ছবি : আদৃতা জামান মৌলি
মিরর বাংলাদেশ :সিনিয়র সাংবাদিক, সারাবাংলা ডট নেটের বিশেষ প্রতিনিধি আসাদ জামানের কন্যা আদৃতা জামান মৌলির জন্মদিন আজ ৭ সেপ্টেম্বর । মিরর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘ শুভ জন্মদিন মৌলি ‘
মেয়ের জন্মদিনে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাংবাদিক আসাদ জামান।
নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো
Happy birthday Ma
শুভ জন্মদিন ‘মা’
—————–
পৃথিবীতে ভালোবাসা কী? ভালোবাসা বস্তুটা আসলে কেমন? কেমন হয় এর ধরন-ধারণ— সেটা বুঝেছিলাম ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর! ওই দিন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের একজন নার্স অপারেশন থিয়েটার থেকে এক নবজাতককে বের করে এনে আমার সামনে ধরলেন। বললেন, ‘দেখুন আপনার বেবিকে।’ অস্ত্র পচারের মাধ্যমে ঘণ্টাখানেক আগে ভূমিষ্ট হওয়া নবজাতকটি তখন কাঁদছিল। অবাক করা কাণ্ড! আমি তার দিকে তাকাতেই কান্না বন্ধ!! কপালে চুমু দিতে গেলাম। নার্স চেচিঁয়ে বললেন, ডোন্ট ডু ইট!
ইউনাইটেড হাসপাতাল আর দশটি সাধারণ হাসপাতালের মতো না। ভূমিষ্ট হবার পর নবজাতককে দল বেঁধে দেখতে যাওয়া, কোলে নেওয়া, ছোঁয়া, স্পর্শ করা, চুমু দেওয়ার সুযোগ ওখানে নেই। কেবল মাত্র বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি নবজাতককে দূর থেকে দেখতে পারবেন— ছুঁতে পারবেন না।
কাঁচঘেরা একটি ঘরে নবজাতকটিকে রাখা হলো। ভেতরের শব্দ বাইরে আসার কোনো সুযোগ নেই। বাইরের শব্দ ভেতরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু বিষ্ময়কর ব্যাপারটি হলো— ওই কাঁচঘেরা ঘরের দেয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেই নবজাতকটি আমরা উপস্থিতি টের পেত! চোখের পলক ঘুরিয়ে আমাকে দেখত! আমি একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলাম— ‘ভালোবাসা কারে কয়’!!
যেদিন তাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো, সেদিন থেকেই বদলে গেল আমার পৃথিবী। সে আমাকে পৃথিবীর কোল থেকে হেঁচকা টানে নিজের কোলে নিয়ে নিল। এক দেড়-মাস বয়সেই লক্ষ্য করলাম— অফিস থেকে ফেরার পর সে যেন আমাকে কী বলতে চায়! ঘরে ঢোকার পর আমার গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সে। আমি ওয়াশরুমে গেলে, সে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে থাকে, আমি কিচেনরুমে গেলে সে কিচেনরুমের দিকে তাকিয়ে থাকে, আমি ডাইনিংরুমে গেলে তার চোখ চলে যায় ডাইনিং রুমের দিকে। যেন তার কাছে যাওয়া ছাড়া, পৃথিবীর আর কোথাও যাওয়ার নেই আমার। অন্য কোথাও যাওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেলেছি আমি!
তার দাদি-নানিরা বলতে শুরু করলেন, ‘মেয়েরা একটু বাবার বাধ্যই হয়! বড় হলে এত ‘টান’ থাকবে না। আস্তে আস্তে ‘টান’ কমে যাবে।’ কই? ‘টান’ কমার লক্ষণ তো দেখছি না! দিন যত যাচ্ছে, সে ততই মা’র আসনটা পাকা করে নিচ্ছে। মাঝে-মধ্যে গভীর রাতে কপালে চুমুর স্পর্শ অনুভব করি। মনে হয় যেন স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু জেগে দেখি, এটা স্বপ্ন নয়— বাস্তব! ঘুমের ঘোরেই সে আমার কপালে চুমু দিচ্ছে। সকালে জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘তোমাকে স্বপ্ন দেখছিলাম তো, তাই!
এখন প্রায় দিনই এমন হয়— বাইরে থেকে ফেরার পর লিফট থেকে নেমেই দেখি ঘরের দরজা খোলা। সে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে! আমি তো আসার আগে ফোন দিই নি! তুমি কীভাবে টের পেলে মা— আমি চলে এসেছি? সে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই উত্তর দেয়— ‘আমি বুঝতে পারি, তুমিই আসছ’!!
কিন্তু আমি বুঝতে পারি না মা, কতটুকু পুণ্য অর্জন করলে আদৃতা জামান মৌলির বাবা হওয়া যায়! জন্মদিনে এটাই প্রার্থনা— বাবাকে যেমন করে ভালোবাস তুমি, আমার আল্লাহ যেন তেমন করে ভালোবাসে তোমাকে, ভালো রাখে তোমাকে।