মৃত্যুকে ভয় করি না,দেশের মানুষের জন্য কাজ করব : প্রধানমন্ত্রী

246

 সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশ অনুষ্ঠিত

* অশিক্ষিত-মূর্খদের হাতে দেশ এগোতে পারে না
*  ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে গর্বে আমার বুক ভরে যায়

মিরর বাংলাদেশ  : আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করব। যেই চেতনা নিয়ে আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সারা জীবন কষ্ট সহ্য করেছেন, তার সেই স্বপ্ন পূরণ করব। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই দেশে ফিরেছিলাম। তারপর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল কীভাবে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।
শুক্রবার বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অল্প সময় পেয়েছিলাম, তখন বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করেছি। ওই সময় খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। বলেছিল, ছাত্রদলই নাকি আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর সেখানে আমি ছাত্রলীগের হাতে দিয়েছিলাম খাতা এবং কলম। বলেছিলাম, পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ না হলে, কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। আর অশিক্ষিত-মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে, সেই দেশের কোনোদিন অগ্রযাত্রা হতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগই এ দেশের সব সংকটে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে ছাত্রলীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি শহীদের খাতায় চোখ বোলাই তাহলে দেখব ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিটি অর্জন আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস- এই কথা বলে গিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। আমরা যে বিদেশে ছিলাম দেশে আসতে পারিনি, তখন আমাদের ফিরে আসার দাবিটা প্রথমে ছাত্রলীগ করে। এভাবে বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়ার জন্য উর্দু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। প্রথমে আঘাত আসলো আমাদের ভাষার ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এটার প্রতিবাদ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকাÐে গর্বে আমার বুক ভরে যায়। যদি তারা আদর্শ নিয়ে চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে অনেক সংগঠন মানবাধিকারের কথা বলে। ৮১ সালে যখন আমি ফিরে এসেছি, তখন তো আমি মা-বাবা-ভাইবোন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। জিয়াউর রহমান খুনিদের ক্ষমতায় বসায়। প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি বাবার স্বপ্নপূরণ ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করে দেশে এসেছি। মাঠের পর মাঠ হেঁটেছি। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছি। দেখতে চেয়েছি, এদেশের মানুষের কী অবস্থা? আমার বাবা-মার রক্ত নিয়ে তারা দেশের কী করেছে?
খালেদা জিয়া ছাত্রদলের মাধ্যমে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অশিক্ষিত-মূর্খদের হাতে দেশ এগোতে পারে না। এরা মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। তিনি বলেন, এদিকে ছাত্রলীগ মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ায়। কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে বলেছি, সবাই চলে গেছে মাঠে। কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকাÐে গর্বে আমার বুক ভরে যায়। যদি তারা আদর্শ নিয়ে চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকাÐে গর্বে আমার বুক ভরে যায়। যদি তারা আদর্শ নিয়ে চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।
ছাত্রলীগের শপথ :
ছাত্র সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে শপথ গ্রহণ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার বিকাল ৪টা ৫৪ মিনিটে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন মুষ্টিবদ্ধ হাতে নেতাকর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
সাদ্দামের ঘোষণার সঙ্গে নেতাকর্মীরা সূর মিলিয়ে উচ্চারণ করেন-‘আমরা বাঙালির মহান স্বাধীনতা ও পূর্ব পুরুষের পবিত্র রক্তে ভেজা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নব রূপায়নের রূপকার বাঙালির নির্ভরতার শেষ ঠিকানা দেশরত্ম শেখ হাসিনার নামে দৃঢ়চিত্তে শপথ করছি যে, তারুণ্যের স্বপ্নের স্বদেশ পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা এবং কন্যার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপোসহীন, অক্লান্ত আমৃত্যু সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকব।’
তারা আরও শপথ নেয়, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, বঙ্গমাতার সাধনা, দেশরতেœর সাহসকে নিজের জীবন গঠনে ও সমৃদ্ধ স্বদেশ গড়তে মূলনীতি মানব। তারুণ্য লড়বে, তারুণ্য গড়বে, তারুণ্য দেশবিরোধী সকল অপশক্তিকে পিতার তর্জনীর দাপটে ধ্বংস করবে। বাংলাদেশকে বিশ্বমানচিত্রে মর্যাদাশীল করতে দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াবে। জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশরত্ম শেখ হাসিনার প্রশ্নে এদেশের তরুণ প্রজন্মকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্র সমাবেশকে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে আগমনী রায় হিসেবে দেখছেন
ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ১৫ আগস্টের ঘাতক যারা রয়েছে এবং আজকেও যারা রাজনৈতিক মোড়কে বাংলাদেশে রাজনীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, গণতন্ত্রের মোড়কে দেশি বিদেশি মোড়কে যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করার চেষ্টা করে আজকের ছাত্র সমাবেশ থেকে আমরা বলতে চাই, খুনিদের রাজনীতি, সন্ত্রাসীদের রাজনীতি, জঙ্গিবাদের রাজনীতি বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ সমর্থন করে না। আমরা আজকে সুসষ্পষ্টভাবে বলতে চাই, নো কমপ্রমাইজ ইউথ দ্য কিলারস। হত্যাকারীদের সঙ্গে আপস করার রাজনীতি বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ কখনোই সমর্থন করবে না।
১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট ও জেল হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, তরুণ প্রজন্মের আত্মমর্যাদা এত ঠুনকো নয়, আমরা খুনিদের রাজনীতি বাংলাদেশে মেনে নিবো। সরকারের প্রতি আমাদের উদ্ধাত্ত আহ্বান থাকবে, ২১ আগস্টের ঘাতককে দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে বিচারের রায় কার্যকর করতে হবে। ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই, বন্যরা যেমন বনে সুন্দর, খুনি তারেক তেমনি কারাগারেই সুন্দর। অনতিবিলম্বে ২১ আগস্টের ঘাতক তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার আহ্বান আমরা রাখছি।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাÐ তুলে ধরে ছাত্রলীগের শীর্ষনেতা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণা এটি দলীয় কোনো বিষয় নয়। এটি গোটা বাংলাদেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। স্মর্ট বাংলাদেশ আজকে তরুণ প্রজন্মের কমন থিম। কমন ডেসটিনেশনে (গন্তব্য) পরিণত হয়েছে। এ কারণে আজকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের আগমনী রায় দেওয়ার জন্য আমরা এখানে এসেছি। বঙ্গবন্ধু তনয়া আমাদের সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন উপহার দিয়েছেন। উন্নত লেখাপড়ার সুযাগ দিয়েছেন। দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। দক্ষতার ভিত্তিতে যেন চাকরি পায় সেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আমরা সর্বজনীন পেনশন চাই নাকি সর্বজন টেনশন চাই সেই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে উন্নয়নের টানেল চাই নাকি মানিলন্ডারিং এর চ্যানেল চাই। এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের সাইবার যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।