সড়ক তো নয়, মারণ ফাঁদ

1278
ছবি : ফতুল্লা বিসিক শিল্পনগরীর প্রধান সড়কটির নাজুক পরিস্থিতি। মঙ্গলবার   ছবিটি তুলেছেন সিনিয়র আলোকচিত্রী এম এ সুমন।
রুহুল আমীন প্রধান : 

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা গার্মেন্ট সেক্টরের প্রধান সড়কের নাজুক অবস্থা। প্রতিদিন এই বেহাল সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে বিসিক শিল্পনগরীর শিল্প মালামাল বহন করা পরিবহনগুলো। সড়কটির এমন অবস্থা যে মানুষ পর্যন্ত চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে; সেখানে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে মালামাল বহনকারী যান যাতায়াত করে থাকে। ফলে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এটি সড়ক তো নয় যেন মারণ ফাঁদ। গার্মেন্ট মালিকদের অনেকে রাস্তাটি নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায়। কোটি কোটি টাকার গার্মেন্ট পণ্য যে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে সে সড়কের নাজুক অবস্থায় ক্ষুব্ধ তারা।
ফতুল্লা বিসিক এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ-মোক্তারপুর সড়কে বৃষ্টির পানি ও

খনাখন্দে ছোট- বড় শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই ওই গর্তে পড়ে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান উল্টে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। গতকাল মঙ্গলবার সকালেও চার মালবাহী ট্রাক উল্টে সৃষ্টি হয় প্রায় চার কিলোমিটার যানজট। শুধু যানবাহনই নয়, শিল্পনগরীর ওপর দিয়ে যাওয়া ওই সড়কে পথচারী ও শ্রমিকরা চলাচল করতে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে সেতু বিভাগ থেকে সড়কটিতে ছয় কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণের আশ্বাস দেয়া হয়; কিন্তু এখনো সে আশ্বাস পূরণের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল দুপুরে সরজমিন ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায় প্রায় আট বছর ধরে সংস্কারবিহীন ওই রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। এ ছাড়া গত কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে ভারী বর্ষণে রাস্তার পিচ, ইট, খোয়া উঠে গিয়ে ওই সব গর্তে কাদা জমে ক্ষুদ্র জলাশয়ের রূপ নিয়েছে। সড়কটিতে চলাচল করে বুঝার উপায় নেই কোথায় গর্ত আছে আর কোথায় নেই। পঞ্চবটি থেকে মোক্তারপুর পর্যন্ত শতাধিক ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ওই রাস্তায়। প্রায়ই যানবাহন ওই গর্তে পড়ে বিকল হচ্ছে। আর সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
বর্তমানে বিসিকের ৫০০ গার্মেন্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে চর লাখ শ্রমিক রয়েছে। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা করছে। রাস্তা পার হতে গিয়ে শ্রমিকরা প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, শাসনগাঁও এলাকায় চারটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে অটো রিকশা গর্তে পড়ে নষ্ট হয়ে রয়েছে। পথচারীদের অনেকেই রাস্তায় পা পিচলে আহত হয়ে কাদামাটি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এ বিষয়ে আক্ষেপ করে গার্মেন্ট শিল্পের উদ্যোক্তা ক্রোনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এইচ আসলাম সানী  জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই এ রাস্তার বেহাল দশা। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে প্রায় চার লাখ শ্রমিক। এই শ্রমিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে তার বিনিময়ে এই রাস্তার পাশে বাগান হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু এটি আমাদের দুর্ভাগ্য। প্রতিদিনই এখানে কোনো না কোনো যান বা শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান গতকাল দুপুরে জানান, সড়কের বেহাল দশা নিয়ে সেতু বিভাগের মন্ত্রী মহোদয়, চেয়ারম্যান ও সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বলে বিষয়টি নজরে দেয়া হয়েছে। তারা কথা দিয়েছেন জরুরিভিত্তিতে রাস্তাটি সংস্কারে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আরো জানান, রাস্তাটি সড়ক ও জনপদের নয়। সেতু বিভাগের আওতায় পড়েছে। এখানে ভবিষ্যতে মুন্সীগঞ্জ-মোক্তারপুর সড়ক পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
বিকেএমইএ’র সহসভাপতি(অর্থ) এবং না’গঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার জানান এই বিপজ্জনক রাস্তাটি সংস্কারে বিসিক কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থে একটি বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় এনায়েতনগর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান জানান, সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের নির্দেশে রাস্তায় বেশ কয়েকবার ইট বালু ঢালা হয়েছে; কিন্তু দৈত্যাকৃতির যানবাহনের কারণে টিকসই হয় না। আসাদুজ্জামান জানান, শামীম ওসমানের প্রচেষ্টায় ঢাকা থেকে সওজের কর্মকর্তারা এসে তিনবার পরিদর্শন ও মাপজোক করে গেছেন। এখন তারা লাপাত্তা