গ্যাস সংকটে নারায়ণগঞ্জের ৫শ’ শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যহত

280

মিরর বাংলাদেশ : গ্যাস সংকটে নারায়ণগঞ্জের শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। দিনের বেলায় উৎপাদনের সময়টাতেই গ্যাস সরবরাহ থাকছে না। আবার রাত ১১টার পর গ্যাস পাওয়া গেলেও কাঙ্খিত প্রেসার পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারনে নারায়ণগঞ্জের শিল্প মালিকরা ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। তারা বলছেন, স্পিনিং, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং এবং টেক্সটাইল মিলসহ প্রায় ৫শত শিল্প কারখানা গ্যাস সংকটের কারনে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম গোলাম ফারুক বলেন, আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে যে পরিমান গ্যাস সরবরাহ পাই সেটাই সরবরাহ করে থাকি। বিষয়টিতে আমাদের কোন হাত নেই। আগে শীতকালে গ্যাসের কিছুটা সঙ্কট দেখা যেতো বা সরবরাহ অনিয়মিত হতো। কিন্তু এখন শীতকাল নয়। বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ের। তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছু করার নেই।
গ্যাস সঙ্কটে ক্ষোভ প্রকাশ করে নীট গার্মেন্ট ব্যবসায়িদের সংগঠন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের শিল্প মালিকরা কাঙ্খিত উৎপাদন করতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়িদের লোকসান গুনতে হচ্ছে শুধুমাত্র গ্যাস সঙ্কটের কারণে। নারায়ণগঞ্জে পাঁচশতাধিক শিল্প কলকারখানার অবস্থা এখন শুধু গ্যাস সংকটের কারণেই বেহাল।
এদিকে শিল্প কারখানায় গ্যাস সঙ্কট নিরসণে আমদানী করা ন্যাচারাল লিকুয়িড গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হলেও এর সুফল পাচ্ছেনা নারায়ণগঞ্জ জেলার শিল্প কারখানা ।
এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে গত বছর দুই দফায় বাণিজ্যিক গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। মূল্য বৃদ্ধি হলেও নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ থেকে বঞ্চিত রয়েছে নারায়ণগঞ্জের শিল্পখাত।
ব্যবসায়িরা বলছে, গ্যাস ব্যবহার না করেও গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্যাস সঙ্কটের কারণে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় অর্ডার বাতিল হচ্ছে অথবা এয়ার যোগে পণ্য ডেলিভারী দিতে হচ্ছে। এতেও শিল্প মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে কাজ না করলেও শ্রমিককে বেতন দিতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়িরা বলছেন, আগে গ্যাসের প্রতি ইউনিটের মূল্য ছিল ৭ টাকা ৬৫ পয়সা। ২০১৮ সাল থেকে জাতীয় গ্রিডে আমদানী করা এলএনজি যুক্ত হয়। এরই মধ্যে গত বছরই দুই দফা গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। প্রথম দফায় ৭টাকা ৬৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে একলাফে ১২টাকা এবং এরপর গত বছরই ১৩ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে গ্যাস সঙ্কট নিরসণে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ নারাযণগঞ্জে একটি নতুন গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করে। এতে সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যুক্ত করার পর সমস্যা আরও প্রকোট হয়েছে। দিনের বেলায় গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যায় না। রাত ১১টার পর গ্যাস সরবরাহ করা হলেও প্রেসার থাকে না।
জানা গেছেভ, শিল্প কারখানায় ১০-১৫ পিএসআই প্রেসারে গ্যাস সরবরাহের লাইন সংযোগ দেওয়া হলেও সর্বোচ্চ ৪-৫ পিএসআই’র বেশি প্রেসারে গ্যাস পাওয়া যায় না। নীট গার্মেন্টের সঙ্গে যুক্ত স্পিনিং, ডাইং ও নিটিং এই ৩ সেক্টর ২৪ ঘন্টাই শিফট অনুযায়ী চলে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় এই ৩ সেক্টরে অনেক ক্ষেত্রে দেড় বা দুই শিফটে কোন কাজই হয় না। শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হয়। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অর্ডার বাতিল।
এদিকে দেশে গ্যাস সংকটের কারণে টেক্সটাইল কারখানার গড়ে ৪০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। আর টেক্সটাইল মিলের বেশির ভাগই নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। সংগঠনটির অভিযোগ, এখন গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ফলে যেসব টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মাধ্যমে পরিচালিত, তাদের উৎপাদন কার্যত বন্ধ। রপ্তানি আয়ও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। অবিলম্বে সব কারখানায় এলএনজির মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মাধ্যমে পরিচালিত কারখানাগুলো সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড মেশিনের ব্যবহার হয়। ফলে গ্যাসের পর্যাপ্ত এবং অব্যাহত সরবরাহ না থাকায় প্রতিনিয়ত মেশিনারিজ এবং স্পেয়ার পার্টসের ক্ষতি হচ্ছে, উৎপাদনও সর্বনিম্ন পর্যায়ে। আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ জ্বালানি উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা করেছেন। টেক্সটাইল খাতে অব্যাহত এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি প্রাধান্য দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় কারখানা মালিকদের পক্ষে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও ব্যাংক ঋণের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধসহ ইউটিলিটি বিল ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হবে না।