মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের চরম ভোগান্তি
* ৩ দফা দাবীতে পেট্রোল পাম্প মালিক, ট্যাংক-লরি ওনার্স এসোসিয়েশন ও ট্যাংক-লরি শ্রমিকদের ধর্মঘট
মিরর বাংলাদেশ : ৩ দফা দাবি আদায়ে রবিবার থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছেন পেট্রোল পাম্প মালিকদের একাংশ। এ কারণে তেলশূন্য হয়ে পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প। ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।
মিরপুর-১৪-এর দিগন্ত ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার আল আমিন জানান, এখানে শুধু ডিজেল দেওয়া হচ্ছে। অকটেন বন্ধ। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, অকটেন আমাদের রিজার্ভে নেই। তাই শুধু পেট্রোল দিচ্ছি।
ধর্মঘটের কারণে এমনটা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর প্রভাব তো কিছু পড়েছে। তবে আমাদের এখানে অকটেন নেই। পেট্রোল পাম্পরাজধানীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ঘুরে তেল পাচ্ছেন না অনেকে
বাড্ডায় দুটো, যমুনা ফিচার পার্কের কাছে একটাসহ মোট তিনটি পেট্রোল পাম্প ঘুরে এসে মিরপুর-১৪ থেকে বাধ্য হয়েই পেট্রোল নিতে হচ্ছে বলে জানান মশিউর রহমান নামে এক রাইড শেয়ার বাইকচালক। তিনি বলেন, সকালে তেল নেওয়ার জন্য বাড্ডা, যমুনা ফিউচার পার্ক এসব স্থানে ঘুরে আসছি। পাম্পই বন্ধ। এখন মিরপুরে এক যাত্রী নিয়ে এসেছি। এদিকে পাম্প খোলা দেখে এলাম। কিন্তু অকটেন নেই। তাই বাধ্য হয়েই পেট্রোল নিচ্ছি।
মশিউর রহমান ছাড়াও আরও কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক জানিয়েছেন, ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে পেট্রোল পাম্প বন্ধ। যে কয়েকটি আছে সেখানে অকটেন দিচ্ছে না। শুধু পেট্রোল চালু রাখা হয়েছে।
অকটেন না থাকার বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে দামি প্রাইভেটকার ও বিলাসবহুল গাড়িগুলো। অকটেন না পেয়ে ফিরছিলেন সাইফুল নামে এক ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। তিনি বলেন, ‘আমার এই গাড়িটা সবসময় অকটেনেই চালাই। কখনও পেট্রোল নেই না। কারণ, রিস্ক নিতে চাই না। মালিকের গাড়ি, যদি ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়, গতি কমে বা থেমে থেমে চলে, তাহলে তো তার দায় আমার। মালিককে জানাইছি। তিনি বলেছেন ফিরে আসতে।
কালশীর সুমাত্রা ফিলিংয়ের কর্মী কবির বলেন, পদ্মা ডিপো থেকে তেল আনি। গতকাল সকালে আমাদের তিন গাড়ি গেছে। ডিজেল এক গাড়ি, দুই গাড়ি অকটেন। শুনেছি ডিপোর গেটই নাকি খুলছে না। যা তেল ছিল সকাল ১০টা পর্যন্ত দিয়ে শেষ করে ফেলছি। প্রত্যেক গাড়িতে ১৩ হাজার ৫০০ লিটার তেল ধরে বলে জানান তিনি। পেট্রোল পাম্পপেট্রোল পাম্পগুলো তৈরি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি এদিকে অনুরোধ করেও তেল পাচ্ছেন না যান চালকরা। ফিলিং স্টেশন ভিড় জমাচ্ছেন তারা। সবারই অভিযোগ কোথাও তেল মিলছে না।
শুভ নামে এক চাকরিজীবী বলেন, শান্তিনগর অফিস থেকে বের হয়ে রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল কয়েক জায়গায় গিয়েছি, কোথাও তেল পাচ্ছি না।
পেট্রোল পাম্প মালিকদের দাবি, ডিজেলের ২ ভাগ, পেট্রোলের ৩ ভাগ এবং অকটেনের ৪ ভাগ কমিশন বাড়িয়ে সাড়ে ৭ ভাগ করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের শিল্প থেকে বাদ দিয়ে কমিশন এজেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া পুরাতন ট্যাংক লরি অবসরের সময় ২৫ বছর থেকে বাড়াতে হবে।
এরমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের কমিশন এজেন্ট হিসেবে গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাকি দুই দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। ডিপো থেকে তেল উত্তোলন এবং পরিবহন বন্ধ রেখেছেন তারা। এতে অনেক পাম্পে সকাল থেকে বিক্রি হলেও দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তেল শেষ হয়ে যায়। ফলে বন্ধ আছে বিক্রি। আজ সোমবার পর্যন্ত এই ধর্মঘট চললে পাম্প সবই বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যাংক-লরি শ্রমিক ফেডারেশনের সেক্রেটারি (ঢাকা) রেজাউল করিম রেজা বলেন, ধর্মঘটের কারনে রোববার তারা কোনও তেল উত্তোলন করেননি। তাদের সঙ্গে কেউ মিটিংও করেনি।
পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির একাংশের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান রতন বলেন, একপক্ষ দালালি করতেছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা হাতে গোনা। তারা পাম্প খোলা রাখলেও লাভ নাই। তেল উত্তোলন তো বন্ধ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
সূত্র জানায়, পেট্রোল পাম্প মালিকদের একাংশের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার ডিপো থেকে তেল উত্তোলন এবং পরিবহন বন্ধ রেখেছেন তারা। এতে অনেক পাম্পে সকাল থেকে বিক্রি হলেও দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তেল শেষ হয়ে যায়। ফলে বন্ধ আছে বিক্রি।
মালিকদের দাবি, ডিজেলের ২ ভাগ, পেট্রোলের ৩ ভাগ এবং অকটেনের ৪ ভাগ কমিশন বাড়িয়ে সাড়ে ৭ ভাগ করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের শিল্প থেকে বাদ দিয়ে কমিশন এজেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া পুরাতন ট্যাংক লরি অবসরের সময় ২৫ বছর থেকে বাড়াতে হবে। এরমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের কমিশন এজেন্ট হিসেবে গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাকি দুই দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন তারা।
এর আগে বাংলাদেশ ট্যাংক-লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্যাংক-লরি শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের উপস্থিতিতে গত ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে পেট্রোল পাম্প মালিকদের সব দাবি-দাওয়া পূরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আশ্বস্ত করা হয়। এরপর একাংশ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে। কিন্তু অন্য অংশ জানায়, তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না করে কর্তৃপক্ষ শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। তাই ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রেখে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হবে।
এদিকে জ্বালানী তেলের বেশীরভাগই সরবরাহ করা হয় নারায়ণগঞ্জে থেকে। বিশেষ করে বিমানের তেল এখান থেকে সরবরাহ হয়। গতকাল নারায়ণগঞ্জ থেকে সবধরনের জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর কমিশন বাড়ানোসহ ৩ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য জ্বালানি ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ট্যাংক লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউশনস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনগুলোর কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির কারণে সারা বাংলাদেশেই এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সুত্র জানায় , নারায়ণগঞ্জে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানির জ্বালানি তেলের ডিপো রয়েছে। এই ডিপোগুলো থেকেই রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের জেলাগুলোতে সিংহভাগ জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের পদ্মা ডিপো থেকে সরবরাহ করা বিমানে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল। এ কর্মসূচির জন্য বন্ধ রয়েছে বিমানের তেল সরবরাহও। এছাড়া বন্ধ রয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ পরিবহন খাতেরও জ্বালানি সরবরাহ।
এদিকে রোববার সকালে ফতুল্লার যমুনা ডিপো ও সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল পদ্মা তেলের ডিপো এলাকার গিয়ে দেখা গেছে তেলের ট্যাংকার সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে। তেল সরবরাহ না থাকায় কর্মমুখর এসব এলাকা অনেকটা নীরব।
ট্যাংক লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধিরগঞ্জ গোদনাইল মেঘনা শাখার সভাপতি আশরাফ উদ্দিন জানান, তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে গোদনাইল মেঘনা ডিপোর ইনচার্জ লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা বিকল্প পথে তেল সরবরাহ চালু রাখার চেষ্টা করছি।’
পদ্মা ডিপোর সিনিয়র কর্মকর্তা ফজলে এলাহী চৌধুরী বলেন,‘বিমানের জ্বালানি তেল আগামী ১০ দিনের জন্য বিমানবন্দরে মজুদ আছে। এই কর্মসূচির জন্য যাতে কোনো সমস্যা না হয়।’
বাংলাদেশ ট্যাংক লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউশনস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তিন দফা দাবিগুলো হলো, জ্বালানি তেলের কমিশন ২.৭৩ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে শতকরা সাড়ে ৭ করতে হবে। জ্বালানি তেল ব্যাবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট বিধায় প্রতিশ্রæতি মোতাবেক সুস্পষ্ট গেজেট প্রকাশ করতে হবে। ট্যাংক লরি ভাড়ার ওপর ভ্যাট সংযুক্ত নাই ও ট্যাংক লরির ইকোনমি লাইফ ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে নির্ধারণ পূর্বক পৃথকভাবে সুস্পস্ট গেজেট প্রকাশ করতে হবে।