মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের কল্যাণ ও দেশের অগ্রগতির জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নবনির্বাচিত মেয়র ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা।’ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ আসলে কী চায়, তা জানার জন্য জনপ্রতিনিধিদের উচিত জনগণের কাছে যাওয়া এবং মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা।
তিনি বলেন, নির্বাচন এককালীন বিষয় নয়। একজন রাজনৈতিক নেতা বারবার নির্বাচিত হতে পারেন যদি তিনি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন। ‘নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি এবং শপথ মাথায় রেখে আপনাদের কাজ করতে হবে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ পুরো দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পুরো দৃশ্যপট ২০০৯ সালের পূর্বের সময়ের তুলনায় এখন অনেকাংশে পরিবর্তিত হয়েছে।
পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় আরো উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
চলমান উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো যেন যথাযথভাবে ও সময়মতো সম্পন্ন হয় সেজন্য এগুলো দেখভাল করতে সদ্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
‘নিশ্চিত করুন যেন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রæত সম্পন্ন হয় এবং এতে কোনো ঘাটতি না থাকে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারিতে জনগণের এবং সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতির বড় ক্ষতি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
সবাই যাতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে পারে সেজন্য জনগণকে একত্রিত ও উৎসাহিত করতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য শিল্প থেকে কৃষি- সব ক্ষেত্রেই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং জনপ্রতিনিধিদের কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়েছে যাতে স্বাধীনতার ফল দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। চট্টগ্রামের নেতাদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা সবাই মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব সংগ্রামের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথেই ছিল।
এদিকে গতকাল সকালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর ৪১তম জাতীয় সমাবেশ ২০২১-এর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি গাজীপুরের সফিপুর বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমির অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত হবে, মানুষ নাগরিক সুবিধা ও উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার দেশ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের বক্তব্য মধ্যে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর মহাপিরচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। এদিন অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ সেবাধর্মী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর ১৪০ জন সদস্যকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের হাতে পদক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
প্রধানমন্ত্রী আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর বিভিন্ন সেবামূলক কাজের প্রশংসা করেন এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ধাপে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাল্যবিবাহ রোধ, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদে আমাদের দেশের যুবসমাজ যাতে সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয় এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এরকম ভূমিকা আরও বেশি রাখা প্রয়োজন। সেজন্য আপনাদের বিভিন্ন তথ্য-প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন থেকে শুরু করতে হবে।’ ছেলেমেয়েরা যেন বিপথে না যায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর কল্যাণে তার সরকার নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে বলেও জানান তিনি। আর্থিকভাবে অসচ্ছ্ল অনেক আনসার-গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম চলমান আছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক এলাকায় এভাবে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।
এছাড়া মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে জমির পাশাপাশি ঘর উপহার দেওয়ার কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না; সবারই একটা ঠিকানা হবে। তাই বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে আমরা ঘর তৈরি দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছি এবং আমরা তা করে যাচ্ছি। মুজিববর্ষে বাংলার জনগণের জন্য এটাই হবে আমাদের উপহার, আমরা সে ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।’
এছাড়া গ্রামের মানুষের যাতে আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায় সেলক্ষ্যেও তার সরকারের ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন নাগরিক সুবিধা পায় তাই ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এটাও আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেটাও বাস্তবায়ন করছি। সেক্ষেত্রেও আমাদের আনসার-ভিডিপির বিরাট অবদান থাকতে পারে। সেখানে কাজ করার পাশাপাশি নিজেদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন।’
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা করোনাভাইরাস মোকাবিলা করছি। আমি অনুরোধ করব, আনসার ভিডিপির প্রত্যেক সদস্য যেন ভ্যাকসিন নেয়। আমরা ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি। অনেকে ভয় পান, সুঁই ফোঁটাতেও ভয় পান; এরকমও কিছু কিছু মানুষ আছে। কিন্তু তারা যাতে রোগাক্রান্ত না হন সেজন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার এই ব্যবস্থা আমরা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন নিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য ইতোমধ্যে আমাদের যে ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে, সেখানে গিয়ে সবাই নিবন্ধন করতে পারবেন।’ আনসার ভিডিপির সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা গ্রামের মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করবেন। বৈশ্বিক মহামারি থেকে বাংলাদেশের মানুষ যেন মুক্তি পায় সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ অন্ন বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও উন্নত জীবন পাবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। সেখান থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনা পয়সায় দিচ্ছি। এছাড়া এখন আমাদের লক্ষ্য দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া। সেটা আমরা প্রায় করেই ফেলেছি। যেখানে গ্রিডলাইন আছে, সেখানে শতভাগ বিদ্যুৎ চলে গেছে। এছাড়া সোলার প্যানেল ও সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি।