সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাবে না আওয়ামীলীগ : প্রধানমন্ত্রী

283

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন

* জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই
* ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করলাম আর আমাদের বলে ভোট চোর
* জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সব থেকে ভালো প্রার্থীকেই বেছে নেবে
* গণতান্ত্রিক ধারা নষ্ট করতে সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে

মিরর বাংলাদেশ : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা দেশ কাউকে ‘লিজ’ দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি বলেন,এখনো যদি বলি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেবো, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।
বুধবার গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বুধবার বেলা ১২টা ১২ মিনিটে এই সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয়।
২০০১ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, এই দেশের কোনো সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে তিনি ক্ষমতায় আসতে চান না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে তিনিও ক্ষমতায় থাকতে পারতেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে আমেরিকা বাংলাদেশের কাছে ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়’ এবং সেজন্যই তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরীক দল জাসদ ও ওয়ার্কাস পার্টির নেতারা সংসদে কথা বলেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে কথা বললেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমি কাউকে খেলতে দেবো না। আমাদের দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালাবে, অ্যাটাক করবে, এটা আমি হতে দেবো না”
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে আমেরিকার চাপ মোকাবেলা এবং ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ভারতের সহায়তা চেয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিষ্কার করার জন্য অনুরোধ করেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একজন সাংবাদিক।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘’এখানে একটা বিষয় ভুলভাবে পত্রিকায় ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, ভারত যথেষ্ট পরিপক্ব, পররাষ্ট্র বিষয়ে তারা কী বলতে হবে জানে। কাজেই ভারতের কাছে আমাদের ওকালতি করার দরকার হবে না।‘’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘’আমাদের প্রতিবেশী দেশের সাথে আমাদের সদ্ভাব রয়েছে, কিন্তু তারা কী করবে না করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আমাদের সংবিধান আছে, দেশের আইন আছে, যেভাবে হওয়ার কথা, সেভাবেই হবে।‘’
শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী যখন নির্বাচন হওয়ার কথা, তখন নির্বাচন হবে। আর বিশেষ কারো প্রতি যাতে নির্ভরশীল হতে না হয়, সেই জন্য ব্রিকস জোটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে নানারকম উদ্বেগ আছে, তা নিরসনে নির্বাচন এগিয়ে আনা হবে কিনা? একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
‘’কী এমন পরিস্থিতিতে পড়লেন যে, নির্বাচন আগে দিয়ে আপনাদের মুক্তি দিতে হবে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী যখন নির্বাচন হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময় আছে, সেই সময় নির্বাচন হবে,” বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে, অনেক রক্ত দিয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। আপনারা কি চান যে, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক? এই ধারা আছে বলেই এতো উন্নতি হয়েছে।নির্বাচন কমিশন যখন ঘোষণা দেবে, তখন ইলেকশন হবে। জনগণ ভোট দেবে। যদি আমাকে ভোট দেয়, আমি আছি, না দিলে নাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘’নির্বাচন নিয়ে একেকজন একেকটা কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক।…যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল, যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছে, যারা এই দেশের গণতন্ত্র হরণ করে গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেজেছে, স্বাভাবিকভাবে তারা কখনো এই দেশের কল্যাণ চাইবে না। তারা একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইবে। সেখানে দেশী-বিদেশী নানারকম লোক থাকবে।‘’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘’দুর্ভাগ্য হলো, আমরা ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করলাম আর আর আমাদের ভোট চোর বলে যারা হলো ভোট ডাকাত। যাদের উত্থান হচ্ছে ডাকাতি করে খুন করে, হত্যা করে। আমাদের সরকারের আমলে যে কয়েকটা নির্বাচন হয়েছে, আপনারাই বলেন সবগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে কিনা?….তারপরও নির্বাচন নিয়ে কারা প্রশ্ন তুলছে? জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন যারা সহ্য করতে পারছে না, তারাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশে অস্বস্তিকর কোনো পরিবেশ নেই। মানুষ ভোট দিলে আবার ক্ষমতায় আসবো, না দিলে নয়।‘’
নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘’যেহেতু আমাদের দেশে ওয়েস্টমিনিস্টার টাইপ গণতন্ত্র অনুসরণ করি, তাই ইংল্যান্ডে যেভাবে নির্বাচন হয়, আমাদের এখানেও সেভাবেই নির্বাচন হবে।‘’
তিনি বলেন, বিরোধী দল থেকে নানা প্রস্তাব, এখন তত্ত¡াবধায়ক সরকার চায়, খালেদা জিয়ার উক্তি ছিল, বলেছিলেন, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরক্ষেপ নয়। এই পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, এখন আবার সেটাই তারা ফেরত চায়। উচ্চ আদালতের রায় আছে, সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে।‘’ শেখ হাসিনা বলেন, একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকার প্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। এর বাইরে আর কিছু, অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না। এটা সকলেই জানে, জানার পরেও আমি জানি না কেন সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যটা কী? তার মানে হলো এই যে গণতান্ত্রিক ধারা নষ্ট করা, বাংলাদেশের যে আর্থসামাজিক উন্নতি চলছে, সেটা নষ্ট করা। দেশবাসী এখন কিভাবে নেবেন, সেটাই আমার প্রশ্ন।‘’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘’আমার প্রশ্ন এখানে, আজ যে বিএনপি এবং কিছু দল মাঠে নেমেছে, তাদের অসুবিধাটা কোথায়? সমস্যাটা কী? মানুষ দুই বেলা পেটভরে ভাত খাচ্ছে। এতো ইনফ্লোশনের মধ্যেও মানুষের খাবারের অভাব তো ওভাবে হচ্ছে না। একটু চাপে আছে মানুষ, আমি জানি, সেই কষ্ট আমি বুঝি। তাই আমাদের প্রচেষ্টা আছে, যতটা সহজ করা যেতে পারে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।‘’
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা মিলে নতুন যে জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে যোগ দিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সুইৎজারল্যান্ড সফরের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসার সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগদানের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘’ব্রিকস জোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানাই। তিনি বলেন, ব্রিকসের আগামী সম্মেলনে নতুন সদস্যের বিষয়ে আলোচনা হবে।‘’
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘’ব্রিকসে আমরা যোগ দেবো এই কারণে, এটা প্রথম যখন প্রস্তুতি নেয়, আমি এর সাথে ছিলাম, আছি। আমরা ফাউন্ডার মেম্বার হতে পারিনি, এখন চাইছি মেম্বার হতে। আমরা চাচ্ছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একটার ওপর যেন নির্ভরশীল হতে না হয়। অন্যান্য দেশের সাথেও যেন আমাদের বিনিময়ের সুযোগ থাকে।‘’
তিনি বলেন,প্রয়োজনীয় জিনিস যেন সহজে ক্রয় করতে পারি, দেশের মানুষের কষ্ট লাগব করতে পারি, সেজন্য আমরা ব্রিকসের সাথে আছি। এখানে আমরা দেখবো যে, বিকল্প কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারের উদ্যোগ যদি কেউ নেয়, আমরা তার সাথে আছি।‘’
তিনি বলেন,ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি দেশের সাথে আমরা আলোচনা করছি যে, নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে আমরা যেন ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি। শুধুমাত্র ডলারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে যেন আমরা নিজেদের অর্থ বিনিময়ের মাধ্যমে কেনাবেচা করতে পারি, সেজন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া আছে। যখন সেটা কার্যকর হবে, আপনারা দেখতে পাবেন
আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সব থেকে ভালো প্রার্থীকেই বেছে নেবে বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন এলে সবাই প্রার্থী হবে, সেটা স্বভাবিক। যারাই প্রার্থী হবে তাদের মধ্যে থেকে জনপ্রিয় প্রার্থীকে বেছে নেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে গণতন্ত্র আছে। আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। একটি গণতান্ত্রিক ধারা অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যায়। রক্ত দিয়েই আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বলেই দেশে উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে।’
‘নির্বাচন এলে সবাই প্রার্থী হবে সেটা স্বভাবিক। যারাই প্রার্থী হবে তাদের মধ্যে থেকে জনপ্রিয় প্রার্থীকে বেছে নেব। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এটা আওয়ামী লীগের দাবি। ক্ষমতা ভোগ করতে আসিনি। চারবার ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের জীবন উন্নত করেছি। সাড়ে ১৪ বছরে দেশে উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগকে যারা ভোট চোর বলে তাদের সমালোচনা করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আমরা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলাম আমাদেরই বলে ভোট চোর। যারা আমাদেরকে ভোট চোর বলে তারা ভোট ডাকাত।’
এক প্রশ্নের জবাবে নিত্যপণ্য কারা অবৈধভাবে মজুদ করছে সাংবাদিকদের খুঁজে বের করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু লোক আছে যারা অবৈধভাবে মজুদ করে রাখে। তারা অবৈধভাবে মজুদ করে রেখে পচায়ে ফেলে দেবে। যারা অবৈধভাবে পণ্য মজুদ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নিচ্ছিও।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা অবৈধ মজুদ করে রাখে তাদেরকে খুঁজে বের করেন। যারাই অবৈধভাবে মজুদ করে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’