শুধু একটাই প্রশ্ন সব সময়,কেন ১৫ আগষ্টের হত্যাকাণ্ড? : প্রধানমন্ত্রী

382

মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংসার সামলানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতেও সহযোগিতা করেছেন ।
রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২১ প্রদান’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম স্বাগত ভাষণ দেন।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন। এছাড়া, পদক বিজয়ীদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন।
এই প্রথমবারের মত প্রবর্তিত ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ পদকটি নারীদের জন্য ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক হিসেবে গণ্য হবে। পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৪০ গ্রাম ওজনের একটি পদক, ৪ লাখ টাকার চেক, সার্টিফিকেট এবং উত্তরীয় প্রদান করা হয়।
পদক বিজয়ীরা হচ্ছেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ বেগম (মরনোত্তর), জয়াপতি (মরনোত্তর), মোসাম্মাৎ নুরুন্নাহার বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল এবং নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ)।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আজকে যারা পদক পেলেন সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি সংগ্রামে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অসামান্য অবদান রয়েছে। আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সারাজীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের মানুষের জন্য চিন্তা করতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। রাজনীতিতে ব্যাপক সক্রিয় থাকলেও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা গেরিলা সংগঠন বেগম মুজিবের কর্মকাণ্ড কখনো আঁচ করতেও পারেনি।

তিনি বলেন, একটা গেরিলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমি সবসময় বলি, আমার মা ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা। তিনি গোপনে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতেন, দিক-নির্দেশনা দিয়ে আসতেন। আমাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও হয়েছে। ছয় দফা ছেড়ে অনেক নেতা চলেও গেছেন। আমার মা তখন খুব শক্ত ছিলেন ছয় দফার পক্ষে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যে পরিবারে জন্ম নিয়েছেন, পড়াশোনা করে অনেক বড় জায়গায় যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার জীবন দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাকে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন আমার মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। সংকটে-সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার মায়ের যদি নানা রকম চাহিদা থাকতো। স্বামীর কাছে মানুষের নানা ধরনের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা থাকে। অনেক কিছু পাওয়ার থাকে। আমার মার, বাবার কাছে কোনো কিছুর চাহিদা ছিল না। তিনি সবসময় বলতেন, তুমি দেশের কথা চিন্তা করো। আমাদের কথা ভাবতে হবে না। প্রেরণাটাই দিয়ে গেছেন। আমার মায়ের যে অবদান রয়েছে, এ দেশের রাজনীতিতে, শুধু তাই না, বাংলাদেশের মানুষের অগ্রগতিতেও তার অবদান আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার মায়ের অভ্যাস ছিল বইকেনা। নিউমার্কেট থেকে তিনি বই কিনতেন। আমাদেরও নিয়ে যেতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রতিটি মেয়ের শিক্ষা নেয়া উচিত এবং আর্থিক সচ্ছলতা দরকার। খালি অধিকার অধিকার বলে চিৎকার করলেই হবে না।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শুধু একটাই প্রশ্ন সব সময়, কেন এই হত্যাকাণ্ড? আমার মা, ভাইয়েরা, যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন, জীবনের সুখ-আহ্লাদ একটা জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য বিলিয়ে দিলেন, সেই বাঙালিই তাদের কেন হত্যা করলো?