মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৭৫-পরবর্তী সরকার দেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়। তিনি বলেন, সামরিক শাসকরা ভালো কথা বলে ক্ষমতায় এলেও প্রকৃতপক্ষে তারা দেশের মানুষের কোনো উপকার করতে পারে না।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য সামগ্রিক অবস্থা ও ভূরাজনৈতিক বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কেবল অন্যের তত্ত¡ নয়, নিজের মেধা ও চিন্তাকেও কাজে লাগাতে হবে। যেটার প্রমাণও আমরা পেয়েছি গত ১৪ বছরে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শিক্ষা–সব খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। তাই নিজের দেশকে জানতে হবে, অনুভব করতে হবে; তাহলেই উন্নয়ন টেকসই ও গণমুখী হবে।’
রবিবার বিশ্বব্যাপী শীর্ষ র্যাংকিংয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আয়োজিত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১০ জনকে পিএইচডি ফেলোশিপ ও ৩৮ জনকে মাস্টার্স ফেলোশিপ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বক্তব্য রাখেন।স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিআইইউ’র মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল লতিফ।মাস্টার্স ও পিএইচডি ফেলোদের পক্ষে যথাক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিবলী ইসলাম এবং গণস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী আফিফা আনজু তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পিএইচডি ফেলো, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব ড. কেম এম আলমগীর কবির তার অনুভূতির কথা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গবেষণার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিভাগের গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার পিএইচডির জন্য যেসব বরাদ্দ দিয়েছিল, বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করে দেয়। বর্তমান সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতিটি খাতের উন্নয়ন করা।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ নৌকায় ভোট দেবে এমন ধারণা থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। যে কটা কাজ ছিল গণমুখী–২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সবই বন্ধ করে দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। মেধা বিকাশের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী জনবল গঠনে জোর দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাবে। পিছিয়ে থাকবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা কখনোই অন্যের মডেলের ওপর নির্ভর করবো না। দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে আমরা নিজস্ব মেধা ও চিন্তার প্রয়োগ ঘটাবো।’
তিনি বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, প্রাকৃতিক পরিবেশ, দেশবাসীর মানসিকতা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যে ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত আমাদের দেশকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং অনুভব করতে হবেÍ যেখান থেকে আপনি জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করতে আপনাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জ্ঞানের সঙ্গে দেশের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার জ্ঞানকে সমন্বয় করতে হবে, যা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।’
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতিটি খাতে উন্নয়নের জন্যে সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সঠিক পরিকল্পনা যে দেশকে সার্বিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা গত সাড়ে ১৪ বছরে তারা প্রমাণ করেছেন।বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্যে এ পর্যন্ত ২৭৭ জনকে মাস্টার্স এবং ১০৮ জনকে এই পিএইচডি ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে।
জনগণের অর্থে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে জনগণ ও দেশের কল্যাণে কী অবদান রাখছেন, তা সবসময় ভেবে দেখতে পিএমএফ ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা । তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি উচ্চশিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে আপনারা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কী করছেন, তা মনে রাখবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব ছেলেমেয়ে অত্যন্ত মেধাবী, কারণ তারা বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি আমাদের ছেলেমেয়েদের বলতে চাই, তোমরা প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি সুযোগকে কাজে লাগাও।’তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই। আমরা পিছিয়ে পড়তে চাই না।’
মেধাবীদের দেশের মশাল বাহক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মেধাবীরা তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ, শিক্ষা ছাড়া কোনও জাতির উন্নতি সম্ভব নয়।
২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তার সরকার শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য ফেলোশিপ প্রদানসহ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মেরিটাইম, অ্যারোস্পেস, এভিয়েশন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মতো বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করেছে।
তিনি বলেন, তার সরকার গবেষণা ও বিজ্ঞানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং উচ্চশিক্ষার্থীদের গবেষণায় গুরুত্ব দিতে বলেন।সরকারপ্রধান বলেন, গবেষণার মাধ্যমে তারা দেশের খাদ্যকে পর্যাপ্ত করে তুলেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিকিৎসা-বিজ্ঞানে গবেষণা খুবই কম। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমাদের আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’
তিনি বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে ও আজকের তরুণরাই হবে স্মার্ট দেশ গড়ার সৈনিক। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি কেউ থামাতে পারবে না
Home প্রধান সংবাদ ৭৫-পরবর্তী সরকার দেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয় :...