জ্বলছেনা চুলা, বেড়েছে লোডশেডিং

196

মিরর বাংলাদেশ  : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ না থাকায় গাড়ির লাইন থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গ্যাস-সংকটে পড়েছে শিল্প, আবাসিক ও বিদ্যুৎ খাত। বেড়ে গেছে লোডশেডিং। একটি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় প্রায় দেড় মাস ধরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ কম। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে এক দুর্ঘটনায় পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে গেছে। এতে এলএনজি সরবরাহ আরও কমে গেছে।

গ্যাস সংকট আরো তীব্র হচ্ছে

এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিকের গ্রাহকরা। দিনের খুব কম সময়ই লাইনে রান্নার জন্য গ্যাস পাওয়া যায়। এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে সারাদিনও রান্নার মতো পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যায় না।
গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাস সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যেসব এলাকায় আগে পাওয়া যেত সেসব এলাকায়ও গত দুই সপ্তাহ ধরে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় দিনের বেলায় গ্যাস মিললেও নিভু নিভু করে জ্বলে চুলা। আবার বিনা ঘোষণায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও নিয়মিত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে নতুবা এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে মাসের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় ঢাকার বাইরে কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি থেকে আসে ১১০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৫ কোটি ঘনফুট। এতে দিনে এখন গ্যাস সরবরাহ নেমে এসেছে ২২৫ কোটি ঘনফুটে।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কবলে পড়ে গত ২৭ মে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় সামিটের টার্মিনাল। এতে ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ কমে যায়। এটি থেকে এ মাসের মাঝামাঝি পুনরায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হতে পারে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ঠিকাদারি সংস্থার পক্ষ থেকে মাটি পরীক্ষার জন্য খোঁড়াখুঁড়ির সময় আনোয়ারা-ফৌজদারহাট লাইনে ছিদ্র হয়। এতে এ পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস সঞ্চালনের সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) প্রকৌশলীরা এটি মেরামতে কাজ করছেন।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন ও মাইনস) মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, পাইপলাইনে ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তবে পাইপলাইন মেরামত করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে।
গ্যাসের সরবরাহ কমায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রান্নার চুলা জ্বালাতে হিমশিম খাচ্ছেন গ্যাসের গ্রাহকেরা। শিল্পকারখানায় আগেই উৎপাদন কমে এসেছিল গ্যাসের অভাবে। এখন কারখানা চালাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। গতকাল বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। গ্যাস থেকে দিনে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। গতকাল বিকেলে এটি ৪ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে যায়। এতে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় ঢাকার বাইরে কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ, পিডিবি ও পিজিসিবি সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গতকাল বেলা তিনটায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। একই সময়ে উৎপাদন করা হয়েছে ১২ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এতে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং দিতে হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই লোডশেডিং বাড়তে শুরু করে। গতকাল দুপুর ১২টার পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় দেড় হাজার মেগাওয়াট করে লোডশেডিং হতে থাকে।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির কোনো ঘাটতি নেই। কারিগরি কারণে গ্যাস সরবরাহ কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। তবে কয়লা ও তেলচালিত কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামতকাজের কারণে মহেশখালী ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে। ফলে তিতাস ও বাখরাবাদ এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন এসব তথ্য জানান। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে পেট্রোবাংলা।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে সাগরে ভাসতে থাকা ভাঙা একটি পন্টুনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামিটের এলএনএনজি টার্মিনাল। এতে এই টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও ১৭ জুলাইয়ের আগে এটি ঠিক হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
যদিও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, চলমান গ্যাস সংকট ১৫ জুলাই নাগাদ কেটে যাবে। এর মধ্যে এই দুর্ঘটনা গ্যাস সরবরাহের আরও অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
পেট্রোবাংলা জানায়, দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে এক্সিলারেটের টার্মিনাল দিয়ে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর দেশের ভেতরের গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে আরও ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে অন্তত ৩ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে প্রতিদিনই ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে।
তারা আরও জানায়, ঘাটতির কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট চরম আকার নিয়েছে। বাসাবাড়িতে গ্যাস নেই। ঢাকায় সিএনজি স্টেশনসহ পুরান ঢাকা ও আশপাশের বাসাবাড়িতেও গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এই দুর্ঘটনায় গ্যাস সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলো