ছবি : সাবরীন চৌধুরী,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ,রায়পুর লক্ষীপুর। (ছবিটি উপজেলা প্রশাসনের ওয়েব সাইট থেকে নেয়া )
কামাল উদ্দিন সুমন : শুধু দায়িত্ববোধ নয়, তিনি মনে প্রাণে লালন করেন মানবিকতা। করোনা দুর্যোগের শুরু থেকে রায়পুরের মানুষকে ভালো রাখার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ছুটে চলছেন উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। রায়পুরের মানুষ যেন ভালো থাকে সে জন্য শুরু থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনামুলক প্রচারনা। এছাড়া অসহায় মানুষের মাঝে সরকার নির্ধারিত ত্রান বিতরণ করে যাচ্ছেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে। মানুষের যেন কোন কষ্ট না হয় সেজন্য তিনি নিজে দাঁড়িয়েছেন রায়পুরের মানুষের পাশ্বে।এটা তার দায়িত্বের পাশাপাশি মহানুভবতা । জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে। সবশেষ তিনি কতোটা মানবিক তার প্রমান মিলে নিজ উদ্যোগে বিতরন করছেন খাদ্য সামগ্রী, ফল ফলাদিও শিশু খাদ্য। দিচ্ছেন নবজাতকের জন্য নতুন জামা। এর নামে রয়েছে ভালোবাসার পরশ। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘স্নেহের আচল’। তিনি সাবরীন চৌধুরী। লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা । ৩১ তম ব্যাচের এ সরকারী কর্মকর্তাকে রায়পুরের মানুষ বলছেন ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’।
গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর রায়পুর উপজেলায় যোগদান করে মাত্র ৮মাসের মাথায় তিনি তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে রায়পুরের মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন।
করোনার এ দু:সময়ে তিনি রায়পুরের মানুষের জন্য যা করছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। অনেকে বলেছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন মহানুভবতায় আমরা মুগ্ধ।
রায়পুরে একমাত্র করোনা আক্রান্ত শিশুর পরিবারের রাখালিয়ার বাড়িতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসহায় পরিবারকে সাহস দিয়েছেন । সকল বিপদে তিনি পাশ্বে আছেন জানিয়েছেন। ঐ পরিবারের জন্য ফল ফলাদি, খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়েছেন।
৬ মে ইউএনও রায়পুর লক্ষীপুর নামের ফেসবুকে সাবরীন চৌধুরী লিখেছেন
ভূমিষ্ঠ হয়েই, এই কি দেখি!
করোনায় ব্যস্ত বিশ্ব,
আমার কান্না কেউ শোনে না
‘আমি’ আর ‘মা’, নিঃস্ব…!!
গর্ভবতী মা এবং সন্তান প্রসব পরবর্তী মা ও নবজাতকের যত্নে, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগঃ
“স্নেহের আঁচল”
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার জন্য সরকারী আদেশ মেনেই লকডাউন করা হয়েছে রায়পুরকে। অধিক নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করতে হয়েছে দোকানপাট, সীমিত করতে হয়েছে জনসমাগম। হাসপাতাল কিংবা বাড়ি, জন্ম কিংবা মৃত্যু…সব জায়গায় সচেতনতায় থমকে গেছে কান্না এবং হাসি। করোনা পরিস্থিতিতে জন্ম নেয়া সকল সদ্যজাত শিশুর অবুঝ দৃষ্টির নেপথ্যে হয়তো’বা নির্লিপ্ত আছে এমন অব্যক্ত হাজারো প্রশ্ন ? যার ভাষা জানা নেই আমাদের কারোরই। লকডাউন পরিস্থিতিতে এমন অনেক মা’ আছে যারা পায়নি দু’মুঠো দু’বেলা ভাত বা পুষ্টিকর কোন খাবার…তবুও উদ্ভাসিতমুখে কিছুটা শংকায় কিছুটা আতংকে লড়াই করেছে গর্ভে লালিত সন্তানকে এ পৃথিবীর আলো দেখাতে।
করোনা পরিস্থিতিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, স্বজনপ্রীতিতে, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে, কম-বেশি সকল দুয়ারে পৌঁছানো হয়েছে খাদ্য সহায়তা কিন্তু নজরে আসেনি নবজাতক শিশু এবং পুষ্টিহীনতায় জর্জরিত অনেক মায়ের কান্না। আর তাই এই পরিস্থিতিতে, নবজাতক শিশু যে কিছুটা হলেও বঞ্চিত হয়েছে আত্মীয় স্বজনের স্নেহ থেকে কিংবা আয়রোজগার বন্ধ থাকায় যে মা ও শিশু বঞ্চিত হয়েছে পুষ্টিচাহিদা হতে…সেই গর্ভবতী মা এবং সন্তান প্রসব পরবর্তী মায়েদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির কথা বিবেচনা করে এবং নবজাতক শিশুদের কিছুটা স্নেহের ছোঁয়া দিতে গত ০৪/০৫/২০২০ তারিখে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সদ্য জন্ম নেয়া ০৫টি নবজাতক শিশু ও তাদের মায়েদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় “স্নেহের আঁচল”।
করোনা পরিস্থিতিতে মা এবং মায়ের কোল সুস্থ ও নিরাপদ রাখার উদ্দেশ্যে পাঠানো এই উপহার সামগ্রীর মধ্যে পুষ্টিকর খাদ্য ও ফলমূল ছাড়াও সাবান, মাক্স এবং নবজাতক শিশুর জন্য নতুন কাপড় রয়েছে। [উল্লেখ্য, নবজাতক শিশুকে নতুন জামা উপহার দিতে কাজে লাগিয়েছি মহিলা বিষয়ক দপ্তরের অসহায় প্রশিক্ষণার্থীদের… এ সময় তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার প্রত্যাশায়।
মা ও শিশুর যত্নে ‘স্নেহের আঁচল পৌঁছে দিতে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), রায়পুর এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নব যোগদানকৃত ডাক্তারবৃন্দ। এভাবে সবাই সচেতনতার পাশাপাশি স্নেহের পরশে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসুন, এখন’তো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের।
জনসেবায় সর্বক্ষণ
জনগণের দোরগোড়ায় প্রশাসন।
রায়পুর উপজেলায় প্রথম (১৩) বছরের এক শিশুর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। রায়পুর উপজেলায় এটিই প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা। সোমবার রাত ১১টার দিকে ওই শিশুর নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়। শনাক্ত হওয়া রোগীর বাড়ি উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামে।
মঙ্গলবার সকালে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাকির হোসেন। এর আগে চট্টগ্রাম বিআইটিআইডি হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে থেকে এ তথ্য লক্ষ্মীপুর জেলার সিভিল সার্জন আবদুল গাফ্ফারকে জানানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নিয়ে আক্রান্ত পরিারের বাড়িতে যান। পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদের শান্তনা দেন। সাহস দেন। এবং ঐ পরিবারের জন্য ফল ফলাদি খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেন। সেখান থেকে ফিরে এসে
ইউএনও রায়পুর লক্ষীপুর নামের ফেসবুকে সাবরীন চৌধুরী লিখেছেন
করোনায় আতংক নয়, সচেতনতায় জয়…..!!
করোনায় সচেতন করার পাশাপাশি ১৩ বছরের শিশুর আতংক দূর করার প্রত্যয়ে পৌঁছে দেয়া হয় “স্নেহের আচঁল”…….!!
গতকালকেও যে ছেলেটি বন্ধুদের সাথে দুরন্তপনায় ফুটবল খেলেছে মাঠে, গোসল করেছে পুকুরে, বাজারে গিয়েছে বাবা’র সাথে, রাত হতে না হতেই তার বাড়িটাকে করা হলো লকডাউন। রাতের অন্ধকারেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের ‘আইসোলেশন কেবিনে ‘। ষষ্ঠ শ্রেণির ১৩ বছরের এই ছেলে শিশুর শরীরে বাহক হয়েই করোনা ভাইরাস প্রথমবারের মতো রায়পুর উপজেলায় তার আগমনের বার্তা পৌঁছে দেয় এভাবে। সকালে ছোট্ট এই বাচ্চাটির কান্নাকাটির প্রেক্ষিতে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা বলে আলাদা কক্ষ, বাথরুমের ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনের উপস্থিতিতে ছেলেটিকে তার বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়।
তার বাড়িসহ আশেপাশের ০৬টি বাড়ির ১৭টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। পুরা এলাকায় লাল পতাকা দিয়ে মসজিদে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে। সকলেই যেন লকডাউন মেনে চলে সে জন্য গ্রাম পুলিশ দিয়ে পাহারার ব্যাবস্থার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
করোনা পজেটিভ হওয়ায় দ্রুত আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে পরিবারের সকলকে যথাযথভাবে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি শিশুটির ভেতরের আতংককে দূর করতে এবং যথার্থ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্দি করে রোগীকে করোনা মোকাবেলায় উৎসাহ প্রদানের জন্যব্যক্তিগত উদ্যোগেই রোগীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয় “স্নেহের আঁচল” শিরোনামে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, টিস্যু, ডেটল সাবান, ট্যাং,
আদা, তরমুজ, আপেলসহ লেবু, কাঁচা আম, মাল্টা তথা করোনা প্রতিরোধে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের উপহার সামগ্রী। এভাবে সবাই সচেতনতার পাশাপাশি স্নেহের পরশে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসুন, এখন’তো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের।
জনসেবায় সর্বক্ষণ
জনগণের দোরগোড়ায় প্রশাসন।
রায়পুরের মানুষকে সচেতন করার জন্য এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখেছেন
প্রিয় রায়পুরবাসী,
পরিশেষে রায়পুর উপজেলায় ০১(এক) জনের করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে ….ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। রহমতের এই মাসে সবাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে মাফ চাই, রহমত চাই।
এইতো শুরু হলো একজনকে দিয়ে….শেষ সংখ্যাটা অজানা। আজ আসলেই বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, অনিরুদ্ধ করোনাকে পারলাম না ঠেকাতে, আক্ষরিক অর্থেই এই (সামাজিক) আন্দোলনে আজ হেরে গেলাম। তবুও বলবো….
মৃত্যুর মিছিলে যেতে নাহি চাই………
রুখতে চাই করোনাকে, সচেতনতায়!
সবাই ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন
নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচতে সহায়তা করুন
সাবরীন চৌধুরীর মতো সৎ নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের কারনে সরকারের কার্যক্রমের গতিশীলতা আরো বাড়ছে। মানুষের দৌরগোড়ায় পৌছে যাচ্ছে সেবা।