* আগামী ঈদে ৪ কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রির টার্গেট সেলিম ওসমানের
* পশু বিক্রির টাকা ব্যয় হবে মাদরাসার উন্নয়নে
মুহা : ইউসুফ আল আজিজ :
গার্মেন্টস ব্যবসায়ি হিসেবে সর্বমহলে পরিচিতি তার। গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি তিনি । তার আরেক পরিচয় রয়েছে তিনি সংসদ সদস্য। তবে এবার নতুন করে তার পরিচিতির মধ্যে যোগ হলো তিনি একজন খামারি। গার্মেন্টস ব্যবসায় সফলতার পাশাপাশি তিনি খামারি হিসেবেও সফল বলা চলে। দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে গরু, ছাগল, ভেড়া পালন এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও সবজি চাষাবাদ করে আসছেন সেলিম ওসমান। প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে বিভিন্ন জাতের দেড় থেকে দুইশ গরু বিক্রি করেন সেলিম ওসমান।
আসন্ন ঈদুল আযহায় গরু, মহিষ ও ছাগলসহ ১৮০টি পশু বিক্রি করবেন সেলিম ওসমান। যার আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। আর এ টাকার মধ্যে আড়াই কোটি টাকা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করবেন। ইতোমধ্যে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন ফতুল্লা উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেডের মেইন গেটের সামনে সরাসরি ওজনে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এবং খুলনার ফুলতলায় রয়েছে সেলিম ওসমানের গরুর খামার। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সহধর্মিণী নাসরিন ওসমানের মালিকানাধীন থ্রি-স্টার ফার্ম হাউজে কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে পশুগুলো পালন করা হয়েছে সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সেলিম ওসমানের খামার থেকে আগে আসলে আগে পাবেন নীতিতে ফ্রিজিয়ান জাতের ৩০টি, শাহিওয়াল ৯৮টি, দেশি ১৭টি, মহিষ পাঁচটিসহ মোট ১৫০টি কোরবানির পশু বিক্রি করা হবে। সেইসঙ্গে রয়েছে উন্নত জাতের গাড়ল ৩০টি। গরুগুলো লাইভ ওয়েটে ৩০০-৩৯৯ কেজি পর্যন্ত ৫০০ টাকা, ৪০০-৪৯৯ কেজি পর্যন্ত ৫৫০ টাকা, ৫০০-৯০০ কেজি পর্যন্ত ৬০০ টাকা এবং দেশি গরু ও মহিষ ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, ‘গরু বিক্রির টাকার মধ্যে থেকে আমরা আড়াই কোটি টাকা মাদরাসার উন্নয়নের জন্য ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছি। তাই বলে আমি গরুর দাম বাড়িয়ে দেবো এরকম না। গরুর দাম একদম কম, বাজারে যে গোশতের দাম আছে আমরা তার থেকেও বাড়তি করিনি। বিভিন্ন সাইজে সবাই যেন কোরবানি দিতে পারেন সেজন্য আমরা এ পন্থা অবলম্বন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘গরুর খাবারের দাম সহনশীল করতে হবে। অন্যথায় গরুর গোশতের দাম ১২০০ টাকা নিচে নামবে না। আমাদের প্রচুর পরিমাণে ঘাসের দরকার। গরু তাড়াতাড়ি মোটাতাজা করার জন্য আমরা দানাদার খাবারগুলো দিয়ে থাকি। কিন্তু এখন দাম অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য আমাদের ঘাসের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।
গরু ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান রেখে সেলিম ওসমান বলেন, ‘গরু বড় করা কঠিন কাজ না। দুই চারটা ইনজেকশন দিলেই গরু বড় হয়ে যায়। তবে সেই গরুর গোশত আমাদের জন্য ভালো হবে না। এই ভেজাল দিয়ে যদি কেউ ব্যবসা করেন তাহলে মানুষের ক্ষতি করবেন।’
তিনি বলেন, ‘খুলনায় আমাদের প্রায় দেড়শ বিঘা জমি আছে। তার মধ্যে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দানাদার খাবারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমাদের ঘাসের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে।’
সেলিম ওসমানের সহধর্মিণী নাসরিন ওসমান বলেন, ‘আমরা গরু বিক্রির টাকা দিয়ে সামাজিক কাজগুলো করে থাকি। সেলিম ওসমান সাহেব এমপি হওয়ার আগে থেকেই এ কাজগুলো কাজ করে আসছেন। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসহ জনহিতকর কাজগুলো করে আসছেন। এ টাকাগুলো আমরা আমাদের পরিবারের জন্য না, জনগণের জন্য ব্যয় করি। এজন্য আমরা সবার কাছে দোয়া চাই।’
সেলিম ওসমানের এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, ‘আমাদের এমপি ও ব্যবসায়ীদের নেতা সেলিম ওসমান প্রতিবছর কোরবানির ঈদে পশু বিক্রি করে আসছেন। এবারও তিনি কোরবানির পশু বিক্রি করবেন। পশু বিক্রির টাকাগুলো তিনি মাদরাসার উন্নয়নের জন্য ব্যয় করবেন। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। তার এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।