টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা অর্জনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বর্ধিত তহবিল প্রয়োজন —প্রধানমন্ত্রী

224

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে এক শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য অধিক খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী একটি ‘স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ পেশ করেছেন।
‘জাতিসংঘ ফুড সিস্টেমস সামিট ২০২১’-এ আজ ভার্চুয়াল যোগদান করে, তিনি একই সাথে একটি বৈশ্বিক জোট ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে খাদ্যের অপচয় হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার, যা সকল নাগরিকের কল্যাণ ও স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে।’
৭৬ তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ)’র উচ্চ পর্যায়ের সপ্তাহে বক্তৃতাকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন , খাদ্য নিরাপত্তা জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসংযুক্ত।
পূর্ব-রেকর্ডকৃত বক্তৃতায় ‘২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জনসংখ্যা ১০ বিলিয়ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য আরও খাদ্য উৎপাদন করা অপরিহার্য।’
শেখ হাসিনা তার পরামর্শে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি উন্নয়নের জন্য গবেষণা, বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তি বিনিময়ের ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা অর্জনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বর্ধিত তহবিল প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা টেকসই নিরাপত্তা অর্জনে প্রযুক্তি শেয়ারিংসহ জলবায়ুজনিত চরম ইভেন্টগুলোর সাথে অভিযোজনের জন্য প্রতিশ্রæত তহবিল ছাড়েরও পরামর্শ দেন।
তিনি এ শীর্ষ সম্মেলনে আয়োজনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মহামারী পরবর্তী পুরুদ্ধার এবং স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে এই অনুষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় প্রণীত কাংলাদেশের সংবিধানে খাদ্য ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এজেন্ডা ২০৩০ অর্জনে আমাদের জাতীয় নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনায় খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরকে একটি অন্তর্ভুক্ত হাতিয়ার হিসেবে সমন্বিত করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি-২০২০ এবং এর কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২০৩০) দেশের খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে … আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছি এবং আমরা দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি।’
তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘনঘন চরম আবহাওয়া-জনিত দুর্যোগ এই গতিবেগকে প্রভাবিত করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বৈশ্বিক নেতা হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা নিয়েও কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি আমরা সবার জন্য মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছি।’
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেছেন।
তিনি এখানে লটে নিউইয়র্ক প্যালেসে শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় এই প্রশংসা করেন।
পরে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক কার্যক্রমের ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ (ইউএন) মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে স্বাগত জানান।
জাতিসংঘ বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলোকে গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মত বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো জাতিসংঘেরও অগ্রাধিকার।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের উচ্চপদে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আরো বেশি সদস্য নিযুক্ত করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে জাতিসংঘের সাড়া দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুতেরেস এই আহ্বানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন এবং তিনি এটিকে ন্যায্য মনে করেন ও বাংলাদেশের জন্য আরো কিছু করতে চান।
এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব এই ব্যাপারে বাংলাদেশের সুনাম অর্জনের কথা এবং শান্তি রক্ষা মিশনে তাদের সাফল্যের গল্প রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
ড. মোমেন বলেন, একটি গতিশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশকে জাতিসংঘ ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
গুতেরেস বাংলাদেশের এবং দেশটির সার্বিক অর্জনের ব্যাপারে এর নেতৃত্বের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদপ্তরে নেদারল্যান্ডের রাণী ম্যাক্সিমা, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান ফুক এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মাদ সহিলের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
নেদারল্যান্ডের রাণী ম্যাক্সিমার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে তাঁর সরকার ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা চালু করার চিন্তা ভাবনা করছে।
এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মাদ সহিলের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে ড. মোমেন বলেন, মালে ও চট্টগ্রামের মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ চালু করার ব্যাপারে উভয় দেশ কাজ করছে।
ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান ফুকের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে ফুককে অনুরোধ জানান।