গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলন
* একটা ভালো শক্তিশালী দল করে দেন মাঠেই দেখা হবে* বিএনপি ইলেকশনটা করবে কী নিয়ে,তাদের নেতা কে ?
* বাম দলগুলো ভাংতে ভাংতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়েছে* বন্যা মোকাবিলা করার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে
* পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক গড়ে উঠবে
মিরর বাংলাদেশ : আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না, সেটা থাকবো না। মিলিটারি ডিক্টেটররা যা করেছে, তার বিরুদ্ধে আমিই সংগ্রাম করেছি, আমি আন্দোলন করেছি। জেল-জুলুম, বোমা, গ্রেনেড, গুলির সম্মুখীন আমিই হয়েছি। কিন্তু গণতন্ত্রটা করতে পেরেছি বলেই, এই ধারাবাহিকতাটা আছে বলেই আজকে দেশের এই উন্নতিটা।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওদের (বিএনপি) জন্য তো কান্নাকাটি করে লাভ নাই। ওরা ইলেকশনটা করবে কী নিয়ে? পুঁজিটা কী? সমস্যা তো ওখানেই। বাংলাদেশে বিএনপির একটাও কী যোগ্য নেতা নেই? যাকে তারা দলের চেয়ারম্যান করতে পারে? তাহলে তো তাদের এই দুরবস্থাটা হয় না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন একটা দল। যে দলটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একেবারে গণমানুষের মাধ্যমে। সেই সময়ে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে, তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিবাদ করতে গিয়েই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। আমাদের প্রতিপক্ষ যে কয়টা দল আছে, তাদের জন্মস্থানটা কোথায়? যদি ধরেন মূল একটি দল আছে বিএনপি।
তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে একজন মিলিটারি ডিক্টেটর, যে মিলিটারি ডিক্টেটর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িত। খুনি মোশতাকের সঙ্গে তার হাত মেলানো ছিল এবং মোশতাক যাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার পর। সে যখন নিজেকেই নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তখন প্রেসিডেন্ট সায়েম সাহেব, তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দলের (বিএনপির) নেতৃত্বটা কার হাতে? কে নেতা? এতিমের অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতির দায়ে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একজন তো ফিউজিটিভ। আরেকজনকে আমি অবশ্য আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটিতেই তার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগটা দিয়েছি, বয়সের কথা বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, ‘আর আমাদের বাকি ছিল বাম দলগুলো। তারা তো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হতে হতে মানে দাঁড়ি কমা সেমিকোলন, দাঁড়ি বসবে না কমা বসবে, কমা বসবে না সেমিকোলন বসবে এই করতে করতে ভাঙতে ভাঙতে তাদের অবস্থা, তারা এখন বাম হয়ে কখনও ডানে কাইত হয়, কখনও বামে কাইত হয়, তাদের তো এই অবস্থা। আছে কে? আমাকে সেটা বলেন না। একটা ভালো শক্তিশালী দল করে দেন, মাঠেই দেখা হবে। মাঠে আমরা দেখবো। সেখানে ঠিক আছে জনগণ যাকে চায়। আমার কথা একটাই স্পষ্ট, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ অনেক থাকে, ওই রকম সুযোগ নিয়ে আমি তো প্রধানমন্ত্রী হইনি কখনও।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা মিথ্যা আপনি বারবার বলতে পারেন। আর সত্যের শক্তিটা হচ্ছে একবার, সত্যটা একবার। আপনারা আমি জানি না, বিদেশেও তাদের কাছে অপপ্রচার করা হয় যে, নির্বাচন পার্টিসিপেটরি না। একটা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তখনই, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করবে তখনই যে তাদের দেখাতে হবে সেই দল নির্বাচন করে জয়ী হলে, কে হবে সরকার প্রধান। এইটা তো মানুষ আগে বিবেচনা করে। করে না? এটা খালি আমাদের দেশে না, পৃথিবীর সব দেশেই। তারা (বিএনপি) যে ইলেকশন করবে, তারা কাকে দেখাবে? সাজাপ্রাপ্ত ফিউজিটিভকে? সে তো এখন এই দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে দিয়ে বিদেশি নাগরিক হয়ে বসে আছে।’
বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। এ সময় বন্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক বন্যা আমাদের কাক্সিক্ষত। বন্যা আমাদের জানমালের যেমন ক্ষতি করে, তেমনটি এর উপকারিতাও আছে। আমাদের পলিমাটির স্তর বৃদ্ধি করে। কৃষিজমিকে ঊর্বর এবং সতেজ করে। ময়লা-আবর্জনা-জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে সাফ করে নিয়ে যায়। এ ধরনের বন্যার সঙ্গে বসবাস করতে আমাদের দেশের মানুষ অভ্যস্ত। স্বাভাবিক মাত্রার বন্যা মোকাবিলা করার সক্ষমতাও আমাদের সরকারের রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উদ্ধার এবং ত্রাণকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি। কোনও সময় ক্ষেপণ না করে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্টগার্ড, পুলিশ বাহিনীকে নিয়োজিত করেছি।’
বন্যাদুর্গতদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত মানুষের পাশে আছি। তাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেই ব্যবস্থা আমরা করবো।’
পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে ওই অঞ্চলে দেশি-দেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যে এই সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া পদ্মার দু’পারে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১২ সালের ৯ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেই। আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ না নেওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আপনারা দেখেছেন, আমাদের দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী এবং অর্থনীতিবিদরা কীভাবে মনগড়া সমালোচনায় মেতে উঠেছিল।’
সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের গুণগত মানে কোনও আপস করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণে। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এই সেতুর পাইল বসানো হয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।’
চলমান করোনাভাইরাস মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত গোটা বিশ্বকেই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখী করেছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে। খাদ্য শস্যের উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবহন ভাড়া। ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, অর্থনীতির চাকা সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় রাখতে। এই সময়ে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। অপচয় বন্ধ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ বছরই মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল উদ্বোধন করা হবে। ঢাকায় এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গৃহীত মেগাপ্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজও যথারীতি এগিয়ে যাচ্ছে।