আওয়ামীলীগে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

788

মিরর বাংলাদেশ : করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ ৭ মাস পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় রাজনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং করোনা মহামারির কারণে পরিবর্তিত বাস্তবতায় সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে  শনিবার (৩ অক্টোবর) সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ৩২ জন নেতাকে উপস্থিত থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে থমকে থাকা বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডেকেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য বুধবার দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশ্ববর্তী নির্বাচনি কার্যালয়ে দলের নেতারা কোভিড টেস্ট নমুনা দেন। সেখানে প্রথম দিন ৩১জন নেতার কোভিড নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে তার আগে ৫৭ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে বৈঠকের এজেন্ডা জানিয়ে চিঠি ইস্যু করে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সহযোগী সংগঠন ও সম্মেলন হওয়া জেলা কমিটিগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, সম্পাদকীয় বিভাগীয় উপ-কমিটিগুলোর অনুমোদন, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া জেলা-মহানগর-উপজেলা কমিটির দ্রæত সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালীকরণ, সভাপতিমÐলীর সদস্যদের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদনসহ জাতীয় ইস্যু ও সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
পাশাপাশি যেগুলো জেলা-মহানগর কমিটির সম্মেলন শেষে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জমা দিয়েছে, এসব কমিটি নিয়ে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী কিংবা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারীদের ঠাঁই হয়েছে, এমন অভিযোগ জমা পড়েছে। তা নিয়ে চূড়ান্ত গাইডলাইন দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
জানা যায়, সর্বশেষ গত ৯ মার্চ কার্যনির্বাহী সংসদের অনুষ্ঠিত হয়েছিল। করোনা মহামারি সংক্রমণ শুরু হলে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মকাÐ পরিচালিত করা শুরু করে দলটি। করোনা সংক্রমণের গতি কমা শুরু করলেও আস্তে আস্তে দলটির তাদের সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি শুরু করে। সে ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে গণভবনে দলটির সভাপতিমÐলীর বৈঠক অনুষ্ঠিতসহ সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা গণভবনে অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমÐলীর সভা হয়। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার শুরু করে। তাই শনিবার গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০জন নেতা উপস্থিত থাকবেন। দলটির ৮১ সদস্য কার্যনির্বাহী কমিটির মধ্যে বর্তমানে আছেন ৭৫ জন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন হওয়া ৩১টি জেলার মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ২৪টির খসড়া কমিটি কেন্দ্রে জমা পেড়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ সম্মেলন হওয়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আলোচনা হবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে দু-একটি ছাড়া প্রায় সকল সম্পাদকীয় বিভাগীয় উপ-কমিটির খসড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতরে জমা পড়েছে। ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিগুলো চূড়ান্ত করার বিষটি আলোচনা আসতে পারে।
বৈঠকে শূন্য হওয়া আসনগুলোর উপনির্বাচন ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নামও চূড়ান্ত করা হবে। ঢাকা-১৮ আসনে দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য আব্দুর রহমান প্রধান নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। এছাড়াও আগামীতে পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক প্রতি তিন মাস অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এটির খুব বেশি ব্যতয় কখনো ঘটেনি। করোনা মহামারির কারণে স্বাভাবিক সব কর্মকাÐ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা মার্চ মাসে একটি মিটিং করেছিলাম। প্রায় দীর্ঘ ৭মাস পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদের সীমিত আকারে একটি সভা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আহ্বান করেছেন। সেখানে সব মিলিয়ে ৩২জন কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’
বিপ্লব বড়ুয়া জানান, এখানে মূলত যাদের করোনা মহামারির ইনফেকশন হয়েছে কিংবা যাদের শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তাদের এই বৈঠকে যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া এবং স্থান সংকুলানও একটি ইস্যু, কারণ গণভবনে যে বসার ব্যবস্থা সেটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে বসে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। সব মিলিয়ে সীমিত পরিসরে আগামীকালের বৈঠকটি সীমিত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেও বৈঠকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে-কি কি আলোচ্য সূচি কি বা সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে? এ বিষয়ে বিপ্লব বড়ুয়া জানান, যেহেতু দীর্ঘদিন পরে যেহেতু বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নিশ্চয়ই সেখানে জাতীয় রাজনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং করোনা মহামারির কারণে পরিবর্তিত যে ব্যবস্থা এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে কিভাবে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয় এবং আমাদের ২১ তম জাতীয় কাউন্সিলের আগে-পরে আমাদের অনেকগুলি জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পরে করোনা মহামারির কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। এসব অপূর্ণাঙ্গ কমিটি কিভাবে সম্পূর্ণ করা যায় এবং সাৎগঠনিক তৎপরতা কিভাবে পরিচালনা করা যায় এবং জাতীয় রাজনীতির আলোকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অবস্থান কি হবে সে বিষয়ে আগামীকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি