নারায়ণগঞ্জে মসজিদের বিস্ফোরণের একবছর :৩৪ পরিবারের স্বজনরা আজও ডুকরে কাঁদেন

423

মিরর বাংলাদেশ :

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরনের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩৪ মুসল্লি নিহতের ঘটনায় এক বছরেও বিচারকাজ শুরু হয়নি। হতাহতদের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়া হলেও স্থায়ী কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। শুক্রবার ছিলো মর্মান্তিক ঐ ঘটনার এক বছর পার হয়েছে।
২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এশার নামাজের পর মসজিদে জমাট গ্যাস ও বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বিস্ফোরণে মারা যায় ৩৪ জন মুসল্লি। এ ঘটনায় বিচার শুরু না হওয়ায় স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।অনেকে স্বজন হারানোর বেদনায় আজও ডুকরে কাঁদেন ।
এ ঘটনায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রæত বিচারকাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে দ্রæত মসজিদটি খুলে দিয়ে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা।
সূত্র জানায়, মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলা ও গাফিলতি, গ্যাস লাইনের সঠিকভাবে তদারকি না করা, পাইপের লিকেজ মেরামত না করা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাসলাইন স্থাপন/স্থানান্তরের ঘটনাকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি তদন্ত শেষে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ২৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে সরকারি অনুমোদন নিয়ে তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অভিযোগপত্রে যুক্ত করা হয়। বর্তমানে মামলাটির মোট ৩৭ জন আসামি। মামলাটি নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিচারাধীন। তবে দীর্ঘ এক বছরেও মামলার বিচারকাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেনে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
এদিকে ছয়টি শর্ত দিয়ে মসজিদ খোলার অনুমতি দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, আমরা এলাকার মুসল্লিদের নিয়ে বসেছিলাম। সবার মতামতের ভিত্তিতে মসজিদটি ভেঙে পুনরায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন করে নির্মাণের পরই মসজিদে নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া মসজিদের পাশে অস্থায়ী শেড নির্মাণ করে সেখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণে নিহতের স্মরণে আজ শনিবার মসজিদ সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারের কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে মসজিদ কমিটি।
বিস্ফোরনের ঘটনায় নিহত বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ইমাম আবদুল মালেকের ছোট ছেলে ফাহিমুল ইসলাম জানান, বাবাই আমদের পরিবারের আয় রোজগার করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর বড় ভাই সংসারের হাল ধরেছেন। তার আয় দিয়ে সংসার চলছে না। প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে যে ৫ লাখ টাকা আমরা পেয়েছি সে টাক এখন ভেঙ্গে চলতে হচ্ছে।
নিহত মোহাম্মদ আলী মাস্টারের বড় ছেলে মো. রাসেল বলেন, মসজিদে বিস্ফোরণের পর জেলা প্রশাসন, তিতাস, বিদ্যুৎ, সিটি করপোরেশনসহ পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিটি তদন্ত সংস্থা দায়ীদের চিহ্নিত করে রিপোর্ট দিয়েছে। প্রতিবেদনে যাদের গাফিলতিতে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা তাদের তথ্য উঠে আসে। কিন্তু তারপরেও বিচারকাজ নিয়ে যে ধীরগতি চলছে, তা মোটেও কাম্য নয়। অতি দ্রæত বিচারকাজ শেষে করে আসামিদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন হুমায়ুন কবির। তার স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। প্রতিবন্ধী ছেলেসহ দুই ছেলে ও তিনি মেয়েকে নিয়ে খুবই কষ্টে কাটছে তার সংসার জীবন। বড় ছেলে বেকার। নিজেও অসুস্থ। প্রতিবন্ধী ছেলের ওষুধ ও নিজের ওষুধসহ যে টাকা প্রয়োজন মেয়ের জামাই ও আত্মীয় স্বজনের থেকে চেয়ে চিন্তে দিন কাটছে পরিবারটির। শুধু হুমায়ুন কবির নয়। উর্পাজনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে অনেক পরিবারই নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। খুব কষ্টে দিন কাটছে বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, তল্লা মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত প্রতিটি পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। নিহতদের কারও পরিবারের যদি আরও কোনও সহায়তা প্রয়োজন হয়, আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশা’র নামাজ চলাকালে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মসজিদের অভ্যন্তরে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ থেকে স্পার্ক ও অবৈধ গ্যাস পাইপ লাইনের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাসের মিশ্রনে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা সিআইডি পুলিশ। এই বিস্ফোরণে ৩৪ জনের মৃত্যুসহ আরো পনেরজন দগ্ধ হন