দেশে একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

206

* সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন এলাকা ঘোষণা

মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সব গৃহহীন মানুষ যাতে জমিসহ বাড়ি পায় তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। আমরা এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি।’
গতকাল বুধবার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪র্থ দফায় আরো ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি দুই দশমিক ৩৬ শতাংশ জমি প্রদানের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রতিনিধিরা-মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান–এর পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সারা দেশে ৪৯৩টি উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের স্থানে উপস্থিত থেকে তারা সুবিধাভোগীদের হাতে বাড়ির সার্টিফিকেট ও জমির কাগজপত্র তুলে দেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ৪র্থ ধাপের ঘর বিতরণের ফলে নয়টি জেলা ও ২১১টি উপজেলায় এখন বাড়ি ও ভূমিহীন কেউ নেই। এর আগে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্প আশ্রয়ণ-২-এর আওতায় প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় দফায় ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং তৃতীয় দফায় ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি প্রদান করেন শেখ হাসিনা। চতুর্থ দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি।
প্রধানমন্ত্রী আরো সাতটি জেলা এবং আরো ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। সাতটি জেলা হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা। এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরাকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত জেলা এবং ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা ঘোষণা করেন।
কৃতিত্বের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য কারণে এসব এলাকার কোনো পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন হলে ওই পরিবারকে জমিসহ বাড়ি দেয়া হবে।
তিনি সকলকে সারাদেশে ভূমিহীন পরিবার বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা অন্য কোনো কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া এলাকাগুলো খুঁজে বের করতে বলেন। তিনি আরো বলেন, যেগুলো ইতোমধ্যে গৃহহীন ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার তাদের বাসস্থান দিবে।
বুধবার যে ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে নেত্রকোনা জেলার ৮টি উপজেলা, নরসিংদীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, রাজশাহী ও পিরোজপুরে ছয়চি উপজেলা; গাজীপুর, বগুড়া ও কুষ্টিয়ায় পাঁচটি উপজেলা; গোপালগঞ্জ,
মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও সিলেটে চারটি করে উপজেলা; ঢাকা, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, চাঁদপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও হবিগঞ্জের তিনটি করে উপজেলা; মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী, মেহেরপুর ও ঝালকাঠিতে দুটি করে উপজেলা; এবং শরীয়তপুর, কক্সবাজার, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, ভোলা, বরগুনা, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের একটি করে উপজেলা রয়েছে।
যে ৫২টি উপজেলাকে আগে গৃহহীন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, তার মধ্যে পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি; ময়মনসিংহ, মাগুরা, ফেনী ও চট্টগ্রামে চারটি করে; রাজশাহীতে তিনটি; মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ল²ীপুর ও বগুড়ায় দুটি করে; এবং ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও ঝালকাঠির একটি করে উপজেলা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে একটি উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তাঁর সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
সরকার প্রধান কোনো জেলায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন রয়েছে কিনা তা জানতে তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা তাঁর সরকারের লক্ষ্য হওয়ায় তিনি প্রত্যেককে বাড়ি দেবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ বাড়ি, আশ্রয় এবং জীবিকার সুযোগ পাবে। তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। আমরা চাই প্রত্যেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং যথাযথ সম্মানের সাথে বসবাস করবে।’ তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন।
বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়িঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তারা সর্বদা জনগণের কল্যাণে কাজ করে এবং জনগণ এর সুফল পায়।
তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলেও এসময় সবার আগে তারাই জনগণের পাশে ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা (আ’লীগ) প্রথমে ঘূর্ণিঝড় কবলিত মানুষের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তৎকালীন সরকার প্রধান ঘুমিয়ে ছিলেন এবং তিনি কিছুই জানতেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে কক্সবাজার শহরের উপকণ্ঠে ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ পরিকল্পনা’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ’ প্রকল্পে যাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল,তারা বেশিরভাগই ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের শিকার।
তিনি আরো বলেন, ঐ সময় প্রায় ৪,০০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু অনেকগুলো পাঁচ তলা বাড়ির ফ্ল্যাটে আশ্রয় নিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু ও পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তাদেরকেও সরকার বাড়ি দিয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কেউ ঠিকানা ছাড়া থাকবে না। আমরা তাদের শুধু ঘরই দিইনি, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাদের জীবিকার জন্য ঋণও দিয়েছি। তারা এখন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা ঘোষণা করেছিলেন যে, একজন ব্যক্তি ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে এবং এর অতিরিক্ত পরিমাণ জমি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হে