শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবি : ঘাতক কার্গো জাহাজ আটক

303

রিপন মাহমুদ আকাশ, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিতে ৩৪ জনের নিহতের ঘটনায় ঘাতক এসকেএল-৩ নামক কার্গো জাহাজটিকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। জাহাজটি বাগেরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের মালিকানাধীন এসকে লজিস্টিকস নামক প্রতিষ্ঠানের।

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে জাহাজটিকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ। জাহাজের কয়েকজন স্টাফকেও আটকের কথা জানান ডিসি। তবে আটকের সংখ্যাটি জানাতে পারেননি তিনি। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, জাহাজের অন্তত ১৪ জন স্টাফকে আটক করা হয়েছে।

গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা পাঁচটা ছাপ্পান্ন মিনিটে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যায় এম এল সাবিত আল হাসান নামে যাত্রীবাহী লঞ্চটি। তখনও কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হয়নি। লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ৬৮ জন হলেও সেদিন তারও কম যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হয়েছিল বলে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা। অনুমানিক সোয়া ছয়টার দিকে মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যায় নির্মাণাধীন সেতুর অদূরে এসকেএল-৩ (রেজিস্ট্রেশন নং: ০১-২৬৪৩) নামে একটি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে। সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লঞ্চটিকে ঠেলে অন্তত ২০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে দেয় কার্গোজাহাজটি। এর মধ্যেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শী ও জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, রাতেই অন্তত ৩০ যাত্রী সাঁতরে জীবিত অবস্থায় নদী পার হতে সক্ষম হন। পাওয়া যায় পাঁচ নারীর লাশ। নিখোঁজ ছিলেন আরও অনেকে। এরপর দুইদিন উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আরও ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ৭ শিশু, ১৩ পুরুষ ও ১৪ নারী।

শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবিতে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় হত্যার উদ্দেশে বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী জাহাজ চালিয়ে যাত্রীবাহী লঞ্চটি ডুবিয়ে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আসামির তালিকায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলাটি তদন্ত করছে নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা পুলিশ।

মামলার বাদী বাবু লাল বৈদ্য জানান, পেনাল কোড ২৮০, ৩০৪, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৩৭ ধারাসহ ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ৭০ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। হত্যার উদ্দেশে ও বেপরোয়া গতিতে নৌযান চালিয়ে ৩৪ জনকে হত্যা সংঘটিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় এসকেএল-৩ জাহাজটিকে আটক করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে পাগলা কোস্টগার্ডের মাধ্যমে কার্গো জাহাজটিকে আটক করা হয়। সাথে জাহাজের কয়েকজনকেও আটক করা হয়েছে। জাহাজ ও আটক স্টাফদের নারায়ণগঞ্জ নৌ থানার কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।