আলামতের ব্যালাস্টিক টেস্টের আগে বলা যাচ্ছে না মসজিদের বিস্ফোরনের মূল কারণ কী?

498

 

মিরর বাংলাদেশ:
প্রতিদিনের মতো ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ফজর, যোহর ,আসর. মাগরিরের নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় হয়েছিল ফতুল্লার তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে। একই রাতে এশার নামাজও জামায়াতে আদায় করেছিলেন প্রায় ৭০/৮০ জন মুসল্লি। সারা দিন একাধিক বার মসজিদের থাই গ্যাস বন্ধ করা ও খোলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে এশার জামায়াতের পরও একাধিক মুসল্লি থাইগøাস খুলে মসজিদ থেকে বের হয়েছেন। ঐ রাতে নামাজ শেষ ঘটে বিস্ফোরনের ঘটনা।
সোমবার বিকেলে তল্লা এলাকায় গেলে একাধিক মানুষের প্রশ্ন মসজিদে যদি এতো গ্যাস জমে থাকে তাহলে একজন মুসল্লিও টের পোলো না। ? স্থানীয় চায়ের দোকানে বসা আফজাল নামের এক যুবক বলেন, গ্যাস বেশী হলে তো মানুষে নাকে লাগতো আর বলা যেতো । কিন্তু কেউই তো নামাজের সময় কিছু বললো না। এখন মানুষ পোড়া যাওয়ার পর সবাই কত কথা বলে। কত মানুষ দেখতে আসে। তার আক্ষেপ যার স্বজন যায় সে বুঝে।
একই সময় স্থানীয় ভ্যানচালক তুহিন বলেন , বাসা বাড়িতে গ্যাস লিকেজ হলে গন্ধে টিকা যায় না আর এত বড়ো মসজিদে গ্যাসে ভরে গেছে কেউ বুঝলো না।
তুহিন ও আফজালের প্রশ্নের উত্তর পেতে সময় লাগবে আরো অনেকে । কারনে মসজিদের বিস্ফোরনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবি আই) বেশ কয়েকটি সংস্থা। তবে আগে এসি বিস্ফোরনের ঘটনা বলা হলেও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে এসি বিস্ফোরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে গ্যাস লিকেজের বিষয় নিয়েই এখনো প্রকাশ্যে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে তিতাস লাইন খনন কাজে শুরু করেছে। তারা পরীক্ষা করে দেখছে গ্যাস লাইনে কোন ত্রæটি রয়েছে কি না ? এছাড়া বিভিন্ন ভাবে চলছে তদন্ত জেলা প্রশাসন একদিনের গন শুনানী করেছে গতকাল।
প্রত্যক্ষদশীরা বলছেন, যে পরিমাণ গ্যাস জমা হলে এমন ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ঘটনা ঘটতে পারে সে পরিমাণ গ্যাস জমা হলে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারতেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, গ্যাসের কারণে এতবড় বিস্ফোরণ ঘটেছে তা বলা যাবে না। এছাড়া যদি এতই গ্যাসের রিজার্ভ থাকত তাহলে সেটা তো মাগরিবের সময়ে কিংবা এশার আগে দরজা খোলার কারণে বের হয়ে যেত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলামতের ব্যালাস্টিক টেস্টের আগে বলা যাচ্ছে না আগুনের মূল কারণ কী? গ্যাস ছাড়া অন্য কোনো দাহ্য বা বিস্ফোরক পদার্থ ছিল কিনা তা তদন্তে জানা যাবে
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, স্পেশাল এক্সপার্ট যারা আছেন তাদের দিয়ে তদন্তটা করা উচিত। বিশেষ করে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ যারা আছেন। তাছাড়া আরো যদি কোনো এক্সপার্ট থাকে সেটা সেনাবাহিনীতে যদি থাকে তাদের দিয়ে হতে পারে, র‌্যাবে যদি থাকে তাদের দিয়ে হতে পারে। তদন্তটা যেন এমনভাবে হয় যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে।
ঘটনাটি খুব কাছ থেকে দেখা মসজিদের দ্বিতীয় তলায় থাকা যুবক হাফেজ আল আমিন জানান, ফরজ নামাজ শেষ করে দোতালায় উঠতেই হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। এ সময় মসজিদ ভবন কেঁপে ওঠে।
দোতলার লোহার দরজাটি আটকে যায়। আমার সঙ্গে থাকা আরও দু’জন মিলে সজোরে লাথি মেরে দরজা খুলে নিচে দৌড়ে নামি এবং দেখতে পাই মসজিদের নিচ তলাটি অন্ধকার হয়ে আছে এবং সবাই আগুনে জ্বলে যাচ্ছে।
আমি তখন একটা কিছু দিয়ে জানালার কাচে আঘাত করে ভেঙে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে আগুনের প্রচ- ঝটকা আমার পুরো মুখমন্ড জ্বালিয়ে দেয়। বেশ কয়েকজন তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে বাইরে বের হয়ে এসে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে গড়াগড়ি খেতে থাকেন।এ সময় ৩০ থেকে ৫০ জনের কারও শরীরেই জামা-কাপড় ছিল না।
তিতাসের ৮ কর্মকর্তা কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত
নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাদের বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মফিজুল ইসলাম।
বরখাস্ত ব্যক্তিরা হলেন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা জোনের তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, ফতুল্লা জোনের সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী আইউব আলী, সাহায্যকারী হানিফ মিয়া, ওয়েয়ে ইসমাইল প্রধান।
বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার খানপুর, তল্লা এলাকায় বায়তুল সালাহ জামে মসজিদে গত ৪ সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টায় বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনায় ২৭ জন মুসল্লি মারা গেছেন এবং আরও ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া মসজিদের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে তিতাসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। মসজিদের বিস্ফোরণজনিত ঘটনা ফতুল্লা জোনের আওতাধীন এলাকায় হয়েছে। এই দুর্ঘটনা ফতুল্লা জোনের কর্মকর্তা ও কামচারীদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে হওয়ায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
গত শুক্রবার রাতে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। তিতাসের গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে জমা হওয়া গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সোমবার মসজিদের পাশেই মাটি খুড়ে লাইনের পাইপে দুটি লিকেজ পাওয়া যায়। তবে এটা গ্যাসের পানির লাইন কিনা তা জানাতে পারেনি তিতাসের কর্মচারীরা।

‘আমার মত্যুটা যেন মসজিদে হয়’

স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তানকে নিয়ে এক রুমের একটি টিনশেড ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন সাংবাদিক নাদিম আহমেদ ফিদা । সাংবাদিকতা করার সুবাধে সামান্য যা সম্মানি পেতেন তা দিয়েই মোটামুটিভাবে চলে যেত সংসার। সংসারে একমাত্র তিনিই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। বর্তমান তিনি আর জীবিত নেই। নামাজ পড়তে গিয়ে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে মারা গেছেন। রাতেই খানপুর জোড়াটাংকি সংলগ্ম মাঠে সাংবাদিক নাদিম আহমেদের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযা শেষে শহরের ডনচেম্বার এলাকায় তার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, এক রুমের একটি টিনশেড রুমে বসে তার স্ত্রী লীমা আহমেদ স্বামীর স্মৃতি মনে করে আহাজারি করছেন। আর পাশে আত্মীয় স্বজনরা বসে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
আহাজারি থামিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে লীমা আহমেদ বলেন, সাংবাদিকতা করে যে সম্মানী পেতেন তাতেই চলতো সংসার। কিন্তু সেটাও সংসার চলানোর মতো যথেষ্ট ছিল না। তাতেও কখনো কারো কাছে ঋণ বা ধার নেয়নি। না খেয়ে থাকলেও অবৈধ পথে হাঁটেননি। সত্য ভাবে বাঁচার চেষ্টা করেছেন সব সময়।
তিনি বলেন, নাদিম প্রায়ই বলতো হ্জ্ব করার টাকা তো আমার নাই তবে আমার মৃত্যুটা যেন মসজিদে হয়। তখন আমি নিজেও বুঝতে পারতাম না কেন সে এসব বলে। মসজিদের বিস্ফোরনের ঘটনায় তার অকালে চলে যাওয়ায় আমার মনে হচ্ছে আল্লাহ তায়লা তার দোয়া কবুল করেছেন।
লীমা বলেন, একমাত্র ইনকামের লোক ছিলেন তিনি। এখন ইনকামের লোক চলে গেছে। ছেলেকে নিয়ে আমি কই যামু, এখন কি করমু। এখনও তো ছেলের পড়ালেখা শেষ হয় নাই। কি কাজ করবো। কিভাবে সংসার চলবো। করোনার শুরুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে যায়। এছাড়াও আরো অনেক রোগ ছিল। এতো কিছুর পরও কষ্ট করে সংসার চলতো।
একমাত্র সন্তান প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে লিমা আহমেদ আবারো আহাজারি করতে করতে বলেন, একমাত্র ছেলে নাফি আহমেদ বার একাডেমী স্কুলের নবম শ্রেনির ছাত্র। এতো কষ্টে সংসার চলতো কিন্তু কখনো ছেলের পড়ালেখা বন্ধ করেনি। আশা ছিল ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবে। ভালো কোন চাকরি করবে। কিন্তু ওর আশা আর পূরন হলো না। আমার ছেলের পড়ালেখাই বন্ধ হয়ে যাবে।

আজানও হচ্ছে না নামাজও হচ্ছেনা

যে মসজিদ থেকে দেয়া ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙ্গতো তল্লাবাসীর গত ৩ দিন ধরে আজান দেয়া আর নামাজ পড়া কোনটাই হচ্ছে সেই মসজিদে। শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণের পর বায়তুস সালাত জামে মসজিদে সকাল থেকে রাত অবধি উৎসুক মানুষের সমাগম ঠিকই ঘটে কিন্তু মুসল্লীর সমাগম নেই।
বিস্ফোরণের কারন উদঘাটনে
মসজিদটি আলামত হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ক্ষনে ক্ষনে আসছে বিভিন্ন সংস্থার লোকজন।
জানা যায়, ফতুল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদ। প্রতি দিন ৫ বার আযানের সুমধুর ধ্বনি শুনে নামাজে আসতেন এলাকার মুসল্লিরা। কিন্তু চোখের পলকে পালটে গেলো দৃশ্যপট। একটি ঘটনা বদলে দিলো এলাকাবাসীর জীবন।
গত ৩ দিন ধরে মসজিদে ওয়াক্ত ফুরিয়ে যায়, আযান শোনা যায় না। এলাকাবাসী মসজিদের দিকে তাকাতেও ভয় পান, সবার বুকে স্বজন হারানোর আর্তনাদ।
শুক্রবার রাতে মসজিদে এশার নামাজ চলাকালীন এক দূর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ২৪জন, হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন আরো ১৩ মুসল্লি। তদন্তের স্বার্থে মসজিদের সব কার্যক্রম বন্ধ।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুর গফুর জানান, গত ৩ দিন হলো আমাদের মসজিদে নামাজ তো দূরে থাক, আযানও দেয়া হচ্ছে না। তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছে, সব বন্ধ। এলাকার মুসল্লিরাও যাচ্ছেন অন্য মসজিদে। তদন্ত না হলেই বা কি, মসজিদের যে অবস্থা হয়েছে নামাজ পড়ার অযোগ্য।
মসজিদের সেই দূর্ঘটনার ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানই তদন্ত কমিটি গঠন করে ফেলেছে। এই তদন্তের আলামত রক্ষার স্বার্থে মসজিদের সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না।
গফুর মিয়া আবেগঘণ কন্ঠে বলেন, যতোদিন তদন্ত চলছে, ততদিন তো আর সংস্কার করতে পারবো না। এই কয়দিন এলাকাবাসী না হয় অন্য কোথায় পড়ুক নামাজ।
তিনি দোয়া চেয়ে বলেন, আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমাদের মসজিদে যেন আবার আজান হয়, আল্লাহু’ আকবর ধ্বনির প্রতিধ্বনি হয় মসজিদের দেয়ালে।

জেলা প্রশাসনের গণশুনানী : ১৮ জনের সাক্ষ্য
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতায় গণশুনানীতে ১৮ জন প্রত্যক্ষদর্শী অংশগ্রহণ করেছেন। তারা সেদিনের ঘটনার বর্ণনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানিয়েছেন। সোমবার বিকেলে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন ওই তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি।
তিনি বলেন, ১টা থেকে লোকজন আসতে শুরু করে। বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ১৮ জন গণশুনানীতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও যারা আসবে তাদের প্রত্যেকেরই কথা আমরা শুনবো। তারা মূলত ঘটনার বর্ণনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে এগুলো বলা যাচ্ছে না। একদিনের জন্যই এ গণশুনানীর আয়োজন করা হয়।
তিনি আরো বলেন,তদন্তের অগ্রগতি আছে। তবে এখনও আমরা কিছুই বলতে পারছি না। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন তারা রিপোর্ট দেওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে। এছাড়াও আমরা এলাকাবাসী, মসজিদ কমিটির সঙ্গেও কথা বলেছি। তারপরও যারা সেখানে কথা বলতে চাইনি কিংবা কেউ স্বেচ্ছায় কিছু জানাতে চায় তাদের জন্য এ গণশুনানীর ব্যবস্থা করা হয়। যাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কেউ না বলতে পারে আমাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। কিন্তু ঘটনায় অনেকেই মারা গেছেন। যারাও বেঁচে আছেন তারা গুরুত্ব অবস্থায় আইসিইউতে। দুইএকজন সুস্থ হলে আমরা তাদের সঙ্গেও কথা বলবো। তারপর আমরা প্রতিবেদন জমা দিবো। আমরা সবার কথা শুনছি। নির্দিষ্ট সময়েই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা বিবিকে প্রধান করে ৫সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন।

গ্যাস লাইন ড্যামেজ করে মসজিদ তৈরী হয়েছে কিনা তদন্ত হচ্ছে : তিতাসের জিএম

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল ওয়াহাব তালুকদার বলেছেন, সরেজমিনে আমরা দেখতে চাই মসজিদের নিচে গ্যাসের লাইন আছে কিনা। যদি থেকে থাকে তাহলে মসজিদ তার কতটুক দূরে। সেখান থেকে গ্যাস বের হয়েছে কিনা। মসজিদ তৈরির সময় আমাদের লাইনটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তৈরি করা হয়েছে কিনা। এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,আমাদের যে লাইনে গ্যাস আছে সে লাইনের কন্ডিশন কতটুকু ভালো বা খারাপ সেটাও দেখার বিষয় আছে। ওই লাইনটা বেশ পুরোনো লাইন, অন্তত ৩০ বছর পুরোনো। যেখান থেকে গ্যাস বের হচ্ছে সেই লাইনের ব্যতিরেকে
অন্য জায়গায় যদি লাইন ভালো থাকে তাহলে আমরা সাবাই বুঝতে পারবো মসজিদ তৈরির সময় ফাউন্ডেশন করতে গিয়ে আমাদের পাইপ লাইন ড্যামেজ করে মসজিদ তৈরি করেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের জানিয়েছে কিনা। আর ড্যামেজটা কীভাবে হয়েছে তা চিহ্নিত করার জন্যই আজ আমরা মাটি কেটে সেটা সরেজমিনে দেখতে চাচ্ছি।
তিতাসের এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নকশা অনুযায়ী গ্যাস লাইন আছে কিনা আমরা তা দেখছি। এখানে আশেপাশে যে গ্যাস লাইনগুলো দেয়া হয়েছে তা ১৫-২০ বছর আগে দেয়া হয়েছে। মসজিদের উত্তর পাশে আমরা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করবো, ফাইলগুলো আমরা দেখবো। কানেকশনগুলো কীভাবে হয়েছে তাও দেখবো। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি মসজিদটি ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় এবং সড়কটি সিটি কর্পোরেশনের জায়গায়। এখানে সীমানায় সমস্যা আছে। আগে আমাদের লাইন হয়েছে পরে মসজিদ। সবাই জানেন, মসজিদের পেছনের অংশ প্রথমে হয়েছি এবং সামনের অংশ পরে। আমরা যে মাটিটা কেটেছি, তার দুইটা লেয়ার বের করেছি এখন আমরা এন্টি লেয়ার পেয়েছি। তারপর আরেকটা এন্টিলেয়ার আমরা পেয়েছি। সেক্ষেত্রে আমরা পুরাটা খুড়ে দেখি তারপর নির্দিষ্ট করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, নকশার উপরে মসজিদ বা স্থাপনা হলে তার দায়িত্ব তিতাস নেবে। তিতাসের ডিস্ট্রিবিউশন অনেক বেশি। সেক্ষত্রে স্থানীয়রা তিতাসকে এ বিষয়ে ইনফর্ম করে। এই ধরণের কোনো ইনফরমেশন আমাদের তিতাস অফিসে নাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিতাসের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, গত শনিবার মসজিদ কমিটির সভাপতির সাক্ষাৎকার দেয়ার পর আমরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এ ঘটনার তারা লিখিত কোনো অভিযোগ করেছিলেন কিনা। তারা তা করেনি। সে নিজে গিয়ে তিতাসকে জানিয়েছে কিনা। সে বলেন, আমি জানাইনি। সাধারণ সম্পাদকের কাছে শুনেছি, উনি নাকি টেলিফোনে ইনফর্ম করেছেন। এখন সাধারণ সম্পাদক কোথায়? সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। এখন সাধারণ সম্পাদক যদি কোনো নাম্বার বা তিতাসের লোকের সন্ধান দেন বা মসজিদ কমিটি কোনো ইনফর্মেশন দেন তাহলে আমরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হবো। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাচ্ছি, মসজিদ কমিটি লিকেজ সারানোর জন্য কাকে বলেছে। আমাকে ওই ব্যক্তির নাম দিন আমরা চরম প্রশাসনিক বব্যস্থা নেবো