আওয়ামীলীগের বিচার শুরু

117

* দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি সোমবার

মিরর বাংলাদেশ : ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামীলীগের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গনহত্যার বিস্তর অভিযোগে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তবর্তী সরকার। আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার খবরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল হয়েছে।  সোমবার আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রনালয়। এছাড়া গণহত্যার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে আইনের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে এমন ব্যক্তি বা সত্তার এবং তাদের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এই খসড়ার অনুমোদন দেন সরকারপ্রধান।
বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়, কতিপয় সন্ত্রাসী কার্য প্রতিরোধ এবং উহাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার নিমিত্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়।
উক্ত আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোন ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রয়েছে মর্মে যুক্তিসঙ্গতকারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে বর্তমান আইনে কোন সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোন বিধান নেই। উক্ত বিষয়টি স্পষ্টীকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হেতু সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন। এ
দিকে এদিকে রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। শনিবার রাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে গতকাল রোববার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়।
গেজেটে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (দ্বিতীয় সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫ প্রণয়ন ও জারি করেছেন।
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, সংগঠন অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক দল, অথবা সেই দলের অধীনস্থ, সংশ্লিষ্ট বা সহযোগী কোনো সত্তা, অথবা এমন কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে বোঝায় যা ট্রাইব্যুনালের অভিমত অনুযায়ী, ওই দল বা সত্তার কার্যকলাপ প্রচার, সমর্থন, অনুমোদন, সহায়তা বা সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জড়িত থাকে; সংগঠনের জন্য শাস্তি ইত্যাদি। এই আইনের বা তৎকালীন প্রযোজ্য অন্য কোনো আইনের যাই থাকুক না, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারার উপ-ধারা (২) অনুযায়ী উল্লিখিত অপরাধসমূহ করেছে, নির্দেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, প্ররোচিত করেছে, উসকানি দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহজতর করেছে বা সহযোগিতা করেছে, তাহলে ট্রাইব্যুনাল সেই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার, তার নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার এবং তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রাখবে।
এর আগে জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে বিচারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনীতে অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ
এদিকে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী দলটি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবে। দলটির নিবন্ধন বাতিল হবে ১৯৭২ সালের ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’-এর ৯০এইচ (১) (বি) ধারার বিধান অনুযায়ী।
একইসঙ্গে আরপিওর ৯০সি (১) (৩) ধারা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটিকে পুনরায় আর নিবন্ধন দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের জন্য ইসির নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক।
এ বিষয়ে গতকাল রোববার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইসি এখন সরকারি গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, সোমবার গেজেট প্রকাশ হলে আমরা নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব। কমিশনের আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের স্পিরিট বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শনিবার রাতে জরুরি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
বৈঠক শেষে রাত ১১টার দিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত তিন দিন ধরে টানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতা। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের বিষয়ে ওই সিদ্ধান্ত জানায়।
গূত্র জানায়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলন চলতে থাকে সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগপর্যন্ত। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ।
জুলাই অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলনের মাধ্যমে। আওয়ামী সরকার নির্বিচারে বিক্ষোভকারীদের হত্যা শুরু করলে ওই আন্দোলনে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার একদফা দাবিতে পরিণত হয়।
হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি আরও জোরালো হয়। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে দিয়েই সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ছাড়ার এই দাবি আরও তীব্র হয়। পরে এনসিপি ও অন্যান্য সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং পরে শাহবাগে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জেরে অন্তর্বর্তী সরকার শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে আনন্দ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম সাময়িক নিষিদ্ধ ঘোষণার খবর পাওয়ার পরপরই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন ছাত্র-জনতা। মুহূর্তেই স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো শাহবাগ মোড় থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত। অনেকেই খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ সেজদায় লুটিয়ে পড়েন।
শনিবার রাত ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের খবর আসার সাথে সাথেই এসব দৃশ্য দেখা যায় আন্দোলনকারীদের মাঝে। এসময় পানি ছিটিয়ে, হাত তালি আর স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে যায় পুরো এলাকা। সেজদা থেকে উঠে একজন বলেন, আনন্দের দিন, ঈদের দিন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, এ আনন্দ আমাদের সবার ‘
আরেকজন বলেন, ‘বিনা কারণে এ দলটি হাজার হাজার নিরীহ মানুষ খুন করেছে, হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করে দিয়েছে। লাখো মানুষকে বিনা দোষে জেলে দিয়েছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করে এসব করেছে। আজ থেকে আমরা এ নাম শুনতে চাই না।’ একই কথা বলেন সোলাইমান, আনাস, তরিকুল, জয়নালসহ আরও অনেকে।
পরে আনন্দ মিছিল বের হয়। শাহবাগ মোড় থেকে এ আনন্দ মিছিলে ব্যাপক শোডাউনসহ অংশ নেন এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ), ইনকিলাব মঞ্চ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ছাত্র-জনতা।
গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসভবনে জেএসডির স্থায়ী কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গতকাল রোববার আবদুর রব বলেন, গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জড়িত এবং গতিপথ নির্ধারিত হবে। এটি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী কৃতকর্মের নৈতিক পরীক্ষা-যা ন্যায়বিচার, মানবিকতা এবং গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার এক অগ্নিপরীক্ষা। তবে রাষ্ট্রকে অবশ্যই অভিযুক্ত হিসেবে আওয়ামী লীগের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার দুপুরে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে দীর্ঘ কয়েক মাস আগেই এই দাবিটা লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিলাম-আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তখন প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি যদি আমলে নিতেন তাহলে সরকারকে গত ২ দিনের মতো এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও গণমানুষের কথাগুলো বলেছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির রয়েছে, যে সমস্ত ফ্যাসিবাদী দল গণহত্যার জন্য দায়ী থাকে, দল হিসেবে তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসে নিষিদ্ধ করা হয়। এটার উদাহরণ সারা পৃথিবীতে আছে। জার্মানিসহ অনেক দেশেই আছে। সুতরাং দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করবে ঘোষণা দেয়ায় তাদের স্বাগত জানাই।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে স্বীকৃতি পৃথিবী দেয়? দেশের মানুষ দেয়। আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি। আওয়ামী লীগ একটি মাফিয়া শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন মাফিয়া ও ফ্যাসিবাদের চর্চা করেছে দেশের মানুষের ওপরে। তারা অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে তাদের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটিয়েছে। এরপর এটা নো মোর পলিটিক্যাল পার্টি। এটা একটি মাফিয়া পার্টি, মাফিয়া শক্তি, এটা একটা ফ্যাসিবাদী দল। সুতরাং রাজনৈতিক দলের কোনো তকমা দিতে চাই না।
সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করা ও বিচার নির্বিঘ্ন করতে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিএনপি আনন্দিত বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ফেব্রুয়ারিতে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার দাবি বিএনপি জানিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, তখন তাদের দাবি মেনে আগেই এই সিদ্ধান্ত নিলে বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত অবস্থায় সরকারকে পড়তে হত না।
তিনি বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে, বিলম্বে হলেও গতরাতে অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসীবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে ফ্যাসীবাদী দল আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গে যুক্ত সকল সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১০ ফেব্রুয়ারি আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তার হাতে দেওয়া পত্রে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার’ দাবি জানিয়েছিলাম। ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎকালেও তার হাতে দেওয়া পত্রে আমরা ‘পতিত ফ্যাসীবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল, তাদের বিচার দ্রুত করে দেশের রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার’ দাবি জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আলোচনায় আমরা স্পষ্ট করে বলেছিলাম যে, আইনি প্রক্রিয়াতেই ফ্যাসীবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ও উচিত। বিভিন্ন সভা, সমাবেশে ও আলোচনায় আমরা আমাদের এসব দাবি বারবার উত্থাপন করেছি। আমরা প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে বলেই বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের আগ মূহুর্তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে শুধু সংবিধান নয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংস্কারও করতে হবে এবং সংবিধানের মূলনীতি দলীয় মূলনীতির বাইরে বের করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিচার কার্যক্রমের একটি অংশ ইতোমধ্যে এগিয়েছে। এখন প্রয়োজন বিচারিক রোডম্যাপকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা। এতে জনগণের মধ্যে আস্থা জন্মাবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সংগঠক মনে করেন, ‘আমাদের মৌলিক সংস্কারের দিকে এগোতে হবে। মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত না হয়ে অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একমত হওয়া ফলপ্রসূ হবে না।
আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী ও সীমান্তপারের ষড়যন্ত্রকারী’ বলে আখ্যা দিয়ে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও দলের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে জনগণের যে সম্পদ লুটপাট করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করলে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হলে তা এক সময় দেশের জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়াবে। আওয়ামী লীগ এখন আর শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি সীমান্তের ওপার থেকেও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। গত নয় মাসে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে।
ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠনের কার্যক্রম সহ্য করা হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেছেন, এ ধরনের তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা শক্ত হাতে দমন করবে।
তার ভাষায় ‘নিষিদ্ধ সংগঠন কিংবা কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তির প্ররোচনায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে, আমরা তা কঠোরভাবে প্রতিহত করব।
ডিআইজি রেজাউল জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে কেউ যদি নিষিদ্ধ সংগঠনের ছায়ায় থেকে কোনো অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
জুলাই ঐক্যের টানা আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও আওয়ামী লীগ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজসহ সাইবার স্পেসে দলটির কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। রোববার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপত্রের জন্য অপেক্ষা করছি। পরিপত্র জারি হলে এসব পেজ নিষিদ্ধ করতে বিটিআরসির মাধ্যমে মেটাসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। বিটিআরসির মাধ্যমে চিঠি পাঠালে সেটি দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা করছি।’
****