কামাল উদ্দিন সুমন :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েএকসঙ্গে করোনাভাইরাসের ‘তিন ডোজ’ টিকা নেওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভুইগড় এলাকার সৌদী প্রবাসী যুবক ওমর ফারুককে (২৪) মেডিকেল টিমের সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে মেডিকেল টিম পরিচয়ে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের ভুঁইগড় এলাকায় নিজেদের বাড়ি থেকে ওমর ফারুককে নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বজনরা। বিষয়টি স্থানীয় একাধিক লোক বৃহস্পতিবার সকালে মিরর বাংলাদেশকে নিশ্চিত করছেন।
এর আগে বুধবার গভীর রাতে স্থানীয় উৎসুক জনতা ভিড় জমায় ঐ যুবকের বাড়িতে।
ওমর ফারুক ফতুল্লার ভুঁইগড় এলাকার জামাল হোসেন প্রধানের ছেলে। ওমর ফারুকের চার বয়সী এক ছেলে আছে। তাঁর বাবা পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক।
এর আগে মঙ্লবার একই দিনে করোনাভাইরাসের তিন ডোজ টিকা দেওয়ার যে খবর সামনে এসেছে তা ঠিক নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
একসঙ্গে তিন ডোজ টিকা নেওয়ার এমন খবর মিথ্যা ও গুজব বলে দাবি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
ভিসি বলেন,’অভিযোগকারী’ টিকাগ্রহণকারী ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টার পাশাপাশি এই ‘অপপ্রচারের’ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছেন বিএসএমএমই
ভিসি বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি সংশ্লিষ্টদের ডেকেছিলাম। এক ব্যক্তি তিন ডোজ টিকা নিতে পারেন না। এটা সম্ভব না। কারণ নিবন্ধন দেখেই টিকা দেওয়া হয়। এমন ঘটনা ভুল খবর।
তিনি আরও বলেন, ওই ব্যক্তিকে নিয়ে আসার জন্য বলেছি। তিন ডোজ টিকা নেওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা হবে।
লোকটি পাগল হতে পারে। তাকে খুঁজে বের করা হবে। সুস্থ মানুষের পক্ষে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব না।
ছবি :ফতুল্লার ভুইগড়ে ফারুকের বাড়িতে মানুষের ভিড়
ফারুকের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মেডিকেল টিমের সদস্যরা তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এরপর সারা দিন কোনো খবর না পেলেও সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওমর ফারুক তাঁর মা রহিমা বেগমকে ফোন করে জানান, তিনি হাসপাতালে আছেন, সুস্থ আছেন।
ওমর ফারুকের বোন ফারজানা আক্তার বলেন, তিন ডোজ টিকা নেওয়ার পর তাঁর ভাইয়ের শরীরে হালকা জ্বর ও শরীর ব্যথা হয়েছিল। এছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। টিকা নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তাকে বিএসএমএমইউতে যাওয়ার জন্য অনেকবার ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ভাই ভয়ে ফোন না ধরে পরে ফোন বন্ধ করে রাখেন। পরে বুধবার দুপুরে মেডিকেল টিম পরিচয়ে হাসপাতাল থেকে লোকজন এসে তাঁর ভাইকে তুলে নিয়ে
গেছে।
ফারুকের বোন বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর স্বামী গোলাম সারোয়ার নাহিদকে দেওয়া হলেও তাকে রেখে গেছেন ওই টিমের সদস্যরা।
ফারজানা জানান, চার বছর আগে ওমর ফারুক স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে হেফজ বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। দীর্ঘ দিন বেকার থাকার পর সম্প্রতি সৌদি আরব যাওয়ার ভিসা হয় তাঁর। সৌদি আরব যাওয়ার আগে টিকার জন্য নিবন্ধন করে গত ২৬ জুলাই হাসপাতালে টিকা নিতে গেলে ফারুককে তিন ডোজ টিকা দেওয়া হয়।
ফারজানা অভিযোগ করেন, যেখানে মানুষকে একটি টিকা পেতে হয়রানি পোহাতে হয়, সেখানে তাঁর ভাইয়ের শরীরে কীভাবে তিন ডোজ টিকা দেওয়া হলো, সেটি তদন্ত করা উচিত। যারা ওই বুথের দায়িত্বে ছিলেন তাদের ভুলের কারণে তাঁর ভাই তিন ডোজ টিকা নিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তিন ডোজ টিকা নেওয়ার পরে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যও কেউ আসেনি।’
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জানা নেই, তবে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
টিকা নেয়ার পর গণমাধ্যমকে ওমর ফারুক বলেছিলেন , আমি যখন টিকা কেন্দ্রে ঢুকলাম তখন আমাকে একজন বলল ডান সাইডের কর্নারে যেতে। ওইখানে যখন টিকা দেওয়া শেষ হলো জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাব? উনি বলল, সামনের দিকে। সামনে আসলাম, ওইখানেও একটা টিকা দিল। ওনাকে জিজ্ঞাস করলাম কোথায় যাব উনিও বলল সামনের দিকে যেতে। সামনে আসলাম আর কিছু জিজ্ঞেস করে নাই। আরেকটা টিকা দিয়ে দিছে। মোট তিনবার টিকা দিয়েছে। বাইরে এসে যখন বাকিদের জিজ্ঞেস করলাম আপনার কয়বার টিকা দিয়েছে, ওনারা বলল একবার টিকা দিয়েছে।
এরপর ওই ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর আসে। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।