জাইকার হাতে দেশে নদী ধবংস হবে এটা পরিবেশবাদিরা মানবে না

667

মিরর বাংলাদেশ:
জাতীয় নদী জোটের আহবায়ক ও ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, জাইকার মত সংস্থার হাতে বাংলাদেশের নদী ধবংস হবে তা কোনোভাবেই পরিবেশবাদিরা মেনে নিতে পারে না। তিনি অবিলম্বে অবিলম্বে নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি জানান।
তিনি বলেন, কোহেলিয়া নদী ও তৎসংলগ্ন সকল খাল ও প্লাবন অঞ্চল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে হবে। জাইকার অর্থায়নে কক্সবাজারের কোহেলীয়া নদী ভরাট করে রাস্তানির্মাণের” প্রতিবাদের এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এদাবি জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও জাতীয় নদী জোট-এর যৌথ উদ্যোগে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল মুল বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় নদী জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও আরণ্যক ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় নদী জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সেবা’র নির্বাহী পরিচালক সাঈদা রোকসানা শিখা, বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বাপা সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাওমান স্মিতা সহ আয়োজক সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও শারমীন মুরশিদ বলেন, যেকোন বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের আগে সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আদালতের রায় যথাযথভাবে মেনে কোহেলিয়াসহ দেশের সকল নদী ও জলাশয় পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, নদী বিধৌত পলিভুমি দ্বারা গঠিত নদীমাতৃক বাংলাদেশের সবগুলো নদী আজ নানা দিক থেকে বিপর্যয়ের সম্মুখীন। জলবায়ু-পরিবর্তনের প্রভাব, অভিন্ন নদী ব্যাবস্থায় উজানের এক তরফা পানি প্রত্যাহারমূলক প্রকল্প, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, ব্যাপক জনসংখ্যার চাপ ও বেপরোয়া নগরায়নের ফলে দেশের নদীসমূহ দখল-দূষণে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। আর এজন্য দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)সহ দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসমূহ দেশের প্রচলিত অনেক আইন, অধ্যাদেশ ও সরকারী নির্দেশনার উপেক্ষাকরে চলমান দখল, দূষণ ও অন্যান্য নদী বিধ্বংসী কর্মকান্ডে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।

শরীফ জামিল জানান তার বক্তব্যে জানান,বাপা এবং জাতীয় নদী জোটের একটি যৌথ প্রতিনিধিদল গত ১৬ জানুয়ারি ২০২১, বিপন্ন কক্সবাজারের কোহেলিয়া নদী সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং স্থানীয় গ্রামবাসী, ভুক্তভোগী, জেলে ও জেলা প্রশাসকের সাথে মত বিনিময় করেন। তিনি জানান কোহেলিয়া নদীর সাত কিলোমিটার দখল করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কোহেলিয়া নদী ও তৎসংলগ্ন সকল খাল ও প্লাবন অঞ্চল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে জেলা প্রশাসকের ভুমিকা চোখে পড়েনি বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে জাইকার অর্থায়নে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হবার পর থেকেই কোহেলিয়া নদী নানাভাবে বিপর্যয়ের শিকার হতে শুরু করে। নদীর খাল ও প্লাবন অঞ্চল সমূহ হারিয়ে যেতে থাকে এবং মাতারবাড়ি এলাকায় জলাবদ্ধতাসহ স্থানীয় পরিবেশে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনসাধারন তার প্রতিবাদ করে। এর প্রতিবাদে গত বছর ২০২০ এর মার্চ মাসে এবং সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় জেলে ও পরিবেশকর্মিগন কোহেলিয়া নদী রক্ষার দাবীতে দুইটি মানব বন্ধন করে।
তিনি জানান ২০১০ সালে জাইকা এবং টোকিও ইলেকট্রিক কোম্পানি প্রণীত বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম মাষ্টার প্লানসহ সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশের উপকুলে রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ি, এই ৩ টি ও ততসংলগ্ন এলাকাসমূহকে মূলত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যাপক শিল্পায়নের পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাতারবাড়িতে ইতিমধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। জাইকার এই প্রকল্পের সাথে মাতারবাড়ি ও মহেশখালী এলাকায় পোর্ট, তেল শোধনাগার, স্টিল মিল, সিমেন্ট কারখানা, এল এন জি প্লান্ট, সার কারখানাসহ আরো অনেক কারখানা ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রায় ৫৫৭৯ একরের বেশী জমি অধিগ্রহন কাজ এগিয়ে চলছে।
তিনি জানান, সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা ছাড়াও, প্রতিনিধিদল এই প্রকল্প সম্পর্কিত দলিলাদি এবং আইনের পর্যালোচনায় দেখতে পায় যে, পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে কোহেলিয়া নদীর উপর দিয়ে ৬.৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক করার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান করে।