এখনো ডুবে আছো ফতুল্লার লালপুর

315

নিজস্ব প্রতিবেদক

পানিতে এখনো ডুবে আছে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের লালপুর- পৌষাপুকুর এলাকা। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোন উদ্দ্যেগ না নেয়ায় কমেনি পানি বন্দি লাখ লাখ মানুষের দূর্ভোগ।কোমর পানির নিচে তলিয়ে আছে রাস্তা ঘাট।প্রতিটি বাড়ীতেই কোমর সমান পানি।নিদারুন কস্টের মাঝে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

সোমবার(৫জুলাই) দুপুরে সরজমিনে লালপুর- পৌষাপুকর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পানিবন্দি মানুষের দূর্ভোগের চিত্র।বিশুদ্ধ পানির জন্য তাদের ছুটতে হচ্ছে বহুতল ভবনগুলোতে।কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী এলাকার পরিচিতজনদের বাসা বাড়ীতে। টিন শেড,বেড়া- টিনের এক তলা বাড়ীতে যাদের বসবাস তাদের কস্টের মাত্রা সবচাইতে বেশী।অধিকাংশ বাড়ীর আসবাবপত্র পানির নিচে তলিয়ে গেছে কোন রকমে ঘুমাবার জন্য ইট দিয়ে খাট উচু করে তাতেই জড়োসড়ো হয়ে রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে অনেককেই। গোসল কিংবা গোসলের জন্য তাদের কে ছুটে যেতে হচ্ছে বহুতল ভবনে বসবাস করা পরিচিত জনদের বাসায় নতুবা আশপাশের এলাকায় বসবাস করা নিকটাত্মীয় স্বজনদের বাসায়। অনেকেই ভাড়া বাড়ী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অনত্র। বেশ কয়েকটি পরিবার কে দেখা যায়, ভ্যান গাড়ীতে করে আসবাবপত্র নিয়ে ভাড়া বাসা ছেড়ে অনত্র চলে যেতে।দোকানগুলোর সাটার লাগানো।পানিতে ডুবে আছে দোকান গুলোর অর্ধ সাটার। কয়েকটি চায়ের দোকান খোলা থাকতে দেখা গেলেও কাস্টমার দেকা যায়নি তেমন একটা। ইট দিয়ে দোকানের সুকেসগুলো উচু করে এবং সুকেসের উপর চুলা বা স্টপ বসিয়ে চা জ্বাল দিতে দেখা গেছে।

যে রাস্তায় এক সময় রিক্সা,অটোরিক্সা,ইজিবাইক চলতো,পায়ে হেটে নিজ নিজ গন্তব্য স্থলে ছুটে চলতো হাজার হাজার মানুষ সেই রাস্তায় আজ ছুটে চলছে নৌকা,ভ্যান গাড়ী।সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে পানি একই সাথে বাড়ছে নৌকার সংখ্যা।বর্তমানে লালপুর- পৌষাপুকুর রাস্তায় ১৯ টি নৌকা চলাচল করছে।শুরুর দিকে ভ্যান গাড়ী ১৫- ২০ টির মতো দেখা গেলেও তা নেমে বর্তমানে তিন থেকে চারটি ভ্যান চলাচল করছে।কারন হিসেবে জানা যায়, কিছু জায়গায় পানি কম তবে অধিকাংশ জায়গাজুড়ে পানি এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে ভ্যান গাড়ীর পুরোটাই পানির নীচে ডুবে যায়।
কথা হয় পৌষাপুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় যুবক আসলামের সাথে,তিনি বেশ ক্ষোভ নিয়েই বলেন,জনপ্রতিনিধিহীন এলাকায় বসবাস করছেন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থাকলে অবশ্যই তাদের দূর্ভোগ লাগবে এগিয়ে আসতো।বছরের অধিকাংশ সময় তাদের কে জলাবদ্ধতার মাঝে থাকতে হচ্ছে।তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের দূর্ভোগটা অনেক বেশী মাত্রায় রুপ নিয়েছে।গোসল,বাথরুম করতে হলে অনেককেই যেতে হয় পাশের এলাকার নিকটাত্মীয়দের বাসায় কিংবা পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবনে পরিচিতজনদের বাসায়।তিনি আরো বলেন ফতুল্লা বাজারে তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। একবার করে যেতে লাগো ৪০ টাকা আসতে লাগে ৪০ টাকা।সে হিসেব মতে তার প্রতিদনি তার যাতায়াত খরচ হচ্ছে ২৪০ টাকা।তাই তিনি সকালে বের হন কাজ শেষ করে একবারে রাতে বাসায় ফিরেন।দুপুরের খাবারটা বাইরে খেয়ে নেন।আর যাদের নৌকা দিয়ে যাবার মতো টাকা নেই তারা কোমর পানি মারিয়ে পায়ে হেটে প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে বলে তিনি জানান।
সামছুল নামক একজন জানায়,তাদের জীবনটা এখন অভিশপ্ত হয়েছে।বছরের ছয় মাসই তাদের কে পানির নিচে থাকতে হচ্ছে।চেয়ারম্যান,ইউনো(নির্বাহী কর্মকর্তা),সেনাবাহিনী সরকারদলীয় নেতারা এসে তাদের এখানে এসে জলাবদ্ধতা নিরসনে অতিদ্রুত সমাধানের আশ্বাসের কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।জলাবদ্ধতার নোংরা পানি মাড়িয়েই তাদেরকে প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে।

ব্যান্ডেজ ভাঙ্গা হাত নিয়ে ভ্যান গাড়ীতে চড়ে ডদক্তারের নিকট যাওয়া মধ্যবয়স্ক এক নারী জানায়,ছয় মাস তাদপরকে জলাবদ্ধতার মাঝে থাকতে হয়।তবে এবারের অবস্থা ভয়াবহ।যাদের টাকা পয়সা আছে তাদের ঘর থেকে বের না হলেই চলে।আর তাদের মতো যারা গরীব তাদের অনেকেরই ঘরে আজ খাবার এক বেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। রিক্সা না চলায় বহু পরিবার না খেয়ে যাপন করছে।তাদের খবর কেউ নিতে আসেনা।
স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান জুয়েল জানায়, ময়লা-দূর্গন্ধ পানি মাড়িয় প্রতিদিন চলতে হচ্ছে তাদের কে। প্রতিটি বাড়ীর ভিতরে পানি ডুকেছে।পানি সেচতে সেচতে দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যায় তাদের।তাদের এলাকায় চর্মবাহিত রোগীদের সংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।মরার উপর খড়ার গায়ের মতো গত কয়েকদিনের টানা বৃস্টি তাদের কস্টকে আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে।তিনি আরো বলেন,নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এক,এম শামীম ওসমানের নির্দেশে ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেজারের ব্যবস্থা করেছেন।তিনি সহ ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা- কর্মীরা মীর সোহেলর নেতৃত্বে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন।আগামী দু- একদিনের মধ্য ড্রেজার চালু হবে।আর তা চালু হলে জলাবদ্ধতার অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পাবে লালপুর -পৌষাপুকুর বাসী।
নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী বলেন,নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের অভিবাভক মাননীয় সংসদ সদস্য একে এম শামীম ওসমানের নির্দেশে তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেজারের পাইপ বসানো হয়েছে। ড্রেজার লাগানো হচ্ছে।ড্রেজার দিয়ে পানি টেনে তা নদীতে ফালানো হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে লালপুর-পৌষাপুকুর বাসী জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে বলে তিনি জানান।