মিরর বাংলাদেশ : দেশের জনগণ আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে তার দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। সবসময় জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি। কখনোই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না।’
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এ সময় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন আইন পাস হয়। তারপর সেই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। বর্তমান কমিশনের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতাও রয়েছে। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ভিত্তি নেই। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম তো ক্যান্টনমেন্টে হয়েছে।’
সামাজিক অর্থনৈতিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের এ পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে। দেশে অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্থিতিশীলতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা ইস্যুও উঠে আসে। যুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এ যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া। কারণ এর ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে এ বিরোধের মীমাংসা হতে পারে। যুদ্ধ কখনোই মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তারা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মাদকপাচার, মানবপাচার, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসহিংসতার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কারণে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয়দের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে। তাই এখন তাদের সেখানে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আয়সংস্থানমূলক কাজসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। আমরা কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।’
এসময় ভাসানচরে সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রæত ও অনুকূল পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে বলেন, ‘মিয়ানমারে আবার কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বসলে বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে। তবে বাস্তুচ্যূত এ জনগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’ একইসঙ্গে মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
সাক্ষাৎকালে ডেরেক শোলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তার সফর দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’
এদিকে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অসচ্ছল প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ঘর ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তরের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করবে না। তিনি আজ পাঁচ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাঁচ হাজার বাড়ির চাবি হস্তান্তর উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তরুণ প্রজন্মের সামনে তা তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সারাদেশের অনাবিস্কৃত বধ্যভূমিগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো সংরক্ষণের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাশাপাশি এই বাংলাদেশের ওপর আর কারো কালো থাবা যেন না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সকর্ত থাকারও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে বা মানবেতর জীবনযাপন করবে, অন্তত আমি জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় থাকতে এটা কখনো হতে পারেনা।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা এর সাথে যুক্ত ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তা এখন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ঘর-বাড়ি নাই এবং মানবেতর জীবনযাপন করছিল সেটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর-বাড়ি তৈরি করে তাদের জীবন-জীবিকা এবং চিকিৎসা-যাতায়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ পাঁচ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার মাঝে বীর নিবাস হস্তান্তর করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর নিবাসের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান রয়েছে। আশা করি এ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। যদিও করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে আমাদের খুবই হিসেব করে চলতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেন খাদ্যের অভাব না হয় সেজন্যই আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। সেজন্যই আমার এই আহ্বান যে যেখানে পারেন প্রত্যেকেই কিছু না কিছু উৎপাদন করেন। নিজে খান এবং অন্যকেও খাওয়ান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ আর থামাতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা গড়ে তুলব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশের ওপর যেন আর কারো কালো থাবা না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে এই দেশ রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীন করেছি। এই দেশকে আমরা সোনার বাংলাদেশ হিসেবে ইনশাল্লাহ গড়ে তুলব।