।। এহসানুল হক জসীম ।।
ব্যস্ততায় কেটে গেলো পুরোটা দিন। একটু ফুরসত পেতেই এই সন্ধ্যায় বাবাকে নিয়ে লিখতে বসলাম। আজ বাবা হারানোর দিন; এগারো বছর আগে আজকের এই দিনে বাবা চলে যান ঘাসের নীচে। মৃত্যু কেবলই অমোঘ বাস্তবতা নয়; একদিন নিজ সন্তানও যে বাবাকে স্মরণ করার জন্য বা লেখার জন্য আলাদা সময় পাবে না, আর দুই/তিন প্রজন্ম পর নিজ বংশের কেউও যে মনে রাখবে না– এটাও ওয়ান কাইন্ড অব বাস্তবতা। ‘‘তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে।’’
বাবা কেবলই একটি সম্পর্কের নাম নয়। ‘বাবা’ সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে রয়েছে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার অনুভব। পরশ। বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবী প্রকাশ। সন্তানের কাছে বাবা কখনো ’মরহুম’ নন; নন ’মৃত’। যে বাবা সব সময় সন্তানের সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে থাকেন, সন্তানের সমগ্র সত্তা জুড়ে থাকে বাবার উপস্থিতি; সেই বাবা কখনো ‘মরহুম’ হতে পারেন না। সেই বাবাকেও একদিন চলে যেতে হয়। রেখে যেতে হয় নানা স্মৃতি।
আমার বাবা চলে যাবার পর এই আমিও আজ তিন সন্তানের বাবা হয়েছি। দিনশেষে সন্ধ্যায় এসে আজ বাবাকে কিছু লিখতে বসলেও আমার সন্তানেরা কি আমার মৃত্যুর এগারো বছর পর একটি বারও আমাকে মনে করবে? না-ও তো করতে পারে। আমার মৃত্যুর ৫০/১০০ বছরের পরের পৃথিবীর কেউ আমাকে চিনবে না– এটাই বাস্তবতা। ‘…রে মন আমার কেন বান্ধ দালান ঘর।’
মৃত্যুই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য। এমন এক সত্য, সুনির্দিষ্ট কোনো মুহূর্ত নেই। এই শেষ মুহুর্তের শুরু কিন্তু জন্মের পর থেকেই। কেউ নিশ্চিত হয়ে জানে না কখন কীভাবে তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। মরণ যেদিন আসবে দুয়ারে, কোন কৈফিয়ত ছাড়াই সাড়া দিতে হবে। এই চরম বাস্তবতা স্বজন-পরিজনদের মেনে নিতে বড়ই কষ্ট হয়। সেই ’মেনে নিতে বড়ই কষ্ট’ এর হয়েছে আজ ১১ বছর। ২০১১ সালের এই দিনে বাবা চলে যান না ফেরার দেশে।
এগারটি বছর হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। গভীর শ্রদ্ধার সাথে আজ বাবাকে স্মরণ করা ছাড়া, দোয়া করা ছাড়া আর তো কিছুই করার নেই। স্মরণের শব্দমালায় মরণেরে ঢেকে রাখার চেষ্টা বৈ কিছু নয়। বলতেই হয় কবির ভাষায় ”স্মরণের আবরণে মরণেরে যত্নে রাখে ঢাকি। জীবনেরে কে রাখিতে পারে।” দোয়া মাঙি, ওগো খোদা দয়াময়- আমার বাবার তরে যেন গো বেহেস্ত নসিব হয়। বাবাকে তো আর এই জীবনে দেখতো পাবো না কোনদিন। মৃত্যুর ওপারে যেন বাবার দেখা পাই।