গনভবনে সাংবাদিক সম্মেলন
* অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি সন্দেহজনক
* আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে ছাড় দেওয়া হবে না
* বিএনপি যা বলে সবই মিথ্যা কেউ কান দেবেন না
* সফর কালে তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি
* জনগণের কাছে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য বেশি তারাই মনোনয়ন পাবে
মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাকে বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো । ভোটে ক্ষমতায় আসলে আবার করবো। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে।
শুক্রবার বিকেলে গণভবনে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। কত বছর হয়েছে রাজনীতির? একটা স্বপ্ন ছিল- জাতির পিতার, সেটা করেছি, এখন তো কেউ না খেয়ে থাকে না।
রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণি কথা বলেন। তারা কী জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দেই? বিদ্যুত কেন্দ্র-টেন্দ্র বন্ধ করে দেই।
তিনি বলেন, আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি, প্রতিদিন একটু করে লোডশেডিং দিতে। যাতে বিদ্যুৎ থাকার গুরুত্বটা বোঝে। আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সবাই। সুবিধাটা নিচ্ছে অর্থশালীরা। এজন্য নির্দেশনা দিয়েছি, যারা বেশি ব্যবহার করবে, তারা বেশি টাকা দেবে। সেভাবে মূল্য নির্ধারণ করতে।
দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জনগণের কাছে জনপ্রিয় এবং যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি তারাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে । আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কীভাবে প্রার্থী বাছাই করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জনগণের কাছে জনপ্রিয় এবং যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি তারাই মনোনয়ন পাবে। যারা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে, তাদের বিষয়টি মাথায় রাখি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি আন্দোলন করতে চাইলে করুক। তাদের আন্দোলনে বাধা দেওয়া হবে না। তবে আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি সন্দেহজনক। নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হলে জনগণ প্রতিহত করবে।
‘বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা’ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না।’
জি-২০ সম্মেলন থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন’, বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিএনপির এই অভিযোগের কোনও উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা, এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।’
বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপরে। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস।’
এসময় প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, ‘কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি। কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এরকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্য বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।’
বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে দেশ ও দেশের বাইরে এত মাতামাতি কেন হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য অপতৎপরতা চলছে কিনা সে বিষয়েও সন্দিহান বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাক্সক্ষার তেমন কোন তফাত দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যে অন্য কিছু আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে এসে দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন?
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তো উন্নতিটা হচ্ছে। এখন এত প্রশ্ন আসে কেন সেটাই আমার কথা। একটা দেশ এত দ্রæত উন্নতি করে ফেলছে সেটাই সবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে গেল কিনা এবং কীভাবে এটাকে নষ্ট করা যায় সেই প্রচেষ্টা কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ আমারও আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের এটাও বলেছি যে, এক সময় আমাদের দেশে ছিলো গভমেন্ট বাই দি আর্মি, অব দি আর্মি ফর দি জেনারেল। আর গভমেন্ট বাই দি পিপল, অব দি পিপল, ফর দি পিপল- এটা তো আমরা স্ট্যাবলিশ করেছি। একটা নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে এসে দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন? সন্দেহ হয় রে…।
তিনি বলেন, এটাই বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে…। আসল কথা নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেয়া। যারা জানে, নির্বাচনে ভোট পাবে না তারা সব জায়গায় গিয়ে ধর্না দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ, তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থাকাকালে এতো বেশি টাকার মারিল হয়ে গেছে তারা, অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে। এর সাথে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বাস্তব অবস্থাটা বোঝে কিনা আমি জানি না, কিন্তু তারা এই একই কথা, ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একথা বলে এসেছি যে, ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম। আমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এদেশের মানুষের জন্য ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে দিয়েছি। আজকে আমাকে তো ভোটের বিষয়ে শেখাতে হবে না।
তিনি বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা সবাই তো ভোট চোর। আওয়ামী লীগের তো ভোট চুরি করা লাগে না। আমাদের তো মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। আমরা কাজের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করি।
তিনি বলেছেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। আমার মনে পড়ে না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেনি। ২০০৭ এ তত্ত¡াবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এরপর এটা কেউ চায়?
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলেন, তারা তো বারবার তারিখ দিয়েই যাচ্ছে। এই তারিখে ফেলে দিবে, ওই তারিখে ফেলে দেবে। তারা আন্দোলন করুক। জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি যদি করা হয়, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।