রায়পুরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তন্নি অপহরণ মামলা, প্রধান আসামী গ্রেফতার

980

মিরর প্রতিনিধি লক্ষীপুর :
লক্ষীপুরে রেশমা আক্তার তন্নি (১৯) নামের এক মাদরাসার শিক্ষার্থী অপহরনের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রায়পুর থানায় মামলা দায়ের করেন তন্নি মা তাসলিমা আক্তার । এঘটনা মামলার প্রধান আসামী রনিকে মঙ্গলবার সন্ধায় গ্রেফতার করা হয়েছে। রায়পুর থানায় মামলা নং : ০৯ । মামলার বাকী আসামীরা হলেন পান্না বেগম ও শওকত। তন্নির পারিবারিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে ।
প্রায় আড়াইমাস ধরে নিখোঁজের ঘটনার পর তন্নি অপহরনের মামলা দায়ের করে পরিবার। তাদের ধারনা তন্নি পাচারকারীচক্রের কবলে পড়েছে। কৌশলে অপহরণের পর তন্নিকে আটক করে রেখেছে পাচারকারীরা। মেয়ে তন্নির জন্য কেঁদে কেঁদে হয়রান মা তাসলিমা আক্তার। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও রয়েছেন উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে। কোথায় গেলে, কার কাছে গেলে মেয়ের খোঁজ পাবে তা নিয়ে ছুটছেন তাসলিমা আক্তার। এঘটনায় ৭ ডিসেম্বর রায়পুর থানায় অপহরন মামলা দায়ের করেছে তন্নি মা তাসলিমা আক্তার।

 


মামা আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমার ভাগ্নি তন্নি অপহরনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ মঙ্গলবার সন্ধায় প্রধান আসামী রনিকে গ্রেফতার করেছে। তন্নির নিখোঁজের ঘটনায় রায়পুর থানা পুলিশ গত ২০ নবেম্বর সন্দেহভাজন রনি, তার বোন পান্না, বোনের জামাই ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ১৫ দিনের মধ্যে নিখোঁজ তন্নির সন্ধান দিবে এমন মুচলেকা দিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের জিম্মায় তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু মুচলেকা দেয়ার পরও তন্নির সন্ধান দিতে না পারায় আমরা বাধ্য হয়ে মামলা দায়ের করি। আমাদের একটাই দাবী তন্নিকে নিরাপদে উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি প্রদান।
তিনি জানান, তন্নি নিখোজ হওয়ার পর রনি তার বন্ধু শওকত লক্ষীপুর থেকে যশোরে গিয়েছিল এমন খবরও আমাদের নিকট রয়েছে। আমাদের ধারনা তন্নিকে কৌশলে অপহরণের পর ভারতে পাচার করা হয়েছে। কিংবা কোথায় আটক করে রাখা হয়েছে। আমারা প্রশাসনের সহায়তা কামনা করি।
জানা গেছে, লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানার ৪নং সোনাপুর ইউনিয়নের চরবগা গ্রামের মৃধা বাড়ির আব্বাস উদ্দিন ও তাসলিমা আক্তারের কন্যা রেশমা আক্তার তন্নি (১৯) গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তন্নি রায়পুর আলীয়া মাদরাসার আলিম শ্রেণির ছাত্রী এবং বামনী এলাকার আমিন উল্যাহর ছেলে প্রবাসী রাসেলের স্ত্রী।


তন্নির মা তাসলিমা আক্তার জানান, প্রায় দেড় বছর পূর্বে রাসেলের সাথে আমার মেয়ে রেশমা আক্তার তন্নি বিয়ে হয়। রাসেল বর্তমানে কাতারে রয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর তন্নি তার স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চরবগাতে আসে। ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে সাংসারিক বিষয় নিয়ে তার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। পরের দিনে ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি তন্নি ঘরে নেই। পরে আমার আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খুজে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল দুটি বন্ধ পাওয়া যায় ।
পরে আমি ২১ সেপ্টেম্বর রায়পুর থানায় সাধারন ডায়েরি করি। (জিডি নম্বর-১০৩৮/২০) জিডিতে উল্লেখ করা হয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ তন্নি নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁর সন্ধান মেলেনি। তাঁর গায়ের রং ফর্সা। উচ্চতা ০৫ ফুট ০১ ইঞ্চি, মুখমÐল গোলাকার । স্বাস্থ্য মাঝারি। পরনে সালোয়ার, কামিজ ও বেগুনী কালারের বোরকা পরিহিত ছিল।
তিনি জানান, আমাদের ধারনা অপহরণকারী চক্র তন্নিকে ফুসলিয়ে নিয়ে কোথাও আটক করে রেখেছে। তন্নির নিখোজের পর থেকে ‘মাফিয়া’ নামে একটি সিম থেকে ইমুতে এক যুবক তন্নি বাড়ির পান্না নামের এক মহিলার সাথে যোগাযোগ রাখছে। ঐ যুবক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। পান্নার সাথে তার নিয়মিত ইমুতে যোগাযোগ হচ্ছে। সে যুবক জানায় , তন্নি মালয়েশিয়া রয়েছে। আবার কখনো বলে, তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। আবার কখনো তন্নির ভোটার আইডি কার্ড দাবী করে। তবে পান্নাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের কথা শুনে যোগাযোগ বন্ধ রাখে পাচারকারীচক্রের সদস্যরা। পরিবারের দাবী তারা তন্নিকে সুস্থ অবস্থায় ‌দ্রুত ফেরত চায়। এব্যাপারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তন্নির পরিবার।