ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকলে আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন করতাম : প্রধানমন্ত্রী

203
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

মিরর বাংলাদেশ :  প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দলের নেতাকর্মীরা সকল ষড়যন্ত্র ও বাধাকে মোকাবেলা করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, ‘আঘাত আসবে, ষড়যন্ত্র হবে কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবে। সেটাই আমরা চাই।
শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগে নতুন আইন প্রণয়নসহ তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি আবারো আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। আগে নির্বাচন কমিশনের কোনো আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে রাখা ছিল, যেটা আমরা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্বাচন কমিশনের হাতে দিয়ে দিয়েছি। বাজেট থেকে সরাসরি তাদের টাকা দেয়া হয়। যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং বেশ কিছু স্থানে ইভিএম চালু করার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ইভিএম করার পরে আর কোনো ভোট জালিয়াতি করার সম্ভাবনা রয়েছে কি-না, তা আমার জানা নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন-২০২২ পাশ করেছি। আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকত, তাহলে আমরা এই আইন কেন করলাম? খালেদা জিয়ার মত ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতে পারতাম। তা তো আমরা করি নাই। কারণ আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি।
আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং জনগণের ওপর তাদের আস্থা আছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জানি ভোট নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। অনেকে বিষয়টাকে কন্ট্রোভার্শিয়াল করতে চান। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করে দিয়েছি। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করছেন। সেখানে আওয়ামী লীগ কোনও হস্তক্ষেপ করে না। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। বাজেট থেকে তাদের সরাসরি টাকা দেওয়া হয়। আমরা ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি। ইভিএম কিছু কিছু চালু হয়েছে। সেখানে কোনও কারচুপি করার সুযোগ আছে বলে আমরা জানি না।’
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংসদে পাস করার প্রসঙ্গ টেনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকতো, তাহলে আমরা এটা কেন করবো? খালেদা জিয়ার মতো ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতাম। তা তো আমরা করি নাই। আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে। বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, যার যেটুকু জমি আছে চাষ করেন। উৎপাদন করেন। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের উৎপাদন বাড়াচ্ছি। উৎপাদন বাড়িয়ে আমাদেরটা আমরা খাবো। কারও কাছে হাত পাতবো না। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতে হবে। আমাদের সেটা পারতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে গঠনতন্ত্র মেনে সময়োযোগী পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা ১০টি জেলা বাদে প্রতিটি জেলা ও অনেকগুলো উপজেলার সম্মেলন করেছি। যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলোর সম্মেলন আমরা করবো।’
জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ওই সময় বিদেশে থাকায় দুই বোন বেঁচে যাই। আমাদের রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। ‘৭৫-এর পর এ দেশের মানুষ শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়েছিল। এরপর এ রকম এক কাউন্সিলে আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ছোট বোন রেহানার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশে আসতেই হবে। এমন দেশে আসি যেখানে খুনিদের বিচার হবে না বলে ইনডেমনিটি দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা হয়েছিল। আমার থাকার জায়গা চিন্তা না করে চলে এসেছি। স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ না হয়, স্বাধীনতার সুফল যেন ঘরে ঘরে পৌঁছে, সেটা নিশ্চিত করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের পর থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। বঙ্গবন্ধু সেতু, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অনেক উন্নয়ন কাজ করে দেশকে একটি জায়গায় নিয়ে আসি। কিন্তু দুর্ভাগ্য ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। কেন পারিনি, সেটা আগেই বলেছি। বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ আমার জীবন থাকতে নষ্ট হবে না, কারও হাতে তুলে দেবো না– এই প্রতিজ্ঞাই আমার ছিল। হয়তো এই কারণেই আবার ক্ষমতায় আসতে পারিনি। তবে এতে আমার কোনও আফসোস নেই।’
ভোট চুরি করলে দেশের মানুষ মেনে নেয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। জনগণের আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রæয়ারি নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বাংলার জনগণ তাকে বাধ্য করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচনে কারচুপি করার যে চক্রান্ত করেছিল, তা দেশের মানুষ দেখেছে। মানুষ সেই চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেয়। তারপর ইমার্জেন্সি সরকার আসে। আমাকে গ্রেফতার করে। ২০০৮ সালে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।’
পরপর তিন টার্ম ক্ষমতায় থাকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসি। আজ ২০২২। এতদিন টানা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। বাজেট ১০ গুণ বাড়িয়েছে। কয়েক বছরে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করেছি। প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে তুলতে পেরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য কোভিড-১৯ অতিমারি সেই প্রবৃদ্ধি কিছুটা হলেও ব্যাহত করে। এরপরও আমরা এটা ছয় থেকে ৭ শতাংশ হারে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। তবে এখন আবার এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংকশন। এতে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত, হয়তো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত। তারা অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। তারপরও আমরা অর্থনীতি ধরে রাখতে পেরেছি। কিন্তু এর আঘাতটা তো আমদের ওপর আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাথাপিছু আয় ৫৩৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৮২৪ ডলারে উন্নীত করতে পেরেছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় আনতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, সরকার ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি। প্রতিটি ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। তবে দুর্ভাগ্য কোভিড অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, স্যাংকশন-পাল্টা স্যাংকশন। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। মূল্যস্ফীতি। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। আমাদের সেই ধাক্কায় পড়তে হলো। এ জন্য কিছুদিনের জন্য লোডশেডিং দিতে হয়েছিল। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছি। তবে আমার অনুরোধ থাকবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। এতে আপনাদেরও বিল করবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অনেক দেশ হিমশিম খেয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থেকেছে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে মোকাবিলা করেছি। বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। টিকা কেনার জন্য আগাম অর্থ দিয়েছি। বিনামূল্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ দিয়েছি। হাসপাতালে বেড বাড়িয়েছি। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। মানুষকে নগদ অর্থ দিয়েছি। কোনও শ্রেণি বাদ নেই, যাদের আমরা সহায়তা দেয়নি।’
ডাটা সেন্টার, স্কুল ফর ফিউচার, ইনকিউবেটর, হাইটেক পার্ক, আইটি সেন্টার ইত্যাদি গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যে আওয়াজ আমরা শুনছি, তার উপযুক্ত নাগরিক যাতে গড়ে ওঠে, সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি, সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা আয়োজন করেছি। আমরা ভবিষ্যতে দেখতে চাই জনশক্তি স্মার্ট হবে। তারা সবকিছু অনলাইনে করতে পারবে। আমাদের ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি। ২০৪১ সালের মধ্যে এটা করতে সক্ষম হবো