আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দেশের ভেতর ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

217

মিরর বাংলাদেশ : আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দেশের ভেতর ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও হবে। কারণ একটা দেশ এত দ্রæত এত উন্নতি করুক, অনেকে তো এটা চায় না। কাজেই তারা তাদের দিক থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেই যাচ্ছে। ‘তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে, সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। ‘
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি এসব দল, এরা তো আর মাটি-মানুষ থেকে উঠে আসে নাই। এক মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে তার পকেট থেকে একটা দল বের করে দিয়েছে, সেটা নিয়ে তারা চেঁচামেচি করে যাচ্ছে। প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছে। ‘
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোজা রমজানের দিন এত মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে কেন? আমি তাও বুঝতে পারছি না। একটু তো রয়ে সয়ে বলা উচিত। কোনো উন্নতিই নাকি তারা দেখে না চোখে। ‘
দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। আর আমি যেটুকু করি বাংলাদেশের মানুষের জন্যই করি। আপনজন সব হারানোর পর এদেশের মানুষই কিন্তু আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। ‘
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই এজন্য যে, তারা পাশে ছিল বলেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি। আপনারা আছেন বলেই কাজ করতে পারছি। ‘
আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে তাদের ভোটে নির্বাচিত হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি, মানুষ আমাদের ভোট দেয়। সেটা হচ্ছে বাস্তব কথা। কাজেই এখানে আমাদের ভোট চুরি করা লাগে না, ভোটে কোনো কিছু করাও লাগে না। ‘
তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবা করে জনগণের আস্থা অর্জন করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ কিন্তু অন্যভাবে কখনো ক্ষমতায় আসে নাই। সব সময় ভোটের মাধ্যমে এসেছে। ‘
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা (বিএনপি) এখন মাইক লাগিয়ে সারাদিন বসে কথা বলে সত্য মিথ্যা দিয়ে। তাদের তো ক্ষমতায় আসাই হচ্ছে বন্দুকের নলে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। এজন্য জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। ‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ এর নির্বাচন বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। সে নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে নাই। তাদের অবস্থান তো সেখানেই নির্দিষ্ট। তারপরও আমরা দেশে উন্নয়নের কাজ করেই দেশকে এত উন্নতি করতে পেরেছি। আজকে আমরা এটাই শুকরিয়া আদায় করি। ‘
সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে দলটির সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সংগঠনটা আরও শক্তিশালী হবে, সেটা আমরা চাই। আর আগামী নির্বাচনও আমাদের সামনে, সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। ‘
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কাজেই আমরা জাতির পিতার সেই আদর্শ মেনেই দেশ এবং দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ‘
দেশের দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষ কমেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল একনেকে আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী সারা বাংলাদেশে সার্ভে রিপোর্ট পেশ করলেন। সেখানে বললেন, আমাদের দারিদ্র্যসীমা ২০০৬ সালে ৪১ ভাগ ছিল, আজকে সেটা ১৮ ভাগে নেমে এসেছে। তো আমি বললাম আরও ২/৩ ভাগ যাতে তাড়াতাড়ি কমাতে পারি, সেটা আমরা চেষ্টা করবো। আর অতি দরিদ্রের হার যেটা প্রায় ২৫ ভাগ ছিল সেটা ৫ ভাগে নেমে এসেছে। এটা মাথায় রেখে আমাদের আরও সামনে কাজ করতে হবে দেশের মানুষের জন্য। যে একটা মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। ‘
ভূমিহীন মানুষকে খুঁজে পেতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকের অঞ্চলে আপনারাও খোঁজ করবেন কোন পরিবার নিস্ব আছে কি না, ভূমিহীন আছে কিনা। কেউ ভূমিহীন থাকবে না এই দেশে। ‘
এদিকে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিদায়ী হাইকমিশনার অধ্যাপক সুদর্শন ডিএস সেনেভিরাইন বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎকালে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিনিয়োগ, কৃষি, মৎস্য, ওষুধ, সামুদ্রিক যোগাযোগ এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় আ্যাম্বাসেডর-এট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সাথে বিশেষকরে শ্রীলঙ্কার সাথে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় যা ঐতিহাসিক বন্ধন এবং ব্যাপক অভিন্নতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে যেখানে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।’
ইহসানুল করিম উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রীলঙ্কার হাই কমিশনার উভয়েই ‘সুনীল অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ শতাংশ এখন দেশীয় সম্পদ থেকে অর্থায়ন করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সারাদেশে উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেমে গিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ এই অবস্থা থেকে ফিরে আসার জন্য সংগ্রাম এবং কঠোর পরিশ্রম করছে।’বাংলাদেশে হাইকমিশনার সফলভাবে দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করায় প্রধানমন্ত্রী তাকে অভিনন্দন জানান।অধ্যাপক সুদর্শন ডিএস সেনভিরাইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
হাই কমিশনার পদ্মা সেতুর মতো মাতারবাড়ি ও পায়রার বন্দর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ কানেক্টিভিটির বড় আঞ্চলিক হাবে পরিণত হবে।
শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার বলেন, ‘তার দেশ বাণিজ্য, পর্যটন, গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ওষুধ খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।’তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের ভারসাম্য রক্ষার ফর্মুলার প্রশংসা করেন।
হাই কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি এদেশের জনগণের সাথে মিশে গিয়েছিলেন।