এখন ইসলাম ধর্মের কথা বলে নারীদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

194

বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩’ পদক পেলেন পাঁচ বিশিষ্ট নারী

মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন ইসলাম ধর্মের কথা বলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারীদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না। নারী ক্ষমতায়নে ও নারী জাগরণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বেগম রোকেয়ায় প্রত্যাশা অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম পেরেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে মেয়েরা আর পিছিয়ে নেই, রাজনীতি থেকে খেলাধুলা সবক্ষেত্রে নারীরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। সাংবাদিকতা থেকে শিল্পকলা সবখানেই নারীরা সফল
শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এসময় পাঁচ বিশিষ্ট নারী ও তাদের স্বজনদের হাতে পদক তুলে দেন সরকারপ্রধান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩’ পদকপ্রাপ্ত পাঁচ বিশিষ্ট নারী হলেন- নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম (মরণোত্তর), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ডা. হালিদা হানুম আখতার, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা (মরণোত্তর), নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার ও পল্লী উন্নয়নে রনিতা বালা। পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম স্বর্ণ নির্মিত একটি পদক, পদকের রেপ্লিকা, প্রত্যেককে চার লাখ টাকার চেক ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
এসময় একটি আফসোসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা আফসোস রয়ে গেছে আমার, খুব ইচ্ছা ছিল একজন নারীকে আমি প্রধান বিচারপতি করে যাবো। কিন্তু আমাদের সমাজে এত বেশি কনজারভেটিভ, এগুলো ভাঙতে সময় লাগে। সেজন্য করতে পারেনি। এ আফসোসটা থেকে গেল।
‘জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এটাই ছিল পাকিস্তানের আইন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সমস্ত আইনগুলো পরিবর্তন করেন। এই আইন পরিবর্তনের পর থেকে আমাদের দেশের মেয়েরা জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দিতে পারছে,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি সরকারের এসে দেখি আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো নারী জজ নেই। তখন আমি উদ্যোগ নিলাম, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বলেছিÍ উচ্চ আদালতে কোনো জজ নিয়োগ দেওয়া হলে তাতে যদি কোনো নারী জজের নাম না থাকে, আমি কখনো ওই ফাইল সই করব না, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব না। সেই থেকে যাত্রা শুরু।
তিনি আরও বলেন, বেগম রোকেয়ার সময় মুসলমান মেয়েরা ঘরে অবরুদ্ধ থাকতো। লেখাপড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে তার স্বামী সবসময় তাকে সহযোগিতা করেছেন, তার ভাই তাকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি নিজের প্রচেষ্টা উর্দু, বাংলা, আরবি, ইংরেজি, শিক্ষা যেগুলো গ্রহণ করা সেগুলো তার স্বামীর কাছ থেকে শিখেছেন। স্বামীর কাছে আক্ষরিক জ্ঞান এবং বই পড়ার শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার ভাইয়ের কাছ থেকেও একটি অনুপ্রেরণা পান। তার স্বামীর নামে একটি স্কুল তৈরি করেন। স্কুল তৈরির পরও তাকে অনেক বাধা বিপত্তি মোকাবিলা করতে হয়। কারণ, স্বামীর নামে যে স্কুল করেছিলেন সেখানে ছাত্রী পড়ানো যেত না। তিনি নিজের বাড়ির বাইরে গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন। এটা করতে গিয়ে অনেক পরিবারের বাধা এবং অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। তিনি দমে যাননি কখনো। তার সাহসী ভূমিকা সব সময় আমরা স্মরণ করি।
সরকার নারীর ক্ষমতায়ন এবং অধিকার নিশ্চিত করতে সম্ভব সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে।’ সরকারের নেওয়া নানান উদ্যোগের কারণে নারীরা কোনও সেক্টরেই পিছিয়ে নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে, অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে অনুযায়ী নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তার সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছি, তাদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা সবসময় চেষ্টা করে আসছি, নারীরা যাতে তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, যা তাদের ক্ষমতায়িত হতে সাহায্য করবে।
নারীরা বিচারক ও ব্যারিস্টার হবেন, রোকেয়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীরা নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে সব সুযোগ কাজে লাগাতে পারায় তার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের নারীদের বিচরণ সব জায়গায়। যেমন তারা রাজনীতিতেও আছে, অর্থনীতিতে আছে, পররাষ্ট্রনীতিতে আছে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে, সশস্ত্র বাহিনী, সেই সঙ্গে বর্ডার গার্ড সব ক্ষেত্রে কিন্তু নারীদের প্রবেশের সুযোগ আছে এবং তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। সাংবাদিকতা, তথ্য ও প্রযুক্তি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সকল ক্ষেত্রে এখন মেয়েরা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য সুনাম নিয়ে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, এশিয়ার শীর্ষে এখন বাংলাদেশের নারীরা, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে গর্বের বিষয়। জেন্ডার সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে আজ সপ্তম, আমাদের স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের ৭০ শতাংশ নারী, তৈরি পোশাক শিল্পে ৮০ শতাংশের বেশি নারী কর্মী।
তিনি বলেন, আমাদের দেশটাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। যেখানে নারী পুরুষ সকলকে সমানভাবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ছেলে মেয়ে উভয়ই যেন সমানভাবে দক্ষতা অর্জন করতে পারে সেই পরিকল্পনা নিয়েই তার সরকার এগিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই নারী স্বাবলম্বী হোক। নারীরা স্বাবলম্বী হলে পরিবার ও সমাজে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়। সব জায়গায় তার কথার মূল্যায়ন হয়। নিজের মায়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা বেশিরভাগ সময় জেলে ছিলেন। সংসার চালানো, দল সুসংগঠিত করাসহ সব কাজই আমার মা করেছেন।