* নিহতদের পরিবারে শোকের মাতম
* সুনামগঞ্জে বিয়ের কথা পাকা করতে গিয়ে নিহত ফতুল্লার ৯
* সিলেট মাজার জিয়ারত যাওয়ার পথে প্রান গেলো বন্দরের ৬ যুবকের
মিরর বাংলাদেশ: ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জেরই ১৭জন মানুষ মারা গেছে সড়ক দূর্ঘটনায়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত হওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। তারা সবাই সিলেটে মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন।
সূত্র জানায়,চারটি সড়ক দুর্ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের নারীসহ ১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত এবং শুক্রবার ভোরের দিকে পৃথক চার জেলাতে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা সবাই নারায়ণগঞ্জের বন্দর, রূপগঞ্জ ও ফতুল্লার বাসিন্দা।
সূত্র জানায়, ৫ মার্চ রাতে বন্দর থেকে দশ যুবক মিলে একটি মাইক্রোবাসে করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে এদিন দিবাড়ত রাত আড়াইটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলায় একটি যাত্রীবাহি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৫ জন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজন নিহত হন। আহত আরও চারজন হাসপাতালে ভর্তি আছে।
নিহতরা হলেন, নিহতরা হলেন, বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জের দিলারবাড়ি এলাকার চায়ের দোকানি আবুল হোসেনের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী সাগর (২০), আবুল হোসেনের কর্মচারী শাহিন (১৬) ও আরেক কর্মচারী হারুন (৪২), নবীগঞ্জের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার মসলার ব্যবসায়ী নুরুল হকের ছেলে রিফাত (১৮), একই এলাকার রাজমিস্ত্রী তাওলাদ হোসেনের ছেলে ইমন (১৭), খোরশেদ আলমের ছেলে গাড়ি চালক সোহান (২২)।
আহতরা হলেন, নবীগঞ্জের কদমতলী এলাকার শাহীন আহমেদ শান্ত (৩০), জিসান (২৪), নবীগঞ্জের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার স্যানেটারি মিস্ত্রী আফজাল হোসেনের ছেলে বিজয় (১৯), একই এলাকার আবিদ (১৯)।
আহতদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। হতাহত সকলেই এদিন রাতে সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বন্দর থেকে একটি মাইক্রোবাসে রওনা হয়েছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহত জিসান জানান, তিনি ও তার বন্ধু সাগর একসঙ্গে বসেছিলেন। বাসের সঙ্গে তাদের মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার পর তিনি মাইক্রোবাস থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান। সাগরসহ অন্য আরোহীরা মাইক্রোবাসের ভেতরই ছিলেন। সাগর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
দুর্ঘটনায় বাসটিও মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। তবে বাসের কোনো যাত্রী তেমন আহত হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাইক্রোবাসটিতে আগুন জ্বলতে থাকার সময় ভেতরে থাকা আরোহীরা সাহায্যের জন্য আকুতি জানালেও আগুনের ভয়ে কেউই এগিয়ে আসেনি।
আগুন নেভার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক এক করে পাঁচজনের অগ্নিদগ্ধ মরদেহ বের করেন মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে। আর জীবিত উদ্ধার হওয়া পাঁচজনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে একজন মারা যান।
এদিকে নিহতের বাড়ি বন্দরের দেউলি চৌরাপাড়া এলাকায় চলছে শোকের মাতাম। বার বার মুর্ছা যাচ্ছে নিহত সোহানের মা সখি বেগম। ছেলের জন্য আহজারী করছে নিহতদের পরিবার।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পাগলা মুসলিমপাগা থেকে ১৩ জনের একটি দল মাইক্রোবাসযোগে সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকায় যচ্ছিলেন বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে। পথিমধ্যে শুক্রবার সকাল ৭ টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কান্দিরগাঁও এলাকায় মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুমড়ে মুচড়ে নিহত হয়েছেন বরের বাবা, বোন, ভাইসহ নয় জন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন।
নিহতদের মধ্যে ৬ জন এবং আহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন, রাজিব, আসমা, আব্বাস উদ্দিন, মহসিন, ইমন খান, রাব্বি ও সুমনা। এদের মধ্যে সুমনা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এবং বাকিরা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। মরদেহগুলো উদ্ধার করে শেরপুর হাইওয়ে থানায় নিয়েছে পুলিশ।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়ার শ্রীপুরের নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জে কর্মস্থলে আসছিলেন শিল্প পুলিশের কনস্টেবল আকাশ আহমেদ (২২)। পথিমধ্যে রাত একটার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলসহ তাকে চাপা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নিহত আকাশ আহমেদ ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার আব্দুল মজিদের ছেলে। ২০১৮ সালে তিনি নারায়নগঞ্জ শিল্প পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেন। তবে বর্তমান তারা পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করে থাকতেন।
এছাড়াও শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে ময়নসিংহের ভালুকা উপজেলার মেহরাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটি বড় পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা খায় মাছভর্তি আরেকটি ছোট পিকআপ। এতে ছোট পিকআপের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় পিকআপ চালক রাজনসহ নিহত হন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী মো. আজিম। তিনি উপজেলার তালাশ কোর্ট এলাকার আবদুস সালামের ছেলে
ভালুকা হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মাহমুদ আদনান বলেন, মাছভর্তি ছোট পিকআপের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপর একটি বড় পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা লাগালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পিকআপ দুটি জব্দ করা হয়েছে। নিহত দুজনের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।