মিরর বাংলাদেশ :
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসনের ৫০ শতাংশ কোটা ইস্যুতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ।
বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এ দাবি জানান বিসিএস ৯ম ব্যাচের কর্মকর্তা জাকির হোসেন কালাম। এসময় সভায় উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তারা তার এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
‘জনপ্রশাসন সংস্কারকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
তারা বলেছেন, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ২৫ ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ রাখার যে প্রস্তাব জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আনতে যাচ্ছে তা বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক।
বিসিএস ৯ম ব্যাচের কর্মকর্তা জাকির হোসেন কালাম এ দাবি তোলেন। সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা তাতে সমর্থন জানান। জাকির হোসেন কালাম বলেন, ‘শুধু সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করলেই হবে না, সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এ সংস্কার কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।’
এর আগে, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সোহেল রানা বলেন, উপসচিব পদে ৫০ শতাংশ হারে পদায়ন বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক। রাষ্ট্রকে দুর্বল করার কোনো প্রচেষ্টা চলছে কি না, এটাও আমাদের দেখতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আলোচনা করে নেওয়া হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। যারা ক্রিকেট খেলেন তারা ফুটবল মাঠে কীসের দক্ষতা প্রমাণ করবেন। আমরা ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সম্মানটা দিতে চাই। যার যার সম্মান আমরা জানাতে চাই।
বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি অভিযোগ করেন, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সুবিধাভোগী এবং তার পদত্যাগ করা প্রয়োজন। নতুবা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানেন কীভাবে তার অপসারণের ব্যবস্থা করতে হয়।
এ সময়, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন কামালও একই দাবি জানান এবং কমিশনের প্রধানকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনি তো পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতি নেননি। আপনি অবিলম্বে সংস্কার কমিশন থেকে পদত্যাগ করুন। এছাড়া তিনি কমিশনের পুনর্গঠন এবং প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ন্যায্য পদোন্নতির দাবিও জানান।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্লাহ্ প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে কোনো পরিবর্তন বা কোটা আরোপ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, আমরা এক আছি, এক থাকব। প্রশাসন ক্যাডারের উপর কোনো সার্জারি করতে দেব না। কোনো অযাচিত সুপারিশ হলে কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সভায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ তার বক্তব্যে বলেন, এই কমিশনের প্রতিবেদন কোনো কাজে আসবে না। এটি শুধু অপ্রয়োজনীয় হবে এবং কোনো কাজে আসবে না। তিনি সকল কর্মকর্তাকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন।
এদিকে, সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস চালু করার পাশাপাশি, উপসচিব পদে ১০০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানান।
এটি ছিল প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রথম ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ সভা, যা বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে আয়োজন করে। সভায় প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কয়েকশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন, এবং বিভিন্ন জেলার ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) অনলাইনে অংশ নেন।
বিএএসএ’র মহাসচিব মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জাকির হোসেন কামাল, নবম ব্যাচের কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, নুরুল করিম ভূঁইয়া, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার একান্ত সচিব সামিউল মাসুদ, ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তা খন্দকার মুশফিকুর রহমান, ঢাকা জেলা প্রশাসনে কর্মরত ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা শুভ, ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তা সাইফুল কবির, বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত সিনিয়র সহকারী সচিব সোহেল রানা। অনলাইনে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা প্রতিবাদ সভায় যুক্ত ছিলেন। রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ জোরালো বক্তব্য দেন।