রিপন মাহমুদ আকাশ , নারায়ণগঞ্জ
হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কয়েকটি স্থানে রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানাড়পাড়, মাদানীনগর এলাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে হরতাল সমর্থদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিজিবি- পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে রাবার বুলেট টিয়ার শেল ও ফাকা গুলি ছুড়ে। এসময় ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে প্রায় ৩৫ জন। আহতের মধ্যে সাংবাদিক ও রয়েছে।হরতাল চলাকালে প্রায় ১০টি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হরতালকারীদের সাথে মিশে কিছু বহিরাগত অনেকের মোবাইল টাকা পয়সা লুটপাটের ঘটনাও ঘটিয়েছে।
সংঘর্ষে শফিকুল ইসলাম (৬৭) ও শাকিল (৩৫) শাহাদাত (৩৫)সহ আরো গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এদের মধ্যে শাকিলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে আর বাকি দুজনকে সিদ্ধিরগঞ্জের মা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।আহত অন্যদের সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় পাঠানো হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বিকেলে জানান, হেফাজতের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই শিমরাইল মোড়, মৌচাক ও সাইনেবোর্ড এলাকায় অবস্থান নেয়। হরতালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্য মোতায়েন ছিল। মহাসড়ক এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রোববার ফজর নামাজের পর থেকে মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড়া, মিজমিজি, মাদানীনগর, চিটাগাং রোড ,শিমরাইল মোড়, শিমরাইল ইউটার্ণ, কাঁচপুর-মুগড়াপাড়া, বন্দরের মদনপুর এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এসময় তাদের অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল।
সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে হেফাজতের কর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি ধাওয়া দিয়ে হেফাজত কর্মীদের সরিয়ে দিলে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে সানারপাড় এলাকায় হেফাজতের আরেক গ্রæপ রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছুড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে হরতাল সমর্থকরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে আইনশৃংলাবাহিনীও পাল্টা টিয়ার শেল ও শট গানের গুলি ছুঁড়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এসময় ৫জন গুলিবিদ্ধ হয় এবং সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষুদ্ধ হেফাজতের কর্মীরা দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে হেফাজত সমর্থকরা মহাসড়কের পাইনাদি এলাকায় ১০ তলা কুয়েতপ্লাজা ভবনের সামনে একটি বাস, একটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি ট্রাকে আগুন দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হরতালকারীরা দু’টি ট্রাক, একটি বাস ও একটি হায়েস গাড়িতে আগুন দিয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে হরতালকারীরা তাদের বাধা দেয়।
হেফাজতকর্মীরা সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ার, গাছের গুঁড়ি, বাঁশ, কাঠ, চৌকি, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রে আগুন জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। অনেকে বাধ্য হয়ে পায়ে হেটে গন্তব্যে গিয়েছে।
বেলা ১২টার দিকে মাদানীনগর এলাকায় গাড়ি অগ্নি সংযোগের ছবি ও ভিডিও ধারন করতে গিয়ে হামলা শিকার হন রিপন মাহমুদ আকাশ নামের একজন সাংবাদিক। তার মোবাইল, টাকা পয়সা, ও জরুরী কাগজ পত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি দাবী করেন, হরতাল সমর্থকদের সাথে কিছু বহিরাগত মিশে অনেকের মোবাইল, টাকা পয়সা লুটে নিয়েছে। তিনি সহ সিদ্ধিরগঞ্জের জাতীয় দৈনিকের কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
এদিকে জোহরের নামাজ রাস্তায় আদায় করে মোনাযাত দিয়ে রাস্তা থেকে হেফাজত কর্মীরা সরে যাওয়ার পর যানচলাচল কিছু সময়ের জন্য স্বাভাবিক হয় । তবে বেলা ৩টার দিকে ফের হেফাজত কর্মীরা মহানড়কে অবস্থান নিলে বিজিবি-পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধা । এসময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হামলা শিকার হয় চ্যানেল নিউজ ২৪এর গাড়ি ও গাড়ির চালক।
হেফাজত কর্মীরা বলেন, ‘আল্লাহ যারা আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করলো তাদের তুমি ধ্বংস করে দাও।’ পরে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা বিজিবির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সামনে যায় এবং বলে বর্ডারে গুলি করতে পারো না, আমাদের ওপর কেন করো?
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি বশির উল্লাহ সকাল ৮টায় প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের হরতাল কর্মসূচি পালন করতেছি। আপনারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিতে আসবেন না। বাধা দিলে পরিণতি ভয়াবহ হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শী ফিরোজ মিয়া জানান, হেফাজতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে সকাল থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসমষ্ট্যান্ড এলাকায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে রাস্তায় বিদ্যুতের খুটি ফেলে টায়ারে আগুন ধরিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়। তাঁরা মহাসড়কের সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহিদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল (কাঁদানে গ্যাস) নিক্ষেপ করা হয়েছে।পরে যানবাহন চালু করার চেষ্টা করা হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, হরতালের সমর্থনে মহাসড়কের শিমরাইল, মৌচাক, সানারপাড় ও সাইনবোর্ডসহ বেশ কয়েকটি স্থানে অবরোধ তৈরি করে বিক্ষোভ করেছে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে