মিরর বাংলাদেশ: ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র (ডিআরইউ) সদস্য মাছরাঙা টেলিভিশনের সাবেক বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনীর খুনিদের অবিলম্বে সনাক্ত করে গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবী বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালন করেছে ডিআরইউ। একইসাথে কর্মসূচী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁন কামালকে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে। তিন দফার অন্য দাবী গুলোর মধ্যে রয়েছেÑ হত্যাকান্ডের ৮ বছরেও চার্জশিট দিতে না পারার কারণ তদন্ত এবং দ্রুততম সময়ে এই মামলার চার্জশিট দিয়ে বিচার কাজ সম্পন্ন করা।
রোববার দুপুরে সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি মন্ত্রণালয়ের কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে এই স্বারকলিপি তুলে দেন। স্বারকলিপিটি পাঠ করে শোনান ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী।
এসময় ডিআরইউ সভাপতি উক্ত দাবিগুলো ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, এই আইন অপব্যবহার করে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, পত্রিকাটির স্টাফ রিপোর্টার আল-আমিনসহ অন্যান্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি প্রথম থেকেই সাংবাদিক সমাজ মেনে নেয়নি। আমরা এই আইনটি বাতিলের জন্য আবারো দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে এই আইনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা না হয়, সেজন্য আপনার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) প্রত্যক্ষ সহযোগিতা আশা করছি।
স্মারকলিপি প্রদানের পর উপস্থিত প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁন কামাল বলেন, বর্তমান সরকার সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য খুবই আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। মামলাটির সুষ্ঠু বিচারে প্রধানমন্ত্রী নিজেও নির্দেশনা দিয়েছেন। মামলাটি এখন র্যাব তদন্ত করছে। তারা ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে কিছু আলামতও পেয়েছে। সেই সূত্র ধরে র্যাব কাজ করছে। তাদের উপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। আপনাদের সাথে আমিও একমত যে, এই মামলাটি তদন্ত করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। যেহেতু র্যাব কিছু ক্লু পেয়েছে, তার সূত্র ধরে আশা করি আমরা সাগর-রুনীর হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে পারবো। আমার প্রত্যাশা, সাংবাদিকরাও এই বিচার কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন। একইসাথে মন্ত্রী পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় যাতে কেউ বিনা অপরাধে হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়টিও দেখবেন বলে জানান।
স্মারকলিপি প্রদানকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বিএফইউজের দপ্তর সম্পাদক বরুন ভৌমিক নয়ন, ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, ডিআরইউর দপ্তর সম্পাদক মো: জাফর ইকবাল, কল্যাণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, কার্যনির্বাহী সদস্য কামরুজ্জমান বাবলু, সায়ীদ আব্দুল মালিক, ক্র্যাব সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জমান বিকু, ডিআরইউ বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক ওমর ফারুক, ডিআরইউ’র সাবেক দপ্তর সম্পাদক মেহ্দী আজাদ মাসুম, সাবেক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রমুখ।
এর আগে একই দাবীতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ডিআরইউ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, অপর অংশের নব নির্বাচিত সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব অমিয় ঘটক পুলক, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খাইরুল আলম, ডিআরইউর অর্থ সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ, দপ্তর সম্পাদক মো: জাফর ইকবাল, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম মিজান, কামরুজ্জমান বাবলু, সায়ীদ আব্দুল মালিক, ডিআরইউর সাবেক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক মশিউর রহমান, সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান, ডিআরইউ সদস্য ইকরামুল কবীর টিপু, রহমান আজিজ প্রমুখ। এসময় ডিইউজের সহ সভাপতি রাশেদুল হক, ডিআরইউর কল্যাণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে সাগর-রুনী হত্যার বিচারসহ সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি ডিআরইউ চত্বর থেকে যাত্রা করে প্রেসক্লাব হয়ে সচিবালয়ের সামনে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে মাধ্যমে ঘেরাও কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন ডিআরইউ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ। পরে তিনি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে ডিআরইউ জানায়, সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনী হত্যাকান্ডের আট বছর অতিক্রান্ত হলেও আজো তাদের হত্যার কোন কুলকিনারা হয়নি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজা বাজারের ভাড়া বাসায় তাদের শিশুপুত্রের সামনে নির্মমভাবে খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি। দীর্ঘ আট বছরেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ ও র্যাবসহ সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হত্যাকান্ডের তদন্ত পুলিশ, সিআইডি, ডিবি ও সবশেষে র্যাবের কাছে মামলার নথি হাতবদল হয়েছে মাত্র। হাত ঘুরে তদন্তের ভার এখন র্যাবের কাছে। তারাও এই হত্যাকান্ডের কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত সংস্থা আদালত থেকে ৭১ বার সময় নেয়ায় জনমনে হতাশা ও সন্দেহ আরো ঘনিভ‚ত হয়েছে। ৭১ বার সময় নেয়ার পরে মহামান্য হাইকোর্টে র্যাবের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, তাতেও নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। তদুপরি, অপরাধীদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে এই প্রতিবেদন কার্যকর কোনো ভ‚মিকা রাখবে বলে আমরা মনে করিনা।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন বিচার না পেয়ে সাগর-রুনীর পরিবারের পাশাপাশি গোটা সাংবাদিক সমাজ হতবিহবল। ক্ষোভে বাকরুদ্ধ মেহেরুন রুনীর মা নুরুন্নাহার মির্জা, সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মুনির। কিন্তু এখনো বিচারের আশা ছাড়েননি বয়োবৃদ্ধ দুই মা, সাগর-রুনীর শিশুপুত্র মাহীর সরওয়ার মেঘ ও সাংবাদিক সমাজ। এ অবস্থায় সাগর-রুনী হত্যার কার্যকর বিচার দাবিতে ডিআরইউ এর অবিচল অবস্থান এখনো বিচ‚্যত হয়নি। অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছেড়ে যাবেনা রিপোর্টারদের প্রাণের এই সংগঠন। এতে আরও বলা হয়, যে কোন হত্যার বিচার পাওয়া নাগরিকের অধিকার। আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের সেই অধিকার নিশ্চিত করা। আমাদের সুযোগ্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বড় বড় হত্যা রহস্য উন্মোচন ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করেছে। সাগর-রুনী হত্যার কোন কুলকিনারা তারা করতে পারবে না এটা আমরা বিশ^াস করি না। কোন অদৃশ্য শক্তি বা বাধার কারণে নৃশংস এই হত্যার তদন্তের নামে বছরের পর বছর কালক্ষেপণ করা হচ্ছে কি-না সেটাই এখন বড় রহস্য। সাগর-রুনী কেন খুন হলেন? কারা এই খুনের সাথে জড়িত তা জানতে চায় দেশবাসী। আর কালক্ষেপণ না করে দ্রæততম সময়ে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে এবং প্রকৃত খুনিদের গেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি জোর দাবি জানায়। অন্যথায় ডিআরইউ বৃহত্তর সাংবাদিক সমাজকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে এবং চলমান আন্দোলনকে অব্যাহত রাখবে।