নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক সীমান্ত প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, নিন্দার ঝড়

446

মিরর বাংলাদেশ :  একটি মিথ্যা মামলা নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে নারায়ণগঞ্জে। সাংবাদিক সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন মামলাটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত জানিয়ে প্রতিবাদ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ টু ডে’র সম্পাদক ও পেশাদার সিনিয়র সাংবাদিক সীমান্ত প্রধানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি রবিউল আমিন রনি। একটি সংবাদ প্রকাশ নিয়ে এমামলা দায়ের করা হয়। তবে যায় বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তিনি মামলা দায়ের করেন নি। তবে মামলাটি তার ইন্ধনে হয়েছে এমনটাই মনে করছেন সাংবাদিক সীমান্ত প্রধান।

সীমান্ত প্রধানের দাবী,অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে আইনজীবী সমিতিকে সাংবাদিক সমাজের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার নেপথ্য কারিগর হিসেবে খালেদ হায়দার খান কাজলকেই ধরা হচ্ছে। তার ইন্ধনেই আইনজীবী সমিতি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বলে সর্বত্র চাউড় আছে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি রবিউল আমিন রনি বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ টুডে সম্পাদক সীমান্ত প্রধানের বিরুদ্ধে দ-বিধি ৫০০ ধারায় মানহানির মামলা করেন। ‘রাজাকারপুত্র’ কাজলের এ কেমন আচরণ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের রেশ ধরে ওই মামলাটি করা হয়েছে।
তবে, এই মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে আইনজীবী সমিতির সম্মানহানি হয়েছে বলে মনে করেন সিনিয়র আইনজীবীরা। তারা বলছেন, এই মামলায় আইনজীবী সমিতির কোনো স্বার্থ নেই। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার্থে মামলাটি দায়ের হয়েছে।
এদিকে আইনজীবী সমিতির দায়ের করা মামলায় ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ থেকে শুরু করে সুশীল সমাজও। ৩ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়েরের পর এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ্ আলম ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নারায়ণগঞ্জ সমন্বয়ক বিল্লাল হোসেন রবিন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি ভবানী শঙ্কর, সেক্রেটারি শাহীন মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম, সেক্রেটারি আমির হোসাইন স্মিথ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা, গণসংহতি আন্দোলন, বন্দর প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাড. শাহ আলী খান পিন্টু, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদ জিএম সুমন, ফতুল্লা মডেল প্রেস ক্লাব, ওয়ার্কার্স পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা, কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। প্রতিটি সংগঠনই দায়েরকৃত মামলাটি হয়রানিমূলক হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগীরে জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু দায়ের করা মামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান দিপু বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মামলায় সৌজন্য সাক্ষাতের কথা বলা হয়েছে আর পত্রিকায় লেখা হয়েছে মতবিনিময়। বার এখানে প্রতিবাদ দিতে পারতো যে আমরা আসলে মতবিনিময় করি নাই সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। আরেকটা বিষয় আমরা পত্রিকায় দেখলাম মাননীয় সাংসদ এখানে আইনজীবীদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্য দিলে কি মতবিনিময় হয় না? সেখানে তিনি বলেছেন বারের উন্নয়নে আপনারা দুই মন্ত্রীর সাথে দেখা করেন।
তিনি আরও বলেন, আরেকটা কথা আমি বলতে চাই একইদিনে দুই মামলা হয়েছে। একটি মামলা সৌজন্য সাক্ষাতের পরিবর্তে মতবিনিময় লিখেছে যতটুকু জানি সে মামলায় একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমন দিয়েছে। আরেকটি মামলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলছে সেটার তদন্ত দিয়েছে। এখানে কারও কোনো মাথাব্যাথা নেই।
দিপু বলেন, আমি মনে করি আসলে বারকে ব্যবহার করে বিশেষ গোষ্ঠী, বিশেষ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই মামলাটি করা হয়েছে। আমি অধিকাংশ আইনজীবীর সাথে কথা বলেছি এই মামলার ব্যপারে কারও কোনো আগ্রহ নেই। তারা এ ব্যপারে কিছুই জানে না। আসলে বারের এখানে কোনো ৩ স্বার্থ নেই। বারের ইজ্জতহানি হওয়ার মতো কোনো ঘটনা এখানে নেই। এই সিনিয়র আইনজীবী বলেন, রাজাকারপুত্র যদি কাউকে বলা হয় এজন্য ইজ্জতহানি হলে রাজাকারপুত্রের হবে। কোনো ক্ষতি হয়ে থাকলে রাজাকারপুত্রের হবে। সে রাজাকারপুত্র প্রমাণ করবে তার বাবা রাজাকার ছিল কি ছিল না। আমি মনে করি যাকে রাজাকারপুত্র বলা হয়েছে তার ইঙ্গিতেই এ মামলাটি করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে সেই ব্যক্তি মামলা করবে। আইনজীবী সমিতি একটা প্রতিষ্ঠান। একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান। আইনজীবী পেশা এবং আইনজীবীদের যে মূল্যবোধ সেটার সাথে অন্য কোনো পেশার বা মূল্যবোধের তুলনা চলে না। তাদের পেশার আগে যোগ করা হয় বিজ্ঞ। অনেক ব্যবসা বাণিজ্য শিক্ষা দীক্ষা অনেক প্রফেশন কিন্তু কারও সামনেই এই বিজ্ঞ শব্দটি ব্যবহার করা হয় না। অতএব এক্ষেত্রে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আমাদের মর্যাদা আমাদের সম্মান রক্ষার জন্য ।
তিনি আরও বলেন, এখানে আইনজীবী সমিতি কোনো ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি না। এর আগেও কয়েকটি মামলা করেছে অথচ তারা কোনো ক্ষতিগ্রস্থ না। স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাংবাদিক নীতিমালা ভঙ্গ করলে তারা প্রতিবাদ দিতে পারে। প্রতিবাদ না ছাপালে প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারে। এসকল ধাপ পেরিয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যাওয়া কিংবা না যাওয়ার বিষযয় আসতে পারে। এর আগে এগুলো আসা উচিত না। আইনজীবী সমিতি পক্ষ নেয়ায় আইনজীবীদের মর্যাদাহানি হয়েছে