মিরর বাংলাদেশ :
ঈদের এখনো প্রায় দেড় সপ্তাহের বেশী সময়বাকীর এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জে কেনা বেচা শুরু হয়েছে কোরবানীর পশু। তবে এসব পশু কোরবানীর হাটে নয় বিভিন্ন খামারে গিয়ে নিজেদের পছন্দ মতো পশু কিনে রাখছেন ক্রেতারা। খামার থেকে ঈদের ১/২ দিন আগে কোরবানীর পশু পৌছে যাবে ক্রেতার কাছে। ফলে নারায়ণগঞ্জের গরুর খামারগুলোর এখন প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ক্রেতারা।
কোরবানীর হাটে গিয়ে পশু কেনার ঝামেলা এড়াতে আগাম পশু কিনে রাখছেন এমনটাই জানালেন সিদ্ধিরগঞ্জে আরকে এ্যাগ্রো ফার্মে আসা ক্রেতার নিজাম উদ্দিন। শুক্রবার বিকেলে তিনি নয়াদিগন্তকে জানান, কোরবানী হাটে গিয়ে গরু কেনার ঝামেলা অনেক। তাই আগে ভাগেই এখনো এসে গরু কিনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পছন্দ হলে গরু কিনে রেখে দিবো। ফার্মের মালিকপক্ষ ঈদের আগে আমাদের গরু পৌছে দিবেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে কৃষক ছাড়াও বড় শিল্পপতিরা গরু, মহিষ ও ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন। কোরবানীর ঈদ কেন্দ্রিক ছাড়াও বেশির ভাগ খামারে সারা বছর ব্যপী চলে পশু বেচা কেনা। তবে এক বছরের প্যাকেজে অনেক খামারে পশু মোটাতাজা করা হয় । এবছর নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ১লাখ গবাদিপশু কোরবানীর টার্গেটের কথা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি উপজেলায় ১০ হাজার খামারি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার রেজিস্টার্ড ও বাকিগুলো মৌসুমি খামারি। এই খামারগুলোতে ৬০ হাজার গরু-মহিষ ও ৪০ হাজার ছাগল-ভেড়া পালন করা হচ্ছে।
এর মধ্যে থ্রিস্টার ফার্ম হাউস, আরকে অ্যাগ্রো, আমানা ক্যাটেল, তানিয়া ক্যাটেল, খন্দকার ক্যাটেল, ছায়েদ আলী অ্যাগ্রো ও প্রার্থনা অ্যাগ্রো অন্যতম। এসব খামারে ৩০০ থেকে ৩৯৯ কেজি ওজনের গরু প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, ৪০০ থেকে ৪৯৯ কেজির গরু ৫৫০ টাকা, ৫০০ থেকে ৯০০ কেজির গরু ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মহিষ ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছাগল-ভেড়া সরাসরি দর-কষাকষির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।
কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা সর্বশেষ পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। খামারের কর্মীরা কেউ গরুকে খাবার দিচ্ছেন, কেউ বা গোসল করাচ্ছেন, আবার কেউ গরম থেকে বাঁচাতে পশুগুলোকে পাইপ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন। খামারগুলোতে অনেক ক্রেতা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দরদাম করছেন। কেউ বা ওজনে কেনার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন। আবার কেউ ঠিকা ক্রয় করতে চাচ্ছেন।
খামারিরা জানান, গরুকে খৈল, ভুসি, সাইলেজ, ভুট্টা ও ঘাস খেতে দেওয়া হয়। কোনো ধরনের রাসায়নিক খাবার, হরমোন কিংবা ইনজেকশন দেওয়া হয় না। তবে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
আমানা ক্যাটেলে খোজ নিয়ে জানা গেছে , শাহীওয়াল, দেশাল ও ছোট প্রকৃতির গরুর আধিক্য। খামারের ব্যবস্থাপক রাকিব খান বলেন, ‘অতি গরমে এ বছর গরুর গ্রোথ (বৃদ্ধি) ভালো না হওয়ায় মুনাফা মার্জিনাল (সামান্য) হবে।’ তিনি জানান, দেশি প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশাল ৫২০ টাকা, শাহীওয়াল ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তানিয়া ক্যাটেলের তত্ত¡াবধায়ক সালাউদ্দিন বলেন, ‘অনেক ক্রেতা খামারে আসছেন, গরু পছন্দ করছেন। অনেকে ওজনে কিনছেন, আবার অনেকে ঠিকা কিনছেন।’ তিনি জানান, গরু কিনে লালন-পালন করার সমস্যার কারণে অনেকে খামারেই গরু রেখে যাচ্ছেন। হয়তো ঈদের দু-এক দিন আগে এসে নিয়ে যাবেন। যাঁরা ওজনে কিনছেন, তাঁরা নেওয়ার আগে আবার ওজন দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাবেন। আর যাঁরা ঠিকায় কিনছেন, তাঁদের ব্যাপারে ওজনের কোনো বিষয় নেই
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আক্তার জানান , নারায়নগঞ্জে ১০ হাজার খামারি আছেন, যাঁরা এই বছর কোরবানিতে প্রায় ৬০ হাজার গরু, মহিষ ও ৪০ হাজার ছাগল-ভেড়া বিক্রি করবেন। আমরা খামারগুলো সরাসরি মনিটরিং করছি।