মিরর বাংলাদেশ : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আগামী ফেব্রূয়ারি মাস দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
শনিবার সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার এইচএসসি’র ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়েছে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে। এসএসসি থেকে ৭৫ শতাংশ এবং জেএসসি-জেডিসি থেকে ২৫ শতাংশ সমন্বয়ের মাধ্যমে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। সবাই যদি এটি মেনে চলেন তাহলে আমরা আরেকটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো এবং খুব দ্রæতই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবো। আগামী মাসটা দেখবো। কারণ মার্চ মাসেই এই করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। আমরা ফেব্রæয়ারি মাস নজরে রাখবো।যদি অবস্থা ভালো থাকে পরবর্তীতে আমরা সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেব, আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে যেতে পারে সে ব্যবস্থাটা আমরা নেব, এ ধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের আছে। আমরা যত দ্রæত পারি এ ব্যবস্থাটা নেব।”
বক্তব্যে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। মহামারির মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সুরক্ষার কথা ভাবতে হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড সংক্রমণে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়ার জন্যই ব্যবস্থাগুলো আমরা নিতে বাধ্য হয়েছি।
‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা যথাযথ চেষ্টা করে যাচ্ছি। হয়ত আমরা যখন আরও বেশি সুরক্ষিত করতে পারব, অর্থাৎ এটা সারা বিশ্বব্যাপী একটা মহামারিৃএটা থেকে যখন মানুষ মুক্তি পাবে তখন আবার যথানিয়মে ক্লাস হবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে পারবে। যারা প্রমোশন পাবে তারা আগামীতে পড়াশোনা শুরু করতে পারবে, এবং পরবর্তী পরীক্ষার উপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে।’
নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রকাশিত উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) এবং সমমানের ফলাফল নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই নিরর্থক আলোচনা কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেবে, যারা ইতোমধ্যেই একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ব্যাপক মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফলাফল সম্পর্কিত নেতিবাচক মন্তব্যগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করবে, যারা এ ধরনের মন্তব্য করছেন আমি তাদের এর থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলছেন। তবে আমি মনে করি, অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য বা তিক্ততার কথা না বলাই ভালো।’
‘এমনিতেই তারা (শিক্ষার্থীরা) স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে, যা তাদের জীবনে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের ফলাফল এবং এর পদ্ধতি নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন যা শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করবে,’ বলেন তিনি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
অনেকেই সংবেদনশীল নানা কথা বলছেন। তবে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে তখন যদি কেউ সংক্রমিত হতেন, তাহলে সেই দায় কে নিত? যারা ফলাফল তৈরির নতুন পদ্ধতির সমালোচনা করছেন তারা দায়িত্ব নিতেন?’ প্রশ্ন রাখের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পরীক্ষা নেয়ার সময় কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে সমালোচকরা তখন সরকারের বিরুদ্ধে নতুন সমালোচনা শুরু করতেন।