রূপগঞ্জে অগ্নিকান্ড : তদন্ত শুরু

348

* সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ৮ জন রিমান্ডে

কামাল উদ্দিন সুমন :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুসে কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৭টি গুরুত্বপূর্ন ‘ক্লু’ ধরে তদন্ত শুরু করেছে গঠিত তদন্ত কমিটি। এছাড়া এতো প্রাণহানি কেন ঘটলো তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক টীম। অগ্নিকান্ডে নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে । মামলায় সজীব গ্রæপের চেয়ারম্যানসহ ৮জনকে গ্রেফতার করার পর ৪ দিনের রিমান্ডে এনেছে। এদিকে অগ্নিকান্ডের ধংসস্তুপ কারখানাটিতে লাশের খোজে গতকাল তল্লাশি করে ফায়ার সার্ভিস। দীর্ঘ সময় ধরে কারখানাটি আগুন না নেভার কারনে অনেকে স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে ,ধেবে গেয়ে কয়েক স্থানে । ভবনটি ধসে আশংকা করছে ফায়ার সাভিস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অগ্নিকান্ডের কারন, ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানির ঘটনার অনুসন্ধানে গঠিত দুটি তদন্ত টীম অনুসন্ধান করেছে। প্রাথমিক ভাবে ৭টি ‘ক্লু’ ধরে অনুসন্ধান চলছে আরো অনেক সম্পুরক বিষয় আসছে তদন্তে। এমনটা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একজন । ভবন নির্মানে ত্রুটি , অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা,দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি শিশু শ্রম,ফ্লোরে তালাবদ্ধ, পহেলা জুলাই শ্রমিকদের বেতন ভাতার দাবীতে আন্দোলন ,১১২জন এস আরকে চাকরিচ্যুতকরে তাদের মোটর সাইকেল নিলামে বিক্রি এসব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিক ভাবে ভবনের অনুমোদন নেই, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছিলনা এমনটার প্রমান পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত কমিটির প্রধান নারায়নগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী গতকাল শনিবার সন্ধায় জানান, আমরা তদন্ত শুরু করেছি। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত রিপোর্ট তৈরী হলে জানানো হবে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম জানান, সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছেন। অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত কোথা থেকে, কী কারণে আগুন এমন ভয়াবহ রূপ নিলো, এত শ্রমিকের প্রাণহানি কেন ঘটলো, আগুন লাগার পর শ্রমিকরা কারখানা থেকে কেন বের হতে পারেননি, এটা শুধু দুর্ঘটনা নাকি অন্য কিছু, কারখানা নির্মাণে ত্রুটি ছিল কি-না ও মালিকপক্ষের গাফিলতি কতটুকু সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ গ্রফতার ৮ জন ৪ দিনের রিমান্ডে :

আগুনের ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যানসহ ৮জনকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজধানীর গুলশানের বাসবভন থেকে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসেম (৭০), তার ছেলে হাসীব বিন হাসেম ওরফে সজীব (৩৯), তারেক ইব্রাহীম (৩৫), তাওসীব ইব্রাহীম (৩৩), তানজীম ইব্রাহীম (২১) এবং সজীব গ্রুপের প্রধাণ নির্বাহী কর্মকর্তা শাহান শান আজাদ (৪৩), কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ (৫৩) ও মো. সালাউদ্দিন (৩০)।তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় গ্রেফতার আট জনকে ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এরআগে তাদেরকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গ্রেফতার আট জনকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে নেয়া হয়। আদালত শুনানী শেষে ৮ আসামীদের প্রত্যেককে ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক হুমায়ুন কবির জানান, রুপগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ভুলতা পুলিশ ফাড়ীর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নাজিমউদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ৩০২, ৩২৬, ৩২৫, ৩২৩, ৩২৪, ৩০৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-১৯)। এ মামলায় আট জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তিনি জানান, গ্রেফতারদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

নুন্যতম গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা :স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রূপগঞ্জের আগুনের ঘটনায় কারো ন্যূনতম গাফিলতি থাকলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে যারাই দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিচার হবে।
শনিবার দুপুরে রূপগঞ্জের কর্ণগোপে সেজুন জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় তার সাথে ছিলেন নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার মো: জায়েদুল আলমসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
মন্ত্রী বলেন, এখানে কতজন লোক কাজ করতো তা আমরা তদন্ত করছি। এঘটনা দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে, তদন্তের পর আমরা বলতে পারবো।
তিনি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। যারা মারা গেছেন তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা করা হবে। আহত যারা বেঁচে আছেন তাদের চিকিৎসা খরচ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, একটা দুর্ঘটনায় অনেকগুলো মানুষ মারা গেছে। মামলা তো হবেই। তদন্ত হবে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিচার হবে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে কিছুই বলছি না। তদন্তে দোষী প্রমাণ হলে অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজ শুরু করে। ইউএনও, ডিসি-এসপি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ভবনের নির্মাণ কাজ ও শ্রমিকদের তদারিকতে ত্রুটি থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মালিকসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী মনে করেন তাদের হয়তো সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সেই জন্যই তারা আটজনকে আটক করেছে।

ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল, ধসে পড়ার আশংকা

নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের কর্ণগোপে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হাশেম ফুড লিমিটেডের ছয়তলা ভবনটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ভবনের কিছু অংশ দেবে গেছে, ফাটল ধরেছে আরো কিছু অংশে। রয়েছে ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা। প্রায় ২২ ঘণ্টা একটানা আগুনে পোড়ার কারণে এমনটা হয়েছে জানান তারা।
শনিবার সকাল ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের ভবনের ষষ্ঠ তলায় কাজ করতে দেখা যায়। পানি ছিটিয়ে ডাম্পিংয়ের কাজ করছেন তারা। খুঁজে দেখছেন আর কোনো লাশ আছে কি-না। বেলচা ও কোদাল দিয়ে লাশ খুঁজতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক তানহার বলেন, শুক্রবার দুপুরে ৫০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে আগুন থেকে বাঁচতে ভবন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। নতুন করে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। তবে তারা খুঁজে দেখছেন আর কারো লাশ পাওয়া যায় কি-না। একই সাথে পানি ছেটাচ্ছেন ভবনের প্রতিটি তলায়। যাতে নতুন করে কোথায়ও আগুনের সৃষ্টি না হয়।
এ দিকে ভবনের কিছু অংশ দেবে গেছে এবং ফাটল দেখা দিয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ভবনের ষষ্ঠ তলা ও ছাদের কিছু অংশ দেবে গেছে। ধসে পড়েছে ষষ্ঠ তলার একটি অংশ। ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
সকালে পুরো ভবন ঘুরে দেখা যায়, ছয়তলা ভবনটির উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি সিড়ি এবং দক্ষিণ-পূর্ব পাশে আরেকটি সিড়ি রয়েছে। দুটি সিড়িই ভবনের ছাদে গিয়ে শেষ হয়। ছাদে দেখা যায়, সেখানে আগুনে পোড়ার চিহ্ন অনেকাংশে কম। দুই পাশের সিড়ির কিছু অংশে পোড়ার কারণে কালো হয়ে আছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তানহার জানান, দক্ষিণ-পূর্ব পাশের সিড়িটি নেটের জাল দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া ছিল। আর উত্তর-পশ্চিম পাশের সিড়িতে জ্বলছিল আগুন। যার ফলে ভবনে আটকে পড়া শ্রমিকরা ছাদে উঠতে পারেননি। ছাদে ওঠার উপায় থাকলে অনেকের প্রাণ বাঁচানো যেত বলে মনে করেন তিনি।

নিহতদের পরিচয় জানতে এক মাস সময় !

রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডসের (সেজান জুসের) কারখানায় অগ্নিকান্ডে নিহতদের পরিচয় জানতে এক মাস সময় লাগতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী সবুজ। শনিবার এ তথ্য জানান তিনি
তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২৬ টি মরদেহের বিপরীতে ৩৫ জন দাবিদারের নমুনা সংগ্রহ করেছি। এখনও সব দাবিদার আসেননি। তারা এলে পর্যায়ক্রমে তাদের নমুনা নেয়া হবে। একইসঙ্গে যাদের নমুনা নেয়া হয়েছে সেগুলো ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। সব মিলিয়ে আশা করা যায় এক মাস সময়ের মধ্যে পরিচয়গুলো আমরা শনাক্ত করতে পারব।’
নিহতদের পরিচয় রূপগঞ্জ থানা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জানা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিহতদের পরিচয় রূপগঞ্জ থানা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জানতে পারবেন স্বজনরা। তারা এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট। ওনাদের মাধ্যমে পরিবারগুলো তথ্য পেতে পারে।
মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী আরও বলেন, ‘আমরা রেফারেন্স নমুনা সংগ্রহ করছি। মৃত ব্যক্তির দাবিদাররা এসেছেন। তাদের কাছ থেকে রক্ত নিচ্ছি। ডেডবডির দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ধরনের নমুনাগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব।’

কারন অনুসন্ধানে একধিক টিম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে ও কীভাবে হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। এদিকে বকেয়া বেতন ও ভাতার দাবিতে এক সপ্তাহ আগে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এর সঙ্গে কারখানায় অগ্নিকান্ডের কোনও সম্পর্ক আছে কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এসব কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শূঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম।
ইতোমধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে। কারখানায় কর্মরত শ্রমিক থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা। আগুন লাগার পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি-না তা অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে।
করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাইন শুরুর প্রথম দিন বকেয়া বেতন ও ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন সেজান জুস কারখানার শ্রমিকরা। তার এক সপ্তাহের মাথায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো। এতে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, শ্রমিকদের বেতন ও ভাতার দাবিতে বিক্ষোভের সঙ্গে কি অগ্নিকান্ডের কোনও সম্পর্ক আছে? শ্রমিক বিক্ষোবের এক সপ্তাহের মাথায় কেন আগুন লাগলো?

বকেয়া বেতনের দাবিতে গত ১ জুলাই বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা
কারখানার একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেজান জুস কারখানায় শ্রমিকদের এক মাসের বেতন বকেয়া রেখে চলতি মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ, সব সময়ই এক মাসের বেতন বকেয়া থাকে। যে কারণে বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। কিন্তু মালিকপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে বকেয়া বেতন ও ওভারটাইমের টাকার দাবিতে গত ১ জুলাই শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
তাই, মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে কোনও দ্বন্ধের কারণে কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে কি-না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

নিখোঁজদের তালিকায় যারা ছিলেন :
নারায়ণগঞ্জের হাকিম আলীর মেয়ে ফিরোজা বেগম, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ফিরোজা, তার মেয়ে সুমাইয়া, উপজেলার গোলাকান্দাইল আফজালের স্ত্রী নাজমা বেগম, গোলাকান্দাইল খালপাড়ের রাজিবের স্ত্রী আমেনা, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার গোলামের ছেলে মো. মহিউদ্দিন, একই উপজেলার ফখরুল ইসলামের ছেলে শামীম, ভোলা জেলার ইসমাইলের মেয়ে হাফেজা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার তাহের উদ্দিনের ছেলে নাঈম, একই জেলার নিতাই উপজেলার স্বপনের মেয়ে শাহিদা, মৌলভীবাজারের পরবা বরমনের ছেলে কমপা বরমন, ভোলার তাজুদ্দিনের ছেলে রাকিব, কিশোরগঞ্জের কাইয়ুমের মেয়ে খাদিজা, নেত্রকোনার জাকির হোসেনের মেয়ে শান্তা মনি, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সেলিমের স্ত্রী উর্মিতা বেগম, কিশোরগঞ্জের কাইয়ুমের মেয়ে আকিমা, নেত্রকোনার কবির হোসেনের মেয়ে হিমা, রংপুরের মানসের ছেলে স্বপন, কিশোরগঞ্জের মাহাতাব উদ্দিনের স্ত্রী শাহানা, কিশোরগঞ্জের আব্দুর রশিদের মেয়ে মিনা খাতুন, পাবনার হাঠখালির শাহাদত খানের ছেলে মোহাম্মদ আলী, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ফজলুর ছেলে হাসনাইন, জামালপুরের মো. শওকতের ছেলে জিহাদ রানা, কিশোরগঞ্জের মো. সেলিমের মেয়ে সেলিনা, নরসিংদীর শিবপুরের জসিম উদ্দীনের স্ত্রী রিমা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সুজনের মেয়ে রিনা আক্তার, চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার হাছান উল্লাহর ছেলে পারভেজ, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার গোকুলের ছেলে মাহাবুব, গাজীপুরের সেলিম মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া (ইয়াসিন), ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মান্নান মাতাবরের ছেলে নোমান মিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আবল কাশেমের ছেলে রাসেদ, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার এনায়েতের ছেলে বাদশা, ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ইউসুফ, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার আবুল বাসারের ছেলে জিহাদ, শাকিল, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের খোকনের স্ত্রী জাহানারা, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার কবিরের ছেলে মো. রাকিব, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার সুরুজ আলীর মেয়ে ফারজানা, কিশোরগঞ্জের চানমিয়ার ছেলে নাজমুল, কিশোরগঞ্জের বাস্তু মিয়ার ছেলে তাছলিমা, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মো. রাকিব, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মো. বাহারের ছেলে মো. আকাশ, কিশোরগঞ্জের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাছলিমা, কিশোরগঞ্জের আজিজুল হকের মেয়ে মোছা. রহিমা, গাইবান্ধার প্রফেসর কলনির হাসানুজ্জামানের মেয়ে নুসরাত জাহান টুকটুকি, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার চান্দু মিয়ার মেয়ে রাবেয়া, কিশোরগঞ্জের মালেকের মেয়ে মাহমুদা, নেত্রকোনার খালিয়াঝুড়ি উপজেলার আজমত আলীর মেয়ে তাকিয়া আক্তার, হবিগঞ্জের আব্দুল মান্নানের মেয়ে তুলি, কিশোরগঞ্জের নিজামউদ্দিনের মেয়ে শাহানা, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ফয়জুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সজীব, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার লালচু মিয়ার ছেলে লাবণ্য আক্তার।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানার ছয়তলার একটি ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে প্রাণ হারান কারখানার ৫৩ জন শ্রমিক-কর্মচারী। ফায়ার সার্ভিস ও বেঁচে ফেরা শ্রমিকদের দেয়া তথ্য মতে, ভবনের নিচতলায় প্রথমে আগুন লাগে। নিচতলায় ছিল ফয়েল প্যাকেটসহ বিভিন্ন কার্টন। এসব সহজেই দাহ্য হওয়ার কারণে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনের অন্যান্য তলায়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই ভবনের দু’টি দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আগেই কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়লে ভীত-সন্ত্রস্ত শ্রমিকরা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন ভবন থেকে। এই ঘটনায় আহত দুই নারীকে রাতেই পার্শ্ববর্তী ইউএস বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তারা। পরে গুরুতর আহত আরো এক পুরুষ শ্রমিক মারা যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।