ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ‘ইতিহাস বিকৃত’ করে অপরাজনীতিতে নেমেছে : মির্জা ফখরুল

623

মিরর বাংলাদেশ : ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ‘ইতিহাস বিকৃত’ করে অপরাজনীতিতে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপতৎপরতা জাতি গভীর ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ১৫ আগস্ট সরকার প্রধান কর্তৃক  জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার মাধ্যমে সেই অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু করা হলো।’

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে জড়িত করে সরকার প্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

এখন আর বর্তমান সরকারের কোনও রাজনীতি নেই বলে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অপরাজনীতিতে নেমেছে। আমরা জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে নিয়ে এহেন ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। তার চরিত্র হননের অপপ্রয়াসে আপামর জনগণ দারুণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার কোটি কোটি ভক্ত ও অনুরক্তরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত এই ষড়যন্ত্রকে শুধু ঘৃণাভরে প্রত্যাখানই করছে না, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার দৃপ্ত শপথ ঘোষণা করছেন।’

১৫ আগস্টের ঘটনার প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কারা হত্যা করেছে, সেটা শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে নির্ধারিত হয়ে গেছে। এই হত্যার জন্য কোথাও তাকে দোষারোপ করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি। ওই মামলায় জিয়াউর রহমান কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কাউকে আসামিও করা হয়নি। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের মন ভরছে না। এখন তারা জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৫ আগস্ট হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মেজর (অব.) মাজেদকে দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসন ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকারের ‍মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একইসঙ্গে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট হত্যার আসামিদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্যকর করার পর্ব প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এমতাবস্থায় আইনিভাবে এই ধরনের বক্তব্যের কোনও সাক্ষ্যমূল্য নেই। এই পদক্ষেপ বরঞ্চ সংঘটিত বিচার প্রক্রিয়া ও রায়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করে তুলতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মাজেদের কথিত  জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে— ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ সালের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি রেফারেন্স দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে সরকার প্রধান নিজেও  জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ ৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমানের স্বাক্ষরে।’

১৯৭২-৭৫ সালে সিরাজ শিকদারসহ হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হত্যার মাধ্যমে এদেশে শুরু হয়েছিল বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের ধারা বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি আরও বলেন, ‘জাসদ গণবাহিনীর হাজার হাজার নেতাকর্মী সেসময়ে শিকার হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নিষ্ঠুর রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের। আজেও ১৯৭২-৭৫ সালের সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যার সংস্কৃতি চলছে। গত ১১ বছরে বর্তমান সরকারের আমলে বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার হয়েছেন প্রায় তিন হাজার জন। একদিন সব বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার ঠিকই হবে এদেশে।’

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পুনরায় ক্ষমতাসীন দলকে ইতিহাস বিকৃত করার এই ঘৃণ্য তৎপরতা পরিহার করে দেশ ও জাতির স্বার্থের জাতীয় ঐক্যের পথে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।