বিরোধীরা আন্দোলন করুক,খবরদার কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয় : প্রধানমন্ত্রী

215

মিরর বাংলাদেশ : বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বিরোধীরা একটা সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করছে। সেটা করুক আমি তো চাচ্ছি। আমি নির্দেশ দিয়েছি, তারা আন্দোলন করছে, করতে দাও। খবরদার কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয়।
রবিবার আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিরোধী দলের আন্দোলনের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্দোলন করে তারা কতটুকু সফল হবে, সেটা জানি না। কিন্তু যেটা করছে তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। আমরা সেটা সামাল দিতে পারবো, সেই বিশ্বাস আমার আছে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শায়েস্তা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু আমরা নই, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ প্রত্যেকটা মহাদেশের মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জিনিসের ওপর প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ভুক্তভোগী না, সারা বিশ্বের মানুষই ভুক্তভোগী। মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। সেই কষ্ট লাঘবের জন্য আরও কী কী করা যায়, তার জন্য প্রতিনিয়ত আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মানুষের কষ্টটা যে বুঝি না, তা না। আমাদের বিরোধীরা একটা সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করছে। সেটা করুক আমি তো চাচ্ছি। আমি নির্দেশ দিয়েছিÍতারা আন্দোলন করছে, করতে দাও। খবরদার কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করবে, আমি আসতে দেবো। আজকেও আমি নির্দেশ দিয়েছিÍতারা আন্দোলন করছে, করতে দাও। খবরদার তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয়, বিরক্ত করা না হয়। তারা আন্দোলন করতে চায়, করুক। অসুবিধা কী?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করতেছি, সেটা দেশের মানুষ জানে ও বুঝে। হ্যাঁ না কথা বলবে। বিরোধী দল সুযোগ যখন পাচ্ছে, সেটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা যদি বেশি করতে চায়, এর প্রভাবে তো দেশের মানুষের কষ্ট তো আরও বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের তো কিছু লোক থাকেই, প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে খামোখা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। ওই ছুঁতো ধরে। সেটা হচ্ছে কিছু কিছু। হঠাৎ এত দাম তো বাড়ার কথা না প্রত্যেকটা জিনিসের। দেশের মানুষকে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচনি ইশতেহার পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা যেটা ওয়াদা দিয়েছি, সেগুলো সম্পূর্ণ করছি। করোনাভাইরাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দেশের কোনও সমস্যা হতো না বলে জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যে বিষয়গুলোতে আমরা আমদানিনির্ভর সেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিজ নিজ জমিতে সবাইকে উৎপাদন করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের খাবারটা যেন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি, বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়, সেই ব্যবস্থাটাই আমাদের নিতে হবে।’
নিষেধাজ্ঞায় আমেরিকা ও রাশিয়ার লাভ হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘রুবলের দামও বাড়ছে, ডলারের দামও বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী রুবল ও ডলার স্টক হয়ে গেছে। মরতেছে সব দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য চরম দুর্ভোগ। সব দেশে একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধে মানুষের জীবনে সর্বনাশটা ডেকে এনেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী চলমান মন্দার উল্লেখ করে বলেছেন, এ নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে বিরোধীদের আন্দোলন হতে পারে, কিন্তু বাড়াবাড়ি দেশের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের কষ্ট বাড়াবে যেটি তাদেরও বোঝা উচিত।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অপজিশনসহ নানা জনে নানা কথা বলবে, এর সুযোগ নেয়ারও চেষ্টা করবে কিন্তু তারা যদি এসব বেশি করতে যায়, তাহলে এর প্রভাবেইতো মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত।
তিনি বলেন, তারা আন্দোলন (বিএনপি) করে কতটুকু সফল হবে জানি না কিন্তু তারা যেভাবে করতে চাচ্ছে তাতে দেশের জন্য আরো ক্ষতি হবে। কিন্তু সেটা আমরা সামাল দিতে পারবো, সেই বিশ্বাস আমার আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি খবরদার যারা আন্দোলন করছে তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ঘেরাও দেবে, আমি বলেছি হ্যাঁ আসতে দেব। কেননা, আমরা যে আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করছি-দেশের কাজ করতে-দেশের মানুষতো সেটা জানে।
সরকার প্রধান বলেন, মানুষের কষ্ট যে হচ্ছে সেটা তার সরকার উপলদ্ধি করতে পারছে বলেই প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সাথে সাথে দেশেও সমন্বয় করা হবে। দেশের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যখনই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে আমরা সাথে সাথেই এ্যাডজাস্ট করবো, সেটাও আমার নির্দেশ রয়ে গেছে।
সমসাময়িক সংকট কাটাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবার পাশাপাশি উৎপাদন কমিয়ে আনায় তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো আর কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।