টা করছে। তাদের প্রতি বর্তমান সরকারের অবস্থান কী আমরা তা জানতে চাই। ডিএমপি কমিশনার কীভাবে এই হত্যাকারীদের দোসরদের সমাবেশের অনুমতি দেন আমরা জানতে চাই। জাতীয় পার্টিকে শনিবারের সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টিকে আগামীকাল সমাবেশ করতে দেওয়া মানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার আরেকটি চক্রান্ত।
জাতীয় পার্টির হামলার অভিযোগ তুলে ছাত্রনেতা মশিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার আমাদের ওপর জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ একত্রে হামলা করে। আমার হাতে এখনো ব্যান্ডেজ করা। তারা নাকি আবার আগামীকাল সমাবেশ করবে। এটা কি মগের মুল্লুক পেয়েছে। তারা হামলাও করবে আবার সমাবেশও করবে। গতকাল তাদের পার্টি অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার সাথে ছাত্র, শ্রমিক, জনতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ তাদের অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে।
শনিবারের সমাবেশ প্রস্তুতির খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে জাপা কার্যালয়ের সামনে আসেন ছাত্রদের কয়েকজন। এ সময় জাপার নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। পরে খবর পেয়ে ছাত্র-জনতা লাঠিসোটা নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে আসতে থাকলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। বিক্ষুব্ধরা কার্যালয়ে এসে হামলা করে। ভাঙচুরের এক পর্যায়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর থেকে ছাত্রজনতা কার্যালয়টি দখলে নিয়েছেন।