গ্যাস সংকটে আড়াইহাজারে মুখ থুবড়ে পড়ছে হাজার কোটি টাকার শিল্প

245

মিরর বাংলাদেশ :
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে শিল্প কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকটে চরম বিপর্যয়ে মুখে পড়েছে। এতে ওই এলাকায় থাকা হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে বিপাকে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অর্ডার রয়েছে ব্যাপক। কিন্তু সময়মত পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় একের পর এক বাতিল হচ্ছে বায়ার অর্ডার। নতুন অর্ডারও দিচ্ছেন না বায়াররা। মেশিন বসিয়ে রেখে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ সব মিলিয়ে গ্যাস সংকটে পতিত ওই প্রতিষ্ঠানগুলো মিল মালিকদের গলার কাটায় পরিনত হচ্ছে। । হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যে কোন সময়ে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিল্প মালিকরা।
জানা গেছে, গত ১৭ জুন আদমজী ইপিজেডের ভেতরে পাইলিং করার সময় তিতাস গ্যাসের পাইপ ফেটে যায়। এ কারণে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত শতাধিক শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ প্রায় সাতদিন বন্ধ থাকে। এরপর গ্যাস চালু হলেও সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
মিল মালিকরা জানায়, নারায়ণগঞ্জ ও আড়াইহাজারে গ্যাস নির্ভর শিল্প কারখানার সবগুলোতেই এই গ্যাসের সমস্যা চরমে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিথিলা টেক্সটাইল, ফকির ফ্যাশন, ভাই ভাই স্পিনিং, সানমুন টেক্সটাইল, রায়া স্পিনিং, নান্নু টেক্সটাইলের মতো বস্ত্র ও পোশাক খাতের স্পিনিং, উইভিং, ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং ও ওয়াশিং কারখানার মতো অসংখ্য শিল্প কারকখানা। এমন একটি বড় শিল্প কারখানা আড়াইহারের মিথিলা টেক্সটাইল। প্রায় ৪০ বিঘা জায়গার উপর নির্মিত শতভাগ রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রমের কথা জানিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাহবুব খান হিমেল জানান, প্রায় তিন মাস ধরে গ্যাস সংকট ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করেছে। যেখান ১৫ পিএসআইয়ের বেশি চাপ দরকার সেখানে চাপ এক পিএসআইয়ের নিচে নেমে এসেছে। বাধ্য হয়ে ডাইংয়ের পাঁচটি বার্নারের মধ্যে চারটি বার্নার বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। দ্রæত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সময়মতো পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। এতে ক্রেতার আস্থা ও বাণিজ্য হারাবে বাংলাদেশ, সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ব্যাহত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।
উৎপাদনের ক্ষতির বর্ননা দিয়ে তিনি বলেন, ‘একবার গ্যাসের প্রেশার চলে যাওয়ার ফেব্রিক্সের সিনক্রোনাইজ করে ফের চালু করতে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা সময় লাগে। মেশিনের লেংথে থাকা হাজার হাজার গজ কাপড় নষ্ট হয়।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে ‘তাদের’ (কর্তৃপক্ষ) তো কোন সমস্যা নেই। হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এতে দেশের শ্রমিকদেও কর্ম সংস্থান হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়া গেলে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। চরম ক্ষতি সম্মুখীন হতে হবে।
এ বিষয়ে তিতাসের এমডির সঙ্গে সাক্ষাত করার কখা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ আমি তিতাসের এমডির সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। আমাদের সার্বিক পরিস্থিতি তাকে বুঝিয়েছি। তারাও কোন সমাধান দিতে পারছে না। আমার সঙ্গে ১৫ পিএসআই-এর চুক্তি হলেও তা আমাকে দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পথে বসে যাবো।”
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার মুঠোফোনে বিকেএমই নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “আমরা যখন ৭.৬২ টাকা করে প্রতি ইউনিটের বিল দিতাম তখন বিল বাড়ানো হলো এবং বলা হলো এলএনজি ন্যাশনাল গ্রিডে ঢুকবে, ফলে গ্যাসের সংকট থাকবে না। এখন ইউনিট প্রতি ১৩.৫ টাকা বাড়তি বিল দিচ্ছি কিন্তু গ্যাসের সংকট কাটেনি। নারায়নগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকায় ১৫ পিএসআই গ্যাসের প্রেশারের অনুমোদন থাকলেও ৫ পিএসআই’র বেশি পাওয়া যায় না।