মিরর বাংলাদেশ : এরশাদের জাতীয় পার্টিতে নতুন করে আবার বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। এরশাদের পুত্র জাপার আজীবন চেয়ারম্যান হিসেবে রওশা্ন এরশাদকে ঘোষণা দিয়েছেন । অপরদিকে এর প্রতিক্রিয়ায় জিএম কাদের বলেছেন, একই ব্যাক্তি দুই দল করার সুযোগ নেই। তাদের এই বাদানুবাদের কারনে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন জাপাতে নুতন করে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে পার্টির আজীবন চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে এরিক এরশাদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কে আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে এই ঘোষণা দেন এরশাদ পুত্র। এ সময় রওশন-বিদিশা-সাদ-মামুনকে নিয়ে জাপার কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভার আয়োজন করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট।
স্মরণসভায় কাজী মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিদিশা সিদ্দিক, মাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী প্রমুখ। সভা শেষে এরিক ঘোষিত নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান উপস্থিত নেতাকর্মীরা।
নতুন ঘোষিত এ কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয় এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে। কো-চেয়ারম্যান করা হয় এরশাদের সাবেক সহধর্মিণী বিদিশা সিদ্দিক ও এরশাদের আরেক ছেল রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদকে। এ সময় এরিক এরশাদ তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমার বাবা যখন অসুস্থ ছিলেন তখন রাতে বেলা আমার চাচা জিএম কাদের বাবাকে জিম্মি করে অবৈধভাবে পার্টির চেয়ারম্যান পদে স্বাক্ষর করিয়েছিলেন। এগুলো আটকাতে হবে, প্রতিহত করতে হবে।’
অসুস্থতাজনিত কারণে রওশন এরশাদ সভায় উপস্থিত না থাকলেও উপস্থিত ছিলেন সাদ এরশাদ। নিজের বক্তৃতায় বাবা ও মায়ের জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি। এদিকে বিদিশা সিদ্দিক তার বক্তব্যে এরশাদকে সারা দেশের মানুষের কাছে বাঁচিয়ে রাখার অভিপ্রায়ে এরিকের ঘোষিত নেতৃত্ব অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনা করার ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়া এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ তার বক্তব্যে এরশাদকে স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে জাতির পিতা ও তার পরিবারকে স্মরণ করে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘দেশের সংবিধান অনুযায়ী যে কেউ রাজনৈতিক দল করতে পারে। তবে একজন ব্যক্তি একসাথে দুটি দল করতে পারেন না। রাজনৈতিক দল কেউ করলেই হবে না। নির্বাচন কমিশন থেকে সেই দলের নিবন্ধন নিতে হবে।’ রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করার জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, কে কাকে কী ঘোষণা দিয়েছে তা জানি না। যে কেউ যেকোনো ঘোষণা দিতে পারে।
গতকাল বুধবার দুপুরে পরে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে জিএম কাদের তার প্রতিক্রিয়া জানান। দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার উদ্যোগে এ খাবার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার ছেলে এরিক এরশাদ বেগম রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং বিদিশা ও শাহাদাতকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। বিজ্ঞাপন
জিএম কাদের বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ভ্যাকসিনের অভাবে জনগণ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। গ্রামের জনগণ ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার নেই, নার্স নেই, ওষুধ নেই। চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মেগা উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, অথচ জনগণ চিকিৎসা, খাদ্য নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। মানুষ মারা যাচ্ছে আর সরকার উন্নয়নের কথা বলছে। আমরা এমন উন্নয়ন চাই না। এমন দেশ চাই না।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জেনারেল এরশাদ একজন সামরিক ব্যক্তি হয়েও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। আজকে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ।
তিনি বলেন, একদিকে মেঘা প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছ। আবার বলা হচ্ছে টাকার কোনো সমস্যা নেই। তাহলে করোনা পরিস্থিতিতে কেন ২০ হাজার কোটি টাকা অসহায় মানুষদের জন্য দেওয়া যাবে না। তাই বলতে চাই, কালক্ষেপণ না করে এখনই বাস্তব পদক্ষেপ নিন।