প্রস্তুত আওয়ামীলীগ-বিএনপি

283

মিরর বাংলাদেশ : বিএনপির একদফা ঘোষণার দিন  বুধবার ঢাকায় শান্তি সমাবেশ করছে আওয়ামীলীগ। প্রথমে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীনরা। পরে স্থান পরিবর্তন করা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে হবে এ সমাবেশ।
সেখানে এক লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো করার টার্গেট নিয়েছে দলটি। সমাবেশ ছড়িয়ে দেওয়া হবে নবাবপুর, ঠাটারীবাজার, হাইকোর্ট, পল্টন, বিজয়নগর ও দৈনিক বাংলার মোড় পর্যন্ত, এসব এলাকায় টানানো হবে মাইক। আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যোগ দেবে এ সমাবেশে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
শান্তি সমাবেশ সফল করতে সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ মঙ্গলবার কাওরান বাজারের টিসিবি ভবন মিলনায়তনে বর্ধিত সভা করেছে। এই সভায় মহানগর উত্তরের অন্তর্ভুক্ত সব ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে উপস্থিত ছিলেন।
শান্তি সমাবেশের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো করার টার্গেট রয়েছে। আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মহানগর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের অনুরোধ করা হয়েছে এই সমাবেশ সফল করার জন্য। তারা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে শান্তি সমাবেশে যোগ দেবেন। আমরা সোমবার দক্ষিণের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, আমরা বুধবারের শান্তি সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মঙ্গলবার উত্তরের বর্ধিত সভায় মহানগরীর নেতাদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি বলেন, আমরা ভালো একটা সমাবেশ করব। সে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সমাবেশ সফলে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেবে।
বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনকে দলীয়ভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি দলটির সরকার আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংস পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে প্রশাসনিকভাবে প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়েছে।

এদিকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি সমাবেশ ডেকেছে।

এই সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। একই দিন রাজধানীতে সমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে একই দিনে একই সময় দুই দলের এই দুই সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। গত বছর নভেম্বর মাস থেকে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে।

বিএনপি কর্মসূচি দিয়ে যাতে কোনো ধরণের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য তৈরি করতে না পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগ এই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে এবং আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে বলে জানান দলটির নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবারও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ নামে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এ কর্মসূচি দিয়েছে। এই সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। বিএনপি যেন সমাবেশ থেকে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারও যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসনিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপির সমাবেশের কর্মসূচি থেকে উস্কানিমূলক কোনো কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাস, নাশকতা তৈরির চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে আগে থেকেই তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে সূত্রগুলো এও জানায়, বিএনপির আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচিকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। কেননা, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি আন্দোলনে চেষ্টা করছে, ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু কোনো আন্দোলনই দাঁড় করাতে পারেনি।

এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি যে দাবি নিয়ে আন্দোলনের কথা বলছে, তাতে জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তাদের এক দফা আন্দোলনেও জনগণ সাড়া দেবে না। তবে এই আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকে বিএনপি অরাজনৈতিক পথ বেছে নিতে পারে, বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন তারা।

নেতারা ভাবছেন, বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতো সরকারকে বেকায়দায় ফলতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে। যেহেতু তারা এখন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কথা বলছে, আর এর জন্য সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়, তবে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

আর এ কারণেই সরকার ও আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা দলগুলোর নেতাদের গতিবিধি খেয়াল রাখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হলে সঙ্গে সঙ্গে সরকার আইনগত সব রকম ব্যবস্থা নেবে বলেও জানায় সূত্রগুলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি কোনো আন্দোলন করতে পারবে না। তাদের কোনো জনসমর্থন নেই, আর আন্দোলন আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি বেশি জানে না।

তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি দিলে সেটা আমরাও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রশ্নই ওঠে না। এসব অযৌক্তিক দাবি নিয়ে বিএনপি যদি সন্ত্রাসের পথে হাঁটে, তাহলে সমুচিত জবাব পাবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রশাসন আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আমরা কাউকে মাঠ দখলে নিতে দেবো না, মাঠ ছেড়ে দেবো না। কালও (বুধবার) আমাদের আওয়ামী লীগের সমাবেশ আছে ৷ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে আছি। আমরা সেটা (সরকারের পদত্যাগ) হতে দেবো না।

বুধবার রাজধানীতে এক সমাবেশে সরকারপতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা দেবে বিএনপি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় সমাবেশ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘোষণা দিতে পারেন। যুগপত্ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও জোট আলাদাভাবে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেবে। এক দফা আন্দোলনে হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ, ঘেরাওসহ লাগাতার নানা কর্মসূচির প্রস্তাব রয়েছে। তবে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে চায় না। অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করতে চায়। পরিস্থিতি বাধ্য করলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে দলটি। এ জন্য বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বুধবারের সমাবেশের অনুমতির জন্য গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। পুলিশ বলেছে, তারা পর্যালোচনা করে অনুমতির সিদ্ধান্ত জানাবে। ঢাকা মহানগর বিএনপির সূত্র বলছে, সমাবেশে বড় ধরনের শোডাউন করতে ইতিমধ্যে কয়েক বার প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে।

বিকালেও সমাবেশ সফল করতে যৌথ সভা করা হয়েছে। সভা থেকে ঢাকা জেলা ও আশপাশের জেলার নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ লোকসমাগম করতে। একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর থানা ও ওয়ার্ডের নেতাদেরও।

জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীরা চেয়েছিল বিএনপির সঙ্গে এক মঞ্চ থেকে এক দফার ঘোষণা দিতে। কিন্তু বিএনপি চাইছে না এক মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিতে। সঙ্গীরাও ১২ জুলাই আলাদাভাবে এ কদফা ঘোষণা দেবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনবিষয়ক তথ্যানুসন্ধানী মিশন ১৬ দিনের সফরে ঢাকা এসেছে। এছাড়া এ সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী একটি প্রতিনিধিদল। তাই কিছুটা আগেই সরকারপতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এই এক দফার আন্দোলনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে চায় যে, তারা এই সরকারপতন আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে নেমেছে।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকেলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের  বলেন, বিএনপিকে এখনো সমাবেশের অনুমতি না দিলেও এর প্রক্রিয়া চলছে। আজকে অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

অনুমতি দিলে কোনো শর্ত থাকবে কিনা জানতে চাইলে গোলাম ফারুক বলেন, শর্ত থাকবেই। ২০ থেকে ২৫টি শর্তসাপেক্ষে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে।

এর আগে সোমবার (১০ জুলাই) নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ আয়োজনে ডিএমপি সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয় বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। এদিন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করে। তারা কমিশনারের কাছে সমাবেশ আয়োজনের সহায়তার জন্য লিখিত আবেদন জমা দেন। পরে কমিশনার সমাবেশ আয়োজনে সহযোগিতার মৌখিক আশ্বাস দেন।

এ্যানি জানান, সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে নয়াপল্টন তারা সমাবেশ আহ্বান করেছেন। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আলাপের সময় তারা সহযোগিতা চান। তারা আশা করছেন দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করে এ সমাবেশ সফল হবে।