ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে এখন কলম বিক্রেতা রানা

534

মিরর বাংলাদেশ : নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় কিছুদিন আগেও রানা নামে যেই প্রতিবন্ধী ছেলেটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। এখন সে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছে। নিজেকে সম্মানিত করতে এখন মাস্ক আর কলম বিক্রি শুরু করেছে রানা। এমন পরিবর্তনে অনেকেই রানাকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন।

আইনজীবী শাহ মাজহারুল বলেন, রানা এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে কাছে এসে বলেন ভিক্ষা চাই না, একটা কলম নেন মাস্কও আছে নেন না ভাই। হঠাৎ রানার এমন পরিবর্তনে অনেকেই প্রয়োজন না হলেও ১০ টাকা দিয়ে একটি কলম অথবা মাস্ক কিনে নিচ্ছেন। আমিও একটি কলম কিনেছি।

আইনজীবী সহকারী আরিফ হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় অনেক ভিক্ষুক আছে সুস্থ স্বাভাবিক। আবার অল্প বয়সের অনেক নারীও রয়েছে যারা যে কোনো কর্ম করে খেতে পারে। কিন্তু করে না। এদের মধ্যে রানা ছিল ব্যতিক্রম। সে ঠিক মতো হাটতে পারে না। স্পষ্ট কথা বলতে পারে না। এজন্য রানাকে অনেকেই ভিক্ষা দিতেন। কিন্তু সেই রানা এখন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছে। এটা আসলে ভালো লাগার বিষয়।

রানা বলেন, ফতুল্লার পাগলা ভাঙ্গাপুল এলাকায় আমি বসবাস করি। বাসা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭ কিলোমিটার হেঁটে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় এসে ভিক্ষা করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পেতাম। এ টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। কিন্তু বোন বিয়ে দেয়ার পর নিজের কাছে লজ্জা চলে আসছে। আরেকটি বোন আছে সে বাক প্রতিবন্ধী কথা বলতে পারে না। তাকেও বিয়ে দিতে হবে।

সে বলে, বাবা মকবুল হোসেন এক বছর আগে মা ও আমাদের কাছ থেকে দূরে চলে গেছেন। শুনছি এরপর নাকি বাবা একাধিক বিয়ে করেছেন। আমার উপার্জনে চারজনের সংসার চলে। ভিক্ষাবৃত্তি অসম্মানজনক কাজ। ছোট বোনের জন্য আমাকে সম্মানী হতে হবে। তাই ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেছি।

রানা বলে, এখন কলম আর মাস্ক বিক্রি করছি। প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি করতে পারি। এ দিয়ে সংসার চলে আবার কিছু টাকা জমাতেও পারি। মা বলছে আর ভিক্ষা করার দরকার নাই। ব্যবসা করলে ভালো টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়ে ছোট বোনকে ভালো একটি ছেলের কাছে বিয়ে দিব।

রানা আরও বলেন, বড় বোন নূর নাহারকে বিয়ে দিয়েছি, সে সুখে আছে। ওই বোনের ছোট আমি আর আমার ছোট বিলকিস নামে আরেক বোন। আমাদের ছোট আরেকটি ভাই আছে বাক প্রতিবন্ধী রনি। মা রাবিয়া বেগম আগে অন্যের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই মাকে এখন আর কাজ করতে দেই না। এখন রনি ও বিলকিসকে নিয়ে মা বাসায় থাকেন।

রানা বলে, আমার অনেক দিনের সখ ছিল একটি এড্রোয়েড ক্যামেরা মোবাইল কিনবো। গত সপ্তাহে ব্যবসায় আয় করা ৩ হাজার টাকা দিয়ে একজনের কাছ থেকে পুরাতন একটি মোবাইল কিনেছি। রাতে বসে মোবাইল চালানো শিখি। এখন মোবাইলের লক খুলতে পারি। ছবি তুলতে পারি। এটাই আমার ভালো লাগে।