সরানো হলো শ্মশানের মাটি, নতুন গিলাফে শামীম ওসমানের বাবা-মা ভাইসহ স্বজনদের কবর

395

* তদন্ত করে দোষিদের বিচার হওয়া উচিত : শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা :

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের বাবা-মা ও অন্য স্বজনদের কবরে পার্শ্ববর্তী শ্মশানের পুকুরের মাটি এনে দেওয়া হয়েছিল৷ সাংসদের আপত্তির পর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সে মাটি অপসারণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দুপুরে শামীম ওসমান মাসদাইর কবরস্থানে আসেন । এব বাবা মা ভাইসহ স্বজনদের কবরে নতুন করে ছাদরে ঢেকে দেন। এসময় তিনি কবর জিয়ারত ও দোয়ায় অংশ নেন।
এর আগে সোমবার দুপুরে মাসদাইরে কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থানে আসেন সাংসদ শামীম ওসমান। তিনি কবরস্থান মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও পুকুরের সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের সাথে কথা বলেন। শ্মশানের পাশের পুকুরের মাটি তার স্বজনদের কবরে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মাটি অপসারণের জন্যে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন শামীম ওসমান৷ সাংসদের এই নির্দেশনার পরপরই শ্রমিকদের মাধ্যমে মাটি অপসারণের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মিজান কন্সট্রাকশনের মালিক মিজানুর রহমান।
মঙ্গলবার দুপুরে কবর জিয়ারত শেষে
একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, যারা এ খেলা খেলছেন কিংবা খেলাচ্ছেন তাদেরকে বলি, মৃত্যুকে ভয় পান। যেতে হবেই আপনি যে ধর্মের হননা কেন। আমি ধৈর্য্যশীল কারণ আমি আমি একজন নেত্রীর কর্মী যিনি বিষকে হজম করেন। তার মত নীলকন্ঠী নেত্রীর কর্মী হিসেবে আমিও চেষ্টা করছি বিষকে হজম করতে। হয়তো উনার মত হতে পারবোনা তবে আমরা রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। যদি নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধৈর্য্যচ্যূতি ঘটে তবে আমি তো নারায়ণগঞ্জের মানুষের বাইরের কেউনা। তাই অনুরোধ করবো অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

এ ঘটনায় মেয়র আইভী কোন ফোন করেছেন কিনা বাঁ সমবেদনা জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি আমি এখন পর্যন্ত উনার কাছ থেকে কোন ফোন পাই নাই, তবে আশা করেছিলাম যে ফোন অথবা খুদেবার্তা হলেও পাঠাবে। এরকম কিছু পাঠাননি তিনি। এতে সিটি করপোরেশন জড়িত নাকি জড়িত নয় আমি বুঝতে পারছিনা।

শামীম ওসমান বলেন, আমার বাবা মা ভাইয়ের নামে নারায়ণগঞ্জে সড়ক ও ব্রিজের নামকরণ করা হয়েছে। এটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কাগজ যায় সেটি সকল দপ্তর হয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাস্তবায়ন হয়। নারায়ণগঞ্জের কিছু লোক গত ৮ বছর ধরে বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন আমরা সহ্য করছি। কারণ আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের পছন্দ করেন। আমার নেতাকর্মীরা, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিরা কাল উত্তেজিত ছিল। আমি তাদের একটা কথাই বলেছি এই মাসটা আমাদের পিতার মৃত্যুবার্ষিকী, শোকের মাস। আমাদের বংশ নির্বংশ করা হয়েছিল এ মাসে। এ মাসে আমরা এমন কোন কর্মকান্ড করতে পারিনা যাতে জাতির পিতার অসম্মান হয়। আশা করি আমরা নায্য বিচার পাব। আমি মনে করি, এ বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত হবে এবং দোষীদের বিচার হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার কোন কিছু থাকেনা এটাই (কবরস্থান) তার শেষ ঠিকানা। এখানে যা হয়েছে আমার মনে হয় তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা। এখানে এ পুকুরে পিন্ড দান করা হতো। আগে কবরস্থান ও শ্মশানের মাঝে দেয়াল তৈরী করে পরে উন্নয়ন কাজ শুরু করলে ভালো হতো।

‘আমি এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সিইও কিংবা এক্সিকিউটিচ ইঞ্জিনিয়ার যারা সরকারের পয়সা খান এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষের ট্যাক্স এর পয়সায় লালিত পালিত আমি তাদের দেখিও নাই, আমি একজন এমপি আমার সাথেই কথা বলেননি অন্য কারো সাথে কথা বলার তো প্রয়োজনই মনে করেন না।’

এমপি বলেন, আমি তো আমার আব্বা আম্মা দাদা দাদী ভাইয়ের কবর তো উদ্ধার করলাম আপনাদের সহযোগিতায়। কিন্তু বাকি কবরগুলোর যে অবস্থা এখানে যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টা কবর সেগুলোর কি হবে। শ্মশানের মাটি এখানে আসতে পারেনা কারণ প্রত্যেকটা ধর্মেরই একটা রীতি আছে যা মেনে আমাদের কাজ করা উচিত। মসজিদের সামনে আমি কোরবানি দিতে পারি কিন্তু আমি কোনদিন একটা মন্দিরে কোরবানি দিতে পারিনা। কেউ যদি চায় তাহলে সেটা সাম্প্রদায়িকতা নষ্ট করার একটা প্রয়াস। শ্মশানের মাটি এখানে কবরে দিয়ে দেয়া হয়েছে যেটা কোন মানুষ মানতে পারেনা। এটা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা ও শোকের মাসে যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তাদের প্রতি চরম অবমাননা।

‘এখানে কোনটা কার কবর আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছিনা। যাদের স্বজনদের কবর এখানে তাদের কি অবস্থা। আমি তো আমার কথা বলে নিজে হালকা হচ্ছি তারা কি করবে। আমি কারো বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইনা। দুনিয়ায় যে আযাব আসছে এগুলো বিনা কারণে আসেনা।’

তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম আজ এখানে সে দেখবো নাসিকের সিইও। আইভীর কথা বলবোনা কারণ কিছুদিন আগে তার মা মারা গেছে। এখানে আসার মত অবস্থা নাও থাকতে পারে বাঁ মহিলা মানুষ কবরস্থানে নাও আসতে পারে নিয়ম কানুন আছে আমি জানিনা। সিইও কোথায় যার অধীনে কাজ হয়েছে, যার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের হদিস নেই।

এমপি আরো বলেন, সিটি করপোরেশন কাজ না করলেও আমরা কাজ করছি। এখানে অধিকাংশ আমাদের শ্রমিক। ঠিকাদারও কাজ করেছেন। এই খাদেম কে তার অতীত ইতিহাস কি সেটাও আমাদের জানা দরকার কারণ টুপি তো অনেকেই পড়ে মসজিদে তো অনেকেই যায়। অনেকের রূপ তো আমরা অনেকদিন ধরে দেখছি। যে যদি মোয়াজ্জিন হয়ে থাকে মসজিদের কাজ করে থাকে তাহলে তো তার জানা উচিত এখানে শ্মশানের মাটি দেয়া যায়না। আমি জানিনা সে দায়ী কিনা তদন্ত হওয়া উচিত।